একাই একশো মমতা! মোদীর স্তুতিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব অস্ত্রই ভোঁতা দিলীপ-মুকুলদের
বাজেট প্রস্তাবের আগে অর্থনৈতিক সমীক্ষা রিপোর্টে মমতা সরকারের ঢালাও প্রশংসা করা হয়েছিল। এবার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মুখে মমতা-স্তুতি।
বারবার কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত যখন চরমে উঠছে, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসার পঞ্চমুখ হয়ে উঠলেন। বাজেট প্রস্তাবের আগে অর্থনৈতিক সমীক্ষা রিপোর্টে মমতা সরকারের ঢালাও প্রশংসা করা হয়েছিল। এবার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মুখে মমতা-স্তুতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে বলে মন্তব্য করলেন নরেন্দ্র মোদী।
তিনি বাজেটের জবাবি ভাষণে বলেন, 'উন্নয়নের নিরিখে বাংলা যথেষ্ট এগিয়েছে।' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের চেষ্টাতেই রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলায় এক কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা মুখের কথা নয়। আর মোদীর মুখে মমতার নামে এই ঢালাও প্রশংসায় চরম বিপাকে পড়েছে বঙ্গ বিজেপি।
বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট দরজায় কড়া নাড়ছে। তার উপর বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট। সবেমাত্র বাংলায় দ্বিতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে উঠে এসে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ করার জায়গায় পৌঁছতে একটু একটু করে এগেচ্ছে বিজেপি। সেইসময় প্রধানমন্ত্রীর মুখে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এমন সুখ্যাতি বঙ্গ বিজেপিকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছে।
এতদিন যে সমস্ত বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করতে বাংলা চষে বেড়াচ্ছেন রাজ্য বিজেপি নেতা মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা-রা, সেই সব অস্ত্রই ভোঁতা করে দিয়েছেন তাঁদের দলেরই প্রধান মুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফলে প্রচারে গিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোন অস্ত্রে শান দেবেন তাঁরা, ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছেন না।
এর আগে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তাঁর সমীক্ষা রিপোর্টে বাংলাকে সেরার মর্যাদা দিয়েছেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশসেরা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। এবার সেইসব নিয়েই প্রশংসা ঝরে পড়ল স্বয়ং মোদীর মুখে। মুকুল রায়-দিলীপ ঘোষরা রাজ্যে উন্নয়ন হয়নি বলে চিৎকার করলে, তা যে আর বাংলার মানুষ মেনে নেবেন না, তাও পরিষ্কার হয়ে গেল।
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী স্বতঃস্ফূর্তভাবে লোকসভায় মেনে নিয়েছেন সার্বিক বিকাশে বাংলা এক নম্বরে। বিজেপি 'সব কা সাথ সব কা বিকাশ' স্লোগানের হোতা হলেও, তা কাজে করে দেখিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। ফলে মুখ পুড়েছে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের। এই ঘটনায় আবার সিপিএম টিপ্পনি কাটতে শুরু করেছে, এসব মোদী ও দিদির গোপন সমাঝোতা। আমরা যে অভিযোগ করতাম, তা যে মিথ্যা নয়, সেই সত্যই প্রকাশ করল মোদীর মুখে মমতার স্তুতি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সাংসদরা মোদীর এই প্রশংসা সম্পর্কে বলেছেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বাংলা যে এগিয়ে যাচ্ছে, তা প্রমাণ হয়ে গেল। কথায় বলে সত্য কোনওদিন চাপা থাকে না। যতই বিরোধিতা করুক বাংলায় যে সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রীকে অকপটে স্বীকার করে নিতে হল।'
তৃণমূল এবার আসন্ন পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে অর্থনৈতিক সমীক্ষা রিপোর্ট ও নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসাকেই হাতিয়ার করে এগোবে। বিজেপি দাবি করেছে, মোদীজি প্রশংসা করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ঘুরিয়ে বদনামই করেছেন। এতদিন যে দিদি কর্মসংস্থান নিয়ে ভুল দাবি করে আসছিলেন, তাই প্রকট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।