জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে পৌঁছল ফালাকাটাকাণ্ড, ডিএম ও তাঁর স্ত্রী-সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে দায়ের অভিযোগ
'মাফিয়া ডনের মতোই আচরণ করেছেন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক। তাঁর স্ত্রী-কে হেনস্থা করার ঘটনায় ধৃত অভিযুক্তকে আইন আইনের পথে সাজা দিক। কিন্তু, ফালাকাটা থানায় যে কাণ্ড ঘটেছে তা ক্ষমতার অপব্যবহার।
'মাফিয়া ডনের মতোই আচরণ করেছেন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক। তাঁর স্ত্রী-কে হেনস্থা করার ঘটনায় ধৃত অভিযুক্তকে আইন আইনের পথে সাজা দিক। কিন্তু, ফালাকাটা থানার মধ্যে ৬ জানুয়ারি যে কাণ্ড ঘটেছে তা ক্ষমতার অপব্যবহার। এর মানে হাতে ক্ষমতা থাকলে যা ইচ্ছা করা যেতে পারে।' এই ভাষাতেই ফালাকাটাকাণ্ডের নিন্দায় সরব হয়েছেন রাজ্য মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর রাজ্য সহ-সভাপতি রঞ্জিত শূর।
আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসকের বিরুদ্ধে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে নালিশও জানিয়েছে এপিডিআর। এনএইচআরসি থেকে সেই অভিযোগ গ্রহণের ডায়েরি নম্বরও এপিডিআর-এর হাতে এসেছে। এই অভিযোগপত্রে এপডিআর আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মলের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী নন্দিনী কৃষ্ণণ এবং ফালাকাটা থানার আইসি-র নাম উল্লেখ করেছে। এঁদের সকলেই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে এপিডিআর।
অবিলম্বে নিখিল নির্মল-কে সাসপেন্ড করে ঘটনার যথাযথ তদন্তের দাবিও তোলা হয়েছে। রঞ্জিত শূর-এর অভিযোগ, 'ফালাকাটাকাণ্ডের ভিডিও প্রমাণ করে দিয়েছে সেখানে কোন মাত্রায় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন জেলাশাসক। থানার মধ্যে ঢুকে আইসি-র ঘরে যেভাবে এক আটককে মারধর করা হল তাতে আইনও ভঙ্গ হয়েছে।'
এমনকী কোন অধিকারে পুলিশ হেফাজতে থাকা এক বন্দিকে এভাবে মারধর করার সাহস পেলেন জেলাশাসকের স্ত্রী? এই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে এপিডিআর-এর রাজ্য শাখা। 'জেলাশাসকের আচরণ কার্যত সস্তার হিন্দি সিনেমার নায়কের মতো। এই ধরনের এক ব্যক্তি কোনওভাবেই জেলাশাসক হওয়ার যোগ্যই নন।'-- এমনই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রঞ্জিত শূর।
ফালাকাটাকাণ্ডে আইসি সৌম্যজিৎ রায়-এর ভূমিকাও যে নিন্দনীয় তাও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে এপিডিআর। একজন আইসি কীভাবে জেলাশাসকের সামনে নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকলেন তাতেও প্রশ্ন উঠেছে। জেলাশাসক নিখিল নির্মলের সাসপেনশন দাবি করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর স্ত্রী নন্দিনী কৃষ্ণণ এবং আইসি সৌম্যজিৎ রায়ের কড়া শাস্তির দাবিও জানিয়েছে এপিডিআর। কোনও ব্যক্তিকে পুলিশ থানায় তুলে নিয়ে এলে তাঁর শরীর, স্বাস্থ্য এবং সম্মান রক্ষার দায়িত্ব তঁদেরই। সেখানে এক ব্যক্তি জেলাশাসক হওয়ায় থানায় ঢুকে আইসি-র সামনেই আটককে ধরে মারধর করছে এই ঘটনা সচারচর দেখা যায় না বলেও মনে করছে এপিডিআর। মানবাধিকার এই সংগঠনের অভিযোগ ক্ষমতা থাকলে তারমানে যে কেউ যা কিছু করতে পারে। জেলাশাসকের স্ত্রী-র হেনস্থায় অভিযুক্ত যুবক যখন পুলিশি হেফাজতে তখন বন্ধু-বান্ধব সহযোগে তার উপর বলপ্রয়োগ করার কোনও দরকার ছিল কি? সে প্রশ্ন তুলছেন রঞ্জিত শূররা।
দেখুন সেই মারধরের ভিডিও...
এদিকে, থানার মধ্যে সস্ত্রীক বন্দি পিটিয়ে তাঁর উচ্চমহলের কর্তাদের কাছে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন জেলাশাসক নিখিল নির্মল। তাঁকে বাধ্যতামূলক ১০ দিনের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তাঁর স্থানে দায়িত্ব নিয়েছেন এক সহকারি জেলাশাসক। নবান্ন সূত্রে খবর আপাততকম্পালসারি ওয়েটিং-এ থাকতে হতে পারে নিখিল নির্মলকে।