যুবক খুনের পর ফুঁসছে বামনগাছি, চলছে স্বতঃস্ফূর্ত বনধ
আরও পড়ুন: রাজ্য পুলিশে আস্থা নেই, তাই সিবিআই তদন্ত চাইল বিজেপি
বামনগাছির কুলবেড়িয়া অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল। চোলাই মদের ঠেক, জুয়া-সাট্টা, মধুচক্র, গৃহস্থ বাড়ির মেয়েদের শ্লীলতাহানি ইত্যাদি ঘটনা ঘটে আকছার। এরই বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন স্থানীয় যুবক সৌরভ চৌধুরী। ২০ বছর বয়সী সৌরভ চৌধুরী বিরাটির মৃণালিনী দত্ত মহাবিদ্যাপীঠের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ছিলেন। শুক্রবার রাতে তাঁকে অপহরণ করে দুষ্কৃতীরা। গতকাল সকালে দত্তপুকুর ও বামনগাছি স্টেশনের মাঝে রেললাইনে পাওয়া যায় তাঁর মৃতদেহ। দেহ বললে ভুল হবে। ন'টি টুকরো! সৌরভকে ন'টি টুকরো করে রেললাইনে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী শ্যামল কর্মকার ও তার দলবল এই খুন করেছে। যদিও পুলিশ এখনও পর্যন্ত শুধু অনুপ তালুকদার নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। আসল চাঁই শ্যামল কর্মকার তৃণমূল কংগ্রেসের মদতপুষ্ট বলেই পুলিশ চোখ বুজে আছে, এমন অভিযোগ স্থানীয় মানুষের।
প্রাথমিকভাবে এলাকার মানুষ বিহ্বল হয়ে পড়লেও তাঁরা পথে নামেন। গতকাল বামনগাছিতে রেল অবরোধের পর আজ, রবিবার এলাকায় বনধ ডাকা হয়। বিজেপি ও এসইউসিআই এই বনধের ডাক দেয়। এ দিন বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বামনগাছিতে যায়। তাঁরা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে রিপোর্ট পাঠাবেন দিল্লিতে।
দুষ্কৃতী শ্যামল কর্মকার ও তার শাগরেদরা তৃণমূল কংগ্রেসের আশ্রিত বলে অভিযোগ
সৌরভের দাদা সন্দীপ চৌধুরী বলেন, "শুক্রবার রাতে ওরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় ভাইকে। ওদের সঙ্গে রিভলভার, ভোজালি ছিল। সকালে খবর পাই, রেললাইনের ওপর একটা মৃতদেহ পড়ে আছে। তখনই বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল। গিয়ে দেখলাম, যা আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই হল। এই এলাকায় শ্যামল কর্মকার যা খুশি তাই করত। ওর অপকর্মের প্রতিবাদ করেছিল ভাই। ভাইয়ের কিছু বন্ধুও ওর পাশে দাঁড়িয়েছিল। ওদের ভয়েই এলাকাছাড়া হয় বদমাশটা। কিন্তু এই ভাবে যে ওরা ভাইকে খুন করবে, বুঝতে পারিনি।"
সৌরভের মা মিতা চৌধুরী এলাকায় বিজেপি কর্মী হিসাবে পরিচিত। তিনি পঞ্চায়েত ভোটে লড়েছিলেন। বাবাও বিজেপি-র সঙ্গে যুক্ত। যদিও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার দাবি, সৌরভ তাঁদের সংগঠনের সদস্য ছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও একই দাবি করেছেন।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, "২০ বছরের একটি ছেলে চোলাই-সাট্টার প্রতিবাদ করায় খুন হয়ে গেল। অভিযুক্তরা চিহ্নিত হলেও পুলিশ তাদের ধরছে না। উল্টে প্রতিবাদী জনতার ওপর চড়াও হয়ে তাদের হেনস্থা করছে। আর তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা 'বোমা মারব, গুলি মারব' বলে হুমকি দিচ্ছেন।"
ঘটনাচক্রে গতকালই ছিল বরুণ বিশ্বাসের মৃত্যুদিন। সুটিয়ার সেই প্রতিবাদী যুবক বরুণ বিশ্বাস। সুটিয়ায় দুষ্কৃতীরা যখন-তখন এসে তুলে নিয়ে যেত বাড়ির মেয়েদের। গণধর্ষণ করত। এরই প্রতিবাদে বরুণ বিশ্বাস রুখে দাঁড়ান। পাশে পেয়ে যান জনতাকে। নড়েচড়ে বসে সরকার। গ্রেফতার হয় দুষ্কৃতীরা। সেটা ছিল ২০০৩ সাল। এর পর ২০১২ সালের ৫ জুলাই গোবরডাঙা স্টেশনে বরুণ বিশ্বাসকে গুলি করে খুন করা হয়। সেই ঘটনায় এখনও কেউ সাজা পায়নি। চলছে বিচারপর্ব। কবে তা শেষ হবে, কারও জানা নেই।