নামখানায় শিক্ষক নিগ্রহকাণ্ডে প্রধান শিক্ষক-কে ভর্ৎসনা বিডিও-র, অনিয়মের জন্য তদন্তের সুপারিশ
নামখানায় শিক্ষক নিগ্রহকাণ্ডে চরম ভর্ৎসনার শিকার হলেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মে তদন্তের সুপারিশও করা হয়েছে।
নামখানায় শিক্ষক নিগ্রহকাণ্ডে চরম ভর্ৎসনার শিকার হলেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মে তদন্তের সুপারিশও করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ নামখানায় ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের দফতরে একটি বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ দুর্গাপুর চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সহ বাকি শিক্ষক ও শিক্ষিকারা। বিডিও রাজীব আহমেদ এই বৈঠক পরিচালনা করলেও তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্কুল ইন্সপেক্টরও।
বৈঠকে স্কুলের মধ্যে ঢুকে ২৩ অগাস্ট কেন হামলা হল তা উঠে আসে। দক্ষিণ দুর্গাপুর চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশিস ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন এক ছাত্রকে শিক্ষক বিপ্লব পাত্র মারধর করাতে গোটা ঘটনাটি সংঘটিত হয়। বিডিও জানতে চান, এক ছাত্রকে মারধরের সঙ্গে সঙ্গে খবরটা বাইরে কীভাবে গেল? যারা এই ঘটনার আধ ঘণ্টার মধ্যে স্কুলে ঢুকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিগ্রহ করেছিল তাদের মধ্যে মার খাওয়া ছাত্রের অভিভাবক ছিল কি? ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান মার খাওয়া ছাত্রের অভিভাবক ছিল না। এরপর ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক জানতে চান, যদুপতি পণ্ডা যাঁর নামে নিগৃহীত শিক্ষকরা পুলিশে অভিযোগ করেছিলেন তিনি কি স্কুলে পড়া কোন ছাত্রের অভিভাবক? ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশিস ভট্টাচার্য সাফ জানান যদুপতি পণ্ডার স্ত্রী তাঁদের স্কুলে প্যারা টিচারের কাজ করলেও তাঁরা ওই স্কুলে পড়া কোনও ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবক নন। এতে বিডিও আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। কীভাবে একজন প্রাইমারি শিক্ষক নিজের স্কুলের ডিউটি ছেড়ে অন্য স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের পেটাতে পারে? তা নিয়ে তদন্তের জন্য স্কুল ইন্সপেক্টরকে তদন্ত করতে সুপারিশ করেন।
তেইশ তারিখে যে ভাবে স্কুলের মধ্যে ঢুকে বহিরাগতরা হামলা করেছে তার কড়া নিন্দা করেন ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক রাজীব আহমেদ। স্কুলের সমস্যা স্কুলের মধ্যে না মিটিয়ে কেন বহিরাগতদের ডাকতে হল তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক আশিস ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে গত দু'বছর ধরে তাঁর কাছে নানা অভিযোগ জমা পড়েছে বলেও বৈঠকে জানান বিডিও। কীভাবে স্কুলের উন্নয়ন খাতে লক্ষ লক্ষ টাকার দেনা হল তার জবাবও জানতে চান ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক। এত টাকা খরচ করেও স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য বাথরুমে না থাকাতেও বিষ্ময় প্রকাশ করেন তিনি।
অবিলম্বে যাতে দক্ষিণ দুর্গাপুর চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠে পঠন-পাঠনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরে তার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষককে নির্দেশও দেন তিনি। নিগৃহীত শিক্ষকদের স্কুলে যেতেও পরামর্শ দেন বিডিও। এর জন্য প্রয়োজনে নামখানা থানায় গিয়ে এফআইআর দায়ের করতে বলেন তিনি। প্রয়োজনে থানা থেকে উপযুক্ত নিরাপত্তা দিয়ে নিগৃহীত শিক্ষকদের স্কুলে পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানান বিডিও। বৈঠকের মধ্যে ২৩ অগাস্টের হামলার ঘটনা এবং বিভিন্ন সময়ে স্কুলে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কেও অবগত হন ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক।
শেষ পাওয়া খবরে নিগৃহীত শিক্ষকরা জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার থেকে তাঁরা নির্দিষ্ট সময়েই স্কুলে পৌঁছে যাবেন এবং প্রতিটা ক্লাস নেওয়া থেকে শুরু করে ইউনিট টেস্টেরও দায়িত্ব সামলাবেন। তবে, স্কুলে যাতায়াতে তাঁদের উপযুক্ত নিরাপত্তা যাতে দেওয়া হয় তার আর্জি বিডিও-র সামনে রাখেন নিগৃহীত শিক্ষকরা।
বুধবার বিকেলে এই বৈঠকের কথা মঙ্গলবারই জানিয়ে দিয়েছিলেন বিডিও। কিন্তু, উপযুক্ত নিরাপত্তার অভাবে বৈঠকে যোগ দিতে রাজি ছিলেন না নিগৃহীত শিক্ষকরা। শেষমেশ বিডিও-র তরফে সম্পূর্ণভাবে নিরাপত্তার আশ্বাস পাওয়ার পর তাঁরা বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। বৈঠকে নিগৃহীত শিক্ষকরা এবং এক শিক্ষিকা জানান, স্কুলে যেতে আসতে প্রায়শই হুমকির সামনে পড়তে হয়। ২৩ তারিখের ঘটনার পর থেকেই এই হুমকি আরও বেড়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষকরা। বিষয়টি কড়া হাতে দেখা হচ্ছে বলেও আশ্বাস দেন বিডিও।
এদিকে, নামখানা শিক্ষক নিগ্রহকাণ্ডে মঙ্গলবারই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি দেন বিধানসভার বাম মুখ্য সচেতক সুজন চক্রবর্তী। সেখানে দক্ষিণ দুর্গাপুর চঞ্চালময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন।
অন্যদিকে, নামখানার শিক্ষক নিগ্রহকাণ্ড নিয়ে বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন বিশিষ্ঠ মানুষকে নিয়ে আগামী সপ্তাহে এক সমাবেশ করার কথা প্রতিবাদী শিক্ষক মইদুল ইসলামের। শিক্ষক নিগ্রহকাণ্ডে কেন বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন নিশ্চুপ থাকল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। শিক্ষক সমাজ কেন নামখানায় স্কুলে আক্রান্ত শিক্ষকদের পাশে সেভাবে দাঁড়ালেন না তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মইদুল।