অনুপম সিংহ হত্যাকাণ্ড : স্ত্রী মনুয়া ও অজিতের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ আদালতের
অনুপম সিংহ হত্যাকাণ্ড মামলায় সাজা ঘোষণা করল বারাসতের ফার্স্ট ট্র্যাক আদালত।
অনুপম সিংহ হত্যাকাণ্ড মামলায় সাজা ঘোষণা করল বারাসতের ফার্স্ট ট্র্যাক আদালত। এদিন মনুয়া মজুমদার ও তার প্রেমিক অজিতকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে দুজনকেই ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও এক বছর কারাবাসের সাজা ভোগ করতে হবে। এই মামলায় অনুপমের বাড়ির লোক দুই খুনির ফাঁসির সাজা চেয়েছিলেন। তবে তা না হওয়ায় বিচার ব্যবস্থার প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তাঁরা।
২০১৭ সালের ২রা মে খুন হন অনুপম। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল গোটা রাজ্যে। অভিযোগ ওঠে প্রণয় ঘটিত কারণে প্রেমিকের সঙ্গে চক্রান্ত করে স্বামী অনুপম সিংহ কে খুন করে স্ত্রী মনুয়া।
খুনের তেরো দিনের মাথায় প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা পুলিশ বারাসাত থেকে মনুয়া মজুমদার ও তাঁর প্রেমিক অজিত ওরফে বুবাইকে গ্রেপ্তার করে।
প্রসঙ্গত ২০১৭