বর্ধমান বিস্ফোরণে মৃত শাকিল বাংলাদেশের লোক, ছিল আগুনখোর জঙ্গি
দুর্গা পুজোর অষ্টমীর দিন দুপুরে বর্ধমান শহরের খাগড়াগড়ে যে বিস্ফোরণ হয়, তাতে মারা যায় শামিম আহমেদ ওরফে শাকিল এবং শোভন মণ্ডল। তৃতীয় ব্যক্তি হাসান সাবাহ এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। তদন্তে নেমে এদের ব্যাপারে সব তথ্য জোগাড় করেছেন গোয়েন্দারা।
আরও
পড়ুন:
বর্ধমানে
বিস্ফোরণে
মৃত
দুই,
জঙ্গি-যোগ
সন্দেহে
তদন্তে
এনআইএ
আরও
পড়ুন:
বর্ধমানে
বিস্ফোরণের
পিছনে
জঙ্গি-যোগই,
নিশ্চিত
হলেন
গোয়েন্দারা
আরও
পড়ুন:
বর্ধমানে
তৃণমূল
নেতার
বাড়িতে
ছিল
জঙ্গিরা,
পুলিশের
বিরুদ্ধে
প্রমাণ
লোপাটের
অভিযোগ
শামিম আহমেদ ওরফে শাকিল ওরফে নঈম ওরফে আজফল গাজির বাড়ি বাংলাদেশের ঢাকায়। ৩২ বছর বয়সী শাকিল বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিনের ক্যাডার। এ ছাড়াও বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠন জামায়াতে ইসলামি, জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা, আল জিহাদ, সিমি (স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট ইন ইন্ডিয়া) এবং ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল।
২০০৭ সালে লুকিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে শাকিল। প্রথমে কলকাতার মেটিয়াবুরুজে আস্তানা গাড়ে। সেখানে জেহাদের সমর্থনে প্রচার চালায়। লোকদেখানো কাপড়ের ব্যবসা করলেও আসল কাজ ছিল পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গিঘাঁটি তৈরি করে জেহাদ ছড়ানো। নদীয়া, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর ২৪ পরগনার মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে সে অল্পবয়সী ছেলেদের মগজধোলাই করত। এই কাজের সুবাদে একবার নদীয়ার করিমপুরের বরবকপুর গ্রামে যায়। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় রুমি বিবির। পরে সে ওই মহিলাকে বিয়ে করে। স্বামীর দেখাদেখি স্ত্রীও শামিল হয় জেহাদে।
শাকিল বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিনের ক্যাডার, ২০০৯ সালে আসে ভারতে
রুমি বিবির বাবা আজিজুল শেখ অর্থাৎ নিজের শ্বশুরকে বাবা দেখিয়ে শাকিল ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড ইত্যাদি বানিয়ে নিয়েছিল। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে অস্ত্র-বিস্ফোরক এনে সেখানে লুকিয়ে রাখত। জুন মাসে বর্ধমানে খাগড়াগড়ের ওই বাড়িটি সে ভাড়া নেয় মাসিক চার হাজার টাকায়। স্ত্রী ও নিজের সন্তানকে এনে তোলে। তাদের সঙ্গে এসে জোটে শোভন মণ্ডল, হাসান সাবাহ ও তার স্ত্রী। কেন বেলডাঙা ছেড়ে এরা বর্ধমানে উঠে এল, তা নিয়ে এখন ধন্দে গোয়েন্দারা।
বিস্ফোরণে নিহত আর এক ব্যক্তি শোভন মণ্ডল ওরফে স্বপন ওরফে সুবহানের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উত্তরপাড়া গ্রামে। তার বয়স ২২ বছর। এই ব্যক্তিও আদতে বাংলাদেশের বাসিন্দা কি না, তার খোঁজে শুরু হয়েছে তদন্ত।
বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হাসান সাবাহ ওরফে হাসান সাহেব ওরফে আব্দুল হাকিমের বাড়ি বীরভূম জেলার মহম্মদ বাজার থানার অন্তর্গত দেউচা গ্রামে। ২০০৭ সালে সে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। কিন্তু পাশ করতে পারেনি। বাড়িতে এ নিয়ে রাগারাগি হওয়ায় সে চলে যায় মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে মামাবাড়িতে। ২০১০ সালে ফিরে এসে দেউচা গ্রামে একটি মুদিখানা খোলে। কিন্তু ব্যবসা ভালো চলেনি। ২০১১ সালে আচমকা নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে বাড়ির লোক খবর পায়, ছেলে বর্ধমানে রিকশা চালাচ্ছে। বাড়িতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও সে ফেরেনি। বলে, বর্ধমানে রিকশা চালানোর ফাঁকে আরবি-ফারসি পড়ছে। বাড়ি গেলে পড়াশুনোর ক্ষতি হবে।
আব্দুল হাকিম ওরফে হাসান সাবাহের বাবা মহম্মদ শাহ জামাল তো ছেলের কথা শুনে থ। দুর্গা পুজোর অষ্টমীর দিন যখন খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ হয়, তখন তিনি স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ব্যাঙ্গালোরে ছিলেন। গতকাল বাড়ি ফিরে শোনেন, ছেলে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। দেশদ্রোহে অভিযুক্ত হয়েছে। শুনে আকাশ থেকে পড়েন তিনি। ছেলের কার্যকলাপে এখন গ্রামে মুখ দেখানোই দায় হয়ে উঠেছে প্রৌঢ়ের।
এদিকে, বর্ধমান-কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল রাতে পূর্বস্থলী থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে হাসান মোল্লা নামে এক ব্যক্তিকে। এ নিয়ে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিন। মঙ্গলকোটের বাসিন্দা আব্দুল কালাম নামে এক ব্যক্তির সন্ধানেও খোঁজ চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা।