বিজেপিতে লাগামছাড়া বেনোজল ঢোকার বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কড়া অবস্থান সমর্থনযোগ্য
রাজনীতির আখড়ায় সাধারণত প্রতিপক্ষের ঘর ভাঙলে খুশি হয় রাজনৈতিক দলগুলি। তাতে বিপক্ষের সংগঠনে বড়সড় ধাক্কা লাগার কারণে আত্মতৃপ্ত বোধ করে তারা।
রাজনীতির আখড়ায় সাধারণত প্রতিপক্ষের ঘর ভাঙলে খুশি হয় রাজনৈতিক দলগুলি। তাতে বিপক্ষের সংগঠনে বড়সড় ধাক্কা লাগার কারণে আত্মতৃপ্ত বোধ করে তারা। পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহেও উৎফুল্ল বোধ করছিল বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেস থেকে দলে দলে নেতা-কর্মীরা তাদের শিবিরে যোগ দেওয়ার ফলে এক বড় নৈতিক জয়ের দাবি ছিল তাদের।
কিন্তু অচিরেই অবস্থায় পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। অত্যাধিক লোকের বিজেপিতে যোগদান এখন একপ্রকার 'অনুপ্রবেশ' হিসেবেই দেখা হচ্ছে এবং বিশেষ করে মুকুল রায়ের পুরোনো দুশমনের বিরুদ্ধে বদলা দেওয়ার জন্যে তাদের ঘর ভাঙানোর রাজনীতির উদ্যোগের প্রসঙ্গে সাবধানী হচ্ছে এবারে রাজ্য বিজেপি।
রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব এবারে দলকে নির্দেশ দিয়েছে তারা যেন কলকাতাকে এড়িয়ে দিল্লিতে গিয়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার প্রবণতার পায়ে বেড়ি পড়ায়। অনেকেই এই পদক্ষেপকে মুকুল রায়ের বিরুদ্ধাচরণ হিসেবেই দেখছে।
মনিরুল থেকে অস্বস্তি শুরু
লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের বিজেপিতে যোগদান নেওয়া নিয়েই অশান্তির সূত্রপাত হয় এবং এখন অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে অনেকে তৃণমূল থেকে দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে ফের পুরোনো দলেই ফেরত চলে যাচ্ছেন। উত্তর ২৪ পরগনা থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর, বিভিন্ন জেলাতেই দেখা গিয়েছে এই প্রবণতা। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব আরও কড়া অবস্থান নিয়েছে এই দলবদলের বিষয়ে।
রাজ্য নেতৃত্বের এই অবস্থানটি অমূলক নয়। যে হারে তৃণমূলের ঝড়তি-পড়তিরা ঝোপ বুঝে বিজেপিতে ঢুকছে তাতে অচিরেই বিজেপি তৃণমূল ২.০ হয়ে দাঁড়াবে আর তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাংলা বিজয়ের স্বপ্নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। যদি বিজেপিকে পরিচ্ছন্ন বিকল্প হিসেবে নিজেকে দেখতে চায় বাংলার মসনদে, তাহলে তৃণমূলের ছায়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতেই হবে।
দলমেরুকরণ যেমন রয়েছে, আবার দলবদলুদের লজ্জাকর খেলাও চলছে বিরামহীন
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে দলীয় মেরুকরণই শেষ কথা কিন্তু একই সঙ্গে, সেই দলীয় মেরুকরণের আড়ালে একই মুখের প্রান্তবাদের ঘটনাও ফেলনা নয়। একটা সময়ে রাজ্য রাজনীতিতে বাম-কংগ্রেস-এর মধ্যে দলীয় মেরুকরণ তখন তুঙ্গে, তখনও জার্সি বদলানোর ব্যাপারটি এত আকছার ঘটত না। কিন্তু বাম জমানার পতনের পরে তৃণমূলের ক্ষমতায়নের পরেই বড় হয়ে দেখা দেয় এই প্রবণতা এবং বর্তমান সময়ে এ প্রায় মহামারীরই আকার ধারণ করেছে।
বিজেপির ক্যাডারভিত্তিক দলে বেনোজল বাদ দেওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ
বিজেপির এ রাজ্যে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা যেমন এক কেন্দ্রীয় চরিত্রের অভাব তেমনই তা তাদের সবচেয়ে বড় শক্তিও বটে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের চারিপাশে স্তাবকশ্রেণীর জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা কম। উল্টে, অনেকটা বামেদের মতো ক্যাডারভিত্তিক দল হওয়ার দরুন চাটুকারিতা এবং ধান্দাবাজী সফল হওয়ার সম্ভাবনা তৃণমূলের চেয়ে অপেক্ষাকৃতভাবে কম। রাজ্যের নেতৃত্ব লাগামছাড়া বেনোজল দলে ঢুকে কী ক্ষতি করতে পারে তা আগাম আন্দাজ করে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা প্রশংসার্হ। তবে বামেদের মতো স্ট্রাকচারাল পার্টিও একসময়ে এই বেনোজলের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল। বিজেপির পথও মসৃণ হবে না।