সাংসদ পদও ছাড়ছেন বাবুল! দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের পরই তাৎপর্যপূর্ণ ফেসবুক পোস্টে বার্তা
ফেসবুকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের লাইন লিখে রাজনীতি ছাড়ার বার্তা দিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। এবার বাবুল সেই ফেসবুক পোস্টেই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, তিনি সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন।
ফেসবুকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের লাইন লিখে রাজনীতি ছাড়ার বার্তা দিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। এবার বাবুল সেই ফেসবুক পোস্টেই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, তিনি সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সাংবাদিক বৈঠকের পরই ফেসবুক-বার্তায় তিনি বলেন, সাংসদ পদও ছাড়ছি।
ফেসবুক পোস্ট করে রাজনীতিকে আলবিদা বাবুলের!
বাবুল ফেসবুকে এক লম্বা পোস্টে লিখেছিলেন- চললাম.. আলিবিদা...। তারপর লেখেন- হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের এক জনুপ্রিয় গানের লাইন- 'বেশ কিছু সময় তো থাকলাম...।' তারপর জনতার কাঁধে মূল্যায়নের ভার দিয়ে তিনি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেওয়ার বার্তা দেন। বিজেপি ছাড়ার কথা জানিয়ে, তিনি স্পষ্ট করেই বলে দেন- অন্য কোনও দল তিনি যোগ দিচ্ছেন না।
বাবুলের রাজনৈতিক সন্ন্যাস প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষের মন্তব্য
বাবুলের রাজনৈতিক সন্ন্যাসের বার্তার পরই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, কে কোথায় যাচ্ছেন, আমি কী করে বলব। কে কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে তিনি এখনও লোকসভায় আছেন, আমাদের সহকর্মীও আছেন, এমপিও আছেন।
সাংসদ পদ থেকেও অবভিয়াসলি ইস্তফা দিচ্ছি, বাড়িও ছাড়ছি
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের পরই বাবুল সুপ্রিয় তাঁর ফেসবুক বার্তায় দুটো লাইন সংযোজন করেন। তিনি লেখেন- বহু নতুন মন্ত্রী এখনও সরকারি বাড়ি পাননি। তাই আমার বাড়িটি আমি এক মাসের মধ্যে (যত তাড়াতাড়ি সম্ভব-হয়তো তার আগেই) ছেড়ে দেব। হ্যাঁ, সাংসদ পদ থেকেও অবভিয়াসলি ইস্তিফা দিচ্ছি।
সবটুকু শুনে বুঝেই বলছি-অন্য কোন দলেও যাচ্ছি না
বাবুল আগেই তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন- সোশ্যাল ওয়ার্ক করতে গেলে রাজনীতিতে না থেকেও করা যায়। নিজেকে একটু গুছিয়ে নিই আগে তারপর...। এই তারপরের মধ্যে কিন্তু খানিক জল্পনার বাতাবরণ তিনি রেখে দিয়েছেন। যদিও তিনি স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেন- সবার সব কথা শুনলাম, বাবা, মা, স্ত্রী, কন্যা, দুএকজন প্রিয় বন্ধুবান্ধব...। সবটুকু শুনে বুঝেই অনুভব করেই বলি, অন্য কোন দলেও যাচ্ছি না। টিএমসি, কংগ্রেস, সিপিএম কোথাও নয়। কনফার্ম করছি, কেউ আমাকে ডাকেওনি, আমিও কোথাও যাচ্ছি না।
একমাত্র টিম মোহনবাগান আর একটাই পার্টি বিজেপি
