কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে কার আধিপত্য! ২০১৯-এ ফিরে দেখা ভোটের ইতিহাস
২০১৯-এর লোকসভা যুদ্ধে বাংলায় প্রথম দফায় ভোট হচ্ছে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে। কিন্তু কী ছিল এই দুই কেন্দ্রের ভোট ইতিহাস। তার আগে ভোট শুরুর আগে একবার ফিরে দেখা কোচবিহারের ভোট ইতিহাস।
২০১৯-এর লোকসভা যুদ্ধে বাংলায় প্রথম দফায় ভোট হচ্ছে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সমীক্ষায় আভাস এসেছে, এই দুই কেন্দ্রে কী ফলাফল হতে চলেছে। কিন্তু কী ছিল এই দুই কেন্দ্রের ভোট ইতিহাস। ভোট হবে, তারপর মিলবে চূড়ান্ত ফল। তার আগে ভোট শুরুর আগে একবার ফিরে দেখা কোচবিহারের ভোট ইতিহাস।
কোচবিহার
দেশের ৫৪৩টি লোকসভার কেন্দ্রের মধ্যে এক নম্বর লোকসভা কেন্দ্র কোচবিহার। সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত এই কেন্দ্রটি। কোচবিহারের মধ্যে রয়েছে মাথাভাঙা, কোচবিহার উত্তর, কোচবিহার দক্ষিণ, শীতলকুচি, সিতাই, দিনহাটা ও নাটাবাড়ি। এর মধ্যে কোচবিহার উত্তর শীতলকুচি বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। এছাড়া বাকি পাঁচটি কেন্দ্র তৃণমূলের দখলে।
১৯৫১ থেকে ১৯৭১
১৯৫১ থেকে ১৯৭১- এই ২০ বছরে লড়াই সীমাবদ্ধ ছিল কংগ্রেস ও ফরওয়ার্ড ব্লকের মধ্যে। ১৯৫১ সালে উত্তরবঙ্গে তিন আসনের দখল ছিল কংগ্রেসের দখলে। সাংসদ ছিলেন উপেন্দ্রনাথ বর্মন, বীরেন্দ্রনাথ কথাম ও অমিয়কান্ত বসু। ১৯৫৭ সালে কংগ্রেসের উপেন্দ্রনাথ বর্মন ও সন্তোষ বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে ফরওয়ার্ড ব্লক ছিনিয়ে নেয় এই আসনটি। সাংসদ হন দেবেন্দ্রনাথ কার্জি। পরের বছরই উপনির্বাচনে জয়ী হল কংগ্রেসের পিসি বর্মন। ১৯৬৭ সালে ফরওয়ার্ড ব্লকের বিনয়কৃষ্ণ দাসচৌধুরী হন সাংসদ। ১৯৭১ সালে ফের কংগ্রেসে যোগ দিয়ে তিনিই সাংসদ নির্বাচিত হন।
১৯৭৭ থেকে ১৯৯৯
১৯৭৭ থেকে ১৯৯৯-এর মধ্যে আটটি লোকসভা নির্বাচন হয়েছে। আটটি নির্বাচনেই এই কেন্দ্র থেকে বিজয়ী হয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক। টানা আটবার অমরেন্দ্রনাথ রায়প্রধান এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। কোচবিহার বরাবরই ফরওয়ার্ড ব্লকের শক্ত গাঁটি ছিল। তার প্রমাণ এই জয়ের ধারা। মোট কথা বাম আমলে এই কেন্দ্রে দাঁত ফোটাতে পারেনি ডানপন্থী শক্তি।
২০০৪ থেকে ২০১৬
২০০৪ থেকে ২০১৬- এর মধ্যে মোট চারটি নির্বাচন হয়েছে কোচবিহার কেন্দ্রে। ২০০৪ ও ২০০৯-এ এই কেন্দ্র থেকে বিজয়ী হন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী। ২০০৪-এ হিতেন বর্মন ও ২০০৯-এ নৃপেন্দ্রনাথ রায় সাংসদ নির্বাচিত হন। এরপরই ২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তন ঘটে। বামফ্র্ন্ট শাসনের অবসান হয়। তারপর ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হন তৃণমূলের রেণুকা সিনহা। ২০১৬-য় ফের উপনির্বাচন। আবারও জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস। এবার সাংসদ হন পার্থপ্রতীম রায়।
২০১৪ নির্বাচনের ফল
২০১৪ সালে কোচবিহার কেন্দ্র থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের রেণুকা সিনহা। তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকের দীপককুমার রায়কে ৮৭,১০৭ ভোটে হারিয়েছিলেন। তৃতীয় হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী হেমচন্দ্র বর্মন। তিনি পেয়েছিলেন ২,১৭,৬৫৩ ভোট। আর কংগ্রেস প্রার্থী কেশবচন্দ্র রায়ের প্রাপ্ত ভোট ৭৪,৫৪০।
২০১৬ উপনির্বাচনের ফল
২০১৬ উপনির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের পার্থপ্রতীম রায়। তিনি বিজেপির হেমচন্দ্র বর্মনকে চার লাখেরও বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন। তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৭,৯৪,৩৭৫ ভোট। বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩,৮১,১৩৪ ভোট। তৃতীয় ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নৃপেন্দ্রনাথ রায় পেয়েছিলেন ৮৭,৩৬৩ ভোট। আর কংগ্রেস প্রার্থী পার্থপ্রতীম ইসর পেয়েছিলেন ৩৩, ৪৭০ ভোট।
২০১৯-এ কারা প্রার্থী
এবার সিটিং এমপিকে টিকিট দেয়নি তৃণমূল। এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করেছে ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া রাজ্যের প্রাক্তনমন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে। বিজেপির প্রার্থী তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত নিশীথ প্রামাণিক। ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী গোবিন্দ রায় ও কংগ্রেস প্রার্থী করেছে প্রিয়া রায়চৌধুরীকে।