ব্রিগেডের ভিড় পরিণত হবে ভোটে? বাম-কংগ্রেসের গলার কাঁটা হতে পারে আব্বাস
পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুর। ৩৪ বছরের আধিপত্যের সমাপ্তি ঘটেছে। সরকারি ক্ষমতা নেই। প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদাও নেই। লোকবল, সেদিনের সমর্থকরা, কেউই আজ আর নেই। ইদানিং শুধুই যেন তাঁদের হারানোর দিন। তবুও রবিবাসরীয় ব্রিগেড দেখেছিল জন প্লাবন। তবে এখন বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, ব্রিগেড ভরলেও সেই সমর্থন ইভিএম-এ পড়বে তো?
লাল পার্টির সমর্থকেরা বলছেন আমরা সফল
বামেদের দূরবীন দিয়ে দেখতে হয়, এই শব্দবন্ধ বঙ্গ রাজনীতিতে বেশ ঝড় তুলেছিল বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু তাঁরা হারেননি। তৃণমূল-বিজেপির লাগাতার আক্রমণের মুখেও তাঁরা যে আজও আছেন, সেই অস্তিত্ব প্রমাণের তাগিদ ছিল বাম নেতাদের। সভা শেষে লাল পার্টির সমর্থকেরা বলছেন আমরা সফল। সত্যিই সফল। যেভাবে গত দু'দিন রাতে হাজার হাজার বাম সমর্থককে ব্রিগেডমুখী দেখা গিয়েছে, যেভাবে রবিবার সকাল থেকে ধর্মতলা চত্বর লাল পতাকায় মুড়ে গিয়েছিল, যেভাবে হাওড়া, শিয়ালদা, শ্যামবাজারের মতো এলাকায় বাম ছাত্র-যুবদের মিছিল দেখা গিয়েছিল, তা তো বাম-অক্সিজেনেরই পরিচয়।
ব্রিগেডের লাল ঝড় নিঃসন্দেহে আলোচনার বিষয়
গ্রাম বাংলায় নানা অত্যাচারের অভিযোগ মাঝে মধ্যেই শোনা গিয়েছে। অভিযোগের আঙুল থাকত তৃণমূলের দিকে। তাদের অত্যাচারেই নাকি ঘর ছাড়তে হত বাম কর্মীদের। গত ১০ বছরে একের পর এক বাম কর্মী-সমর্থকদের দলবদলের ছবি দেখা গিয়েছিল। ভোট যত এগিয়ে আসছে, এই ছবিটা ততই প্রকট হয়ে পড়ছে। কিন্তু তাও রবিবারে মোর্চার ব্রিগেডে যেভাবে লাল পতাকা হাতে সমর্থকদের ভিড় চোখে পড়েছে, তা নিঃসন্দেহে আলোচনার বিষয়।
বাম নেতাদের 'সেই দিন' আজ নেই
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অসুস্থ। তাই বহু চেষ্টা সত্ত্বেও ব্রিগেডে যেতে পারেননি। অনুপস্থিত ছিলেন মানিক সরকার। সূর্যকান্ত মিশ্র সেভাবে জনমোহিনী বক্তা নন। দেবলীনা হেমব্রম বাংলার মেয়ে হয়ে ওঠার চেষ্টা করলেন বটে। তবে অপরদিকে বিমান বসু বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত। কিছুটা হলেও স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে পাওয়া গিয়েছে মহম্মদ সেলিমকে। আসলে বাম নেতাদের সেই দিন আজ নেই। কিন্তু সমর্থকদের আশা আছে।
আলিমুদ্দিনের মুখে হাসি
যেভাবে লাল-পতাকা হাতে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক ব্রিগেডের চারপাশে বিভিন্ন জায়গায় আটকে ছিলেন তা নিঃসন্দেহে আলিমুদ্দিনের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। বাদশা মৈত্র, ঐশী ঘোষেরা কিছুটা সময় বক্তব্য রেখেছেন বটে। তাঁরা যখন বক্তব্য রাখছেন, তখন হাজার হাজার করতালিতে ব্রিগেডের বাতাস ভারী হয়েছে। বুঝিয়ে দিয়েছেন দশ বছর পরেও তাঁরা একইভাবে বামমনস্ক আছেন। হাজারো প্রতিবন্ধকতা, হাজারো প্রলোভন সত্বেও বিরোধী শিবিরে যাননি তাঁরা। একটা তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে থাকা রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে এই সমর্থন কার্যত নতুন চালিকাশক্তির মতো কাজ করে।
জোট কি আদৌ সফল হবে?
পাশাপাশি প্রশ্ন রয়েছে, জোট কি আদৌ সফল হবে? ব্রিগেডের এই সমাবেশ থেকে উঠল সেই প্রশ্ন৷ প্রকাশ্যেই আইএসএফের আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে কংগ্রেস ও বামেদের টানাপোড়েন স্পষ্ট দেখা গেল৷ রবিবার আব্বাস যখন মঞ্চে ওঠেন, তখন ঘড়ির কাঁটা সবে দুপুর ২টো পেরিয়েছে৷ মঞ্চে তখন বক্তৃতা করছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী৷
বিমান বসুরা কতবার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন?
আব্বাস সিদ্দিকী আসতেই মাঠ জুড়ে হইচই পড়ে যায়৷ হট্টগোলের মধ্যে তাই বক্তব্য থামাতে বাধ্য হন অধীর৷ আর মঞ্চে তখন আব্বাসকে ঘিরে ধরেছেন বাম নেতারা৷ তাঁরা আব্বাসের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন৷ তখন অধীর চৌধুরীকে ডায়াস থেকে সরতে উদ্যত হন৷ শেষ পর্যন্ত বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর মধ্যস্থতায় তিনি বক্তৃতা শেষ করেন৷ তবে বিমান বসুরা কতবার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন? সংশয় জন্মাতে পারে ভোটারদের মনেও।