৩৪ বছরের 'রাজ্যপাট' ফেরাতে ৩৪ মাসই ভরসা, মমতার 'অস্ত্র' আবার বামেদের 'উদাহরণ'
২০১৪ সালের লোকসভায় বামেদের ভোট শতাংশ ছিল ২৯.৭। ২০১৯ সালে সেটাই নেমে যায় ৭.৫ শতাংশে। এদিকে ২০১৪ সালে বিজেপির ভোট ছিল ১৭.১ শতাংশ। সেই বিজেপির ভোট শতাংশ ২০১৯ সালে বেড়ে হয় ৪০.৬ শতাংশ। কাকতালিয় হলেও বামেদের ভোট শতাংশে যে হ্রাস, প্রায় সেই হারে বেড়েছে বিজেপির ভোট। সেখান থেকেই ধারণা জন্মায়, বাম ভোটই রামে গিয়েছিল ২০১৯ সালে। তবে বাম ফোট যদি বামেই থাকে, তাহলে তো ফের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে পারেন তারা।
বামপন্থী ভোটারদের বোঝাতে চাইছে সিপিএম
এই কথাটাই এখন একদা বামপন্থী মনোভাবাপন্ন ভোটারদের বোঝাতে চাইছে সিপিএম-এর নেতারা। সপ্তাহ দুয়েক আগের কথা। ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখ। সিপিএমের এই পলিটব্যুরো সদস্যটি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গে। বর্ধমানের টাউন হলে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্য বলেছিলেন, 'ত্রিপুরার মানুষ বুঝতে পেরেছেন তাঁরা কী ভুল করেছেন। তাঁরা এখন পরবর্তী বিধানসভা ভোটের জন্য অপেক্ষা করছেন।'
গত ৩৪ মাসে তার সবটাই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে
এর পর তিনি বলেন, 'ত্রিপুরায় যান। সেখানকার একজন সাধারণ মুদিখানার দোকানদার বা রিকশওয়ালার সঙ্গে কথা বলুন। তাঁরা বুঝিয়ে দেবেন বিজেপি ক্ষমতায় আসার ফল কেমন। বাম শাসনের ২৫ বছরে ত্রিপুরায় দরিদ্রদের জন্য কোনওরকম কর ছিল না। গত ৩৪ মাসে তার সবটাই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।
'বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গে একটিও ভোট দেবেন না'
মানিক সরকারকে আরও বলতে শোনা যায়, 'ত্রিপুরায় বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রতি বাড়িতে চাকরির। বামেদের পদচ্যুত করার জন্য বিমানে করে নেতাদের নিয়ে এসেছিল, নিয়ে গিয়েছিল। এখন তার ফল কী, সেটা দেখতেই পারছেন। তাই বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গে একটিও ভোট দেবেন না।'
মমতার মুখে বাম বন্দনা
এর ঠিক এক দিন পর মমতা তাঁর দলের কর্মীদের যে বার্তা দিয়েছিলেন, এই বার সে-দিকে নজর দেওয়া যাক। মমতা বলেন, 'ত্রিপুরায় অনেক কংগ্রেস নেতা-কর্মী বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। সেই ঘটনা আমাকে খুবই ব্যথিত করেছিল। এখন বাংলার মাটিতে সেই একই কাজ করছে বিজেপি। এটা হল সর্বনাশের রাজনীতি। তারা (বিজেপি) রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে চায়। যাঁরা আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, তাঁদের নিজেদের দলে নিয়ে এই কাজটা করে চলেছে বিজেপি।'
পরিবর্তন এসেছে তৃণমূল নেত্রীর মধ্যে
ইনি সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে জিতে দ্বিতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও লাল-গেরুয়াকে একই আসনে বসাতেন। বার বার অভিযোগ তুলতেন বাম-রামের মধ্যে আঁতাতের। এখন সে সবই অতীত। পরিবর্তন এসেছে তৃণমূল নেত্রীর মধ্যেও। শুধু উত্তরবঙ্গেই নয়। কয়েক দিন আগে কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে বাম এবং ত্রিপুরা প্রসঙ্গ তোলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আর এভাবেই বাম ভোটকে নিজের দিকে টানতে চাইছেন মমতা।
বামের থেকে বামপন্থী মমতা? বিজেপির 'লাল ভোট' ছিনিয়ে নিতে ছক তৃণমূল কংগ্রেসের