বাবুল সুপ্রিয় এদিন স্পষ্ট করে দেন, তিনি একটি মাত্র টিমের খেলোয়াড়। তিনি সমর্থন করেন একমাত্র টিম মোহনবাগানকে। আর একটিই পার্টি করেছেন- বিজেপি। এই পর্যন্তই। তিনি লেখেন- বিগত কয়েকদিনে বারবার মাননীয় অমিত শাহ ও মাননীয় নাড্ডাজির কাছে রাজনীতি ছাড়ার সঙ্কল্প নিয়ে গেছি এবং আমি ওঁদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ যে প্রতিবারই ওঁরা আমাকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করে ফিরিয়ে দিয়েছেন|
ফেসবুক পোস্ট এডিট করে সাংসদ পদ ছাড়ার বার্তা
কিন্তু তিনি কী করতে চান, তা আগেই ঠিক করে ফেলেছিলেন। ফেসবুকে তাই লেখেন- 'আমার আমি' কি করতে চায় তা যখন আমি অনেকদিন আগেই ঠিক করে ফেলেছি, তাহলে তা জানাতে আর দেরি কেন। তাই তিনি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস এবং পরে এডিট করে সাংসদ পদ ছাড়ার বার্তা তিনি দিয়েই দিলেন ফেসবুকে। আর লিখলেন- আমায় ভুল বুঝবেন না, ক্ষমা করবেন|
কেন রাজনীতি ছাড়ছেন, জবাব দিলেন বাবুল
তিনি এই ফেসবুক পোস্টে জানিয়ে দেন, কেন তিনি রাজনীতি ছাড়ছেন। বাবুল লেখেন, প্রশ্নের জবাব আমাকে দিয়ে যেতেই হবে। কারণ এটাই প্রাসঙ্গিক। প্রশ্ন উঠবেই কেনই বা রাজনীতি ছাড়তে গেলাম? মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার সঙ্গে তার কি কোনও সম্পর্ক আছে? হ্যাঁ আছে, কিছুটা তো নিশ্চয় আছে! তঞ্চকতা করতে চাই না। তাই সে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেই তা সঠিক হবে, আমাকেও তা শান্তি দেবে|
বিজেপি ছাড়ার কারণ দর্শালেন বাবুল সুপ্রিয়
বাবুল লেখেন, ২০১৪ ও ২০১৯-এর মধ্যে অনেক ফারাক| তখন শুধু বিজেপির টিকিটে আমি একাই ছিলাম। আলুওয়ালিয়াজি জিজেএমের সমর্থনে সাংসদ হন। আর আজ বাংলায় বিজেপিই প্রধান বিরোধী দল| বলতে দ্বিধা নেই যে আজ পার্টিতে কোনও একজন ব্যক্তিবিশেষের থাকা না থাকাটা যে কোন বড় ব্যাপার নয় তাও স্পষ্ট হয়েছে এবং এটা মেনে নেওয়াটাই যে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস!
মতানৈক্য ও কলহে পার্টির ক্ষতি হচ্ছিল, তাই...
বাবুল আরও লেখেন- ভোটের আগে থেকেই কিছু কিছু ব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে মতান্তর হচ্ছিল। তা হতেই পারে কিন্তু তার মধ্যে কিছু বিষয় জনসমক্ষে চলে আসছিল| তার জন্য কোথাও আমি দায়ী, আবার কোথাও অন্য নেতারাও ভীষণভাবে দায়ী, যদিও কে কতটা দায়ী সে প্রসঙ্গে আমি আজ আর যেতে চাই না। কিন্তু সিনিয়র নেতাদের মতানৈক্য ও কলহে পার্টির ক্ষতি তো হচ্ছিলই। এই মুহূর্তে তা একেবারেই অনভিপ্রেত। তাই আসানসোলের মানুষকে অসীম কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানিয়ে আমিই সরে যাচ্ছি|
বেশ কিছু প্রশ্ন রেখে গেল বাবুলের ফেসবুক পোস্ট
তারপর আরও এক তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়ে বাবুল শেষ করেন তাঁর লেখা। তিনি বলেন, হ্যাঁ কিছু কথা বাকি রয়ে গেল...হয়তো কখনও বলবো...আজ নাই বা বললাম...। শেষে তিনি আবার লিখলেন- চললাম...। বাবুলের এই ফেসবুক পোস্ট রাজনৈতিক সন্ন্যাস ও সাংসদ পদ থেকে ইস্তফার আগে বেশ কিছু প্রশ্ন রেখে গেল!