শুরু মেরুকরণের রাজনীতি, একুশের আগে সুর চড়িয়ে বিজেপির 'রাস্তা পরিষ্কার' করছেন ওয়েইসি
বিগত কদিন ধরেই দেশের অন্যান্য সব সমস্যা দূরে রেখে মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে লাভ জেহাদ। এই ইস্যুতে ক্রমেই মেরকরণ হচ্ছে দেশের রাজনীতিতে। এই বিষয়টিকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছেন এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। এরপরই তাঁকে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। বেঙ্গালুরুর বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্য তো ওয়েইসিকে জিন্নাহ বলে আখ্যা দেন।
লাভ জেহাদ নিয়ে ওয়েইসির হুঙ্কার
এদিকে বিজেপির আক্রমণকে তোয়াক্কা না করেই ওয়েইসি এই বিষয়ে বলেছিলেন, 'এই ধরনের (লাভ জেহাদ) আইন ভারতীয় সংবিধানের ১৪ ও ২১ নম্বর ধারার পরিপন্থী। আইনের কথা বলার আগে সকলের সংবিধান পড়া উচিত। বেরোজগারী থেকে যুব সমাজের নজর ঘোরাতেই বিজেপি এইসব করছে।'
বাংলার পাশাপাশি অসমে নজর ওয়েইসির
প্রসঙ্গত, কদিন আগেই এলাহাবাদ হাইকোর্ট এক রায়ে জানিয়েছে, বিবাহের জন্য ধর্ম পরিবর্তন করা বাধ্যতামূলক নয়। আর এই রায়ের পরেই উঠেপড়ে লেগেছে গেরুয়া শিবির। এদিকে এই ইস্যুতে এবার মেরুকরণের রাজনীতির মাধ্যমে বাংলা এবং অসমে নিজের ভোট ব্যাঙ্ক বাড়াতে চাইছেন ওয়েইসি। ২০২১-এ এই দুই রাজ্যেই ভোটে লড়ার ঘোষণা করেছেন তিনি।
বিজেপির দেখানো পথে হাঁটছেন ওয়েইসি!
এদিকে ওয়েইসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি আসলে বিজেপির বি টিম হয়ে কাজ করছেন। এই বিষয়ে কয়েকদিন আগেই ওয়েইসিকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন বিখ্যাত উর্দু কবি মুনব্বর রানা। রানার অভিযোগ ছিল, হিন্দু রাষ্ট্র গড়ার প্রক্রিয়াতে পরোক্ষ মদত দিচ্ছেন ওয়েইসি। রানার এহেন অভিযোগের কারণ, ওয়েইসি মুসলিম ভোটকে একত্রিত করতে দিয়ে বিজেপির দেখানো পথে হাঁটছেন। একত্রিত হচ্ছে হিন্দু ভোট। নষ্ট হচ্ছে দেশের ধর্ম নিরপেক্ষ ভাপমূর্তি।
ধর্ম নিরপেক্ষ দলগুলির জন্যে ক্ষতিকারক
মুখে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করলেও তাঁর দলের কারণেই যে বিজেপি বাড়তি অক্সিজেন পাচ্ছে, তা ওয়েইসিও ভাল করেই জানেন বলেও দাবি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। সেই একই ভাবে লাভ জেহাদের মতো বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে বিজেপি-ওয়েইসি দ্বন্দ্ব এবার বাকি ধর্ম নিরপেক্ষ দলগুলির জন্যে ক্ষতিকারক। কারণ কট্টরপন্থা যে ধর্মের প্রেক্ষিতেই হোক, ভোটের ময়দানে লাভবান হবে বিজেপি।
বিহার মডেলের পুনরাবৃত্তি
দেখা গিয়েছে, সদ্য সমাপ্ত বিহার নির্বাচনে বহু ক্ষেত্রেই স্বল্প ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে। এআইএমআইএম-এর উপস্থিতি সেখানে দারুণ প্রভাব ফেলেছে। বাংলা বা অসমের ক্ষেত্রেও ওয়েইসি এই রকম ভূমিকা পালন করে বিজেপিকে জিততে সাহায্য করবেন বলে অভিযোগ একাধিক নেতার।
মুসলিম সম্প্রদায় মমতার সরকারের অধীনে প্রায় বিচ্ছিন্ন
ওয়েইসির দল মিম মুসলিম ভোটারে সমৃদ্ধ। সেই ভিত্তিতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে ওয়েইসি বলেছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে মুসলিমরা শুধু ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহৃত। তাঁদের প্রকৃত উন্নয়ন হয়নি। ওয়েইসির মতে, বাংলায় বসবাসরত মুসলমানদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা দেশের অনেক জায়গার চেয়ে খারাপ। মুসলিম সম্প্রদায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অধীনে প্রায় বিচ্ছিন্ন।
সিএএ-এনআরসি সহ একাধিক ইস্যুতে সরব ওয়েইসি
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ১৮ আসন প্রাপ্তিকে রাজ্যের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির কাছে বাংলায় সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষার ব্যর্থতা হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন ওয়েইসি। এবার সেই পথে হেঁটেই সিএএ-এনআরসি সহ একাধিক ইস্যুতে মুসলিম ভোট নিজের ঝুলিতে ঢোকাতে সচেষ্ট হয়েছেন ওয়েইসি। যার জেরে লোকসান হবে তৃণমূল কংগ্রেস বা বাম-কংগ্রেসের। অন্যদিকে মেরুকরণের সমীকরণ বা ভোট কাটাকাটিতে লাভবান হবে বিজেপি।
মেরুকরণের ফাঁদে পড়বেন বাংলার ভোটাররা?
মালদহ ও মুর্শিদাবাদ-সহ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের কিছু অংশে মুসলমানদের যথেষ্ট জনসংখ্যা রয়েছে। মুসলিমরা এখানে আধিপত্য বিস্তার করে। সেই সব এলাকার ভোটারদের নিজের কাছে টেনে তৃণমূলের লোকসান করতে লাভ জেহাদের থেকে ভালো ইস্যু আর কী হতে পারে। তাই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মুসলিম জনগণদের কাছে ওয়েইসি নিজেকে ত্রাতা হিসাবে তুলে ধরছেন। যার জেরে সাধারণ হিন্দু ভোটাররাও মেরুকরণের ফাঁদে পড়ে বিজেপির দিকে ঝুঁকে যাবেন।
বিজেপির তালে তাল মিলিয়ে এবার 'অখণ্ড ভারত'-এর ডাক এনসিপি নেতার! মিলল কোন ইঙ্গিত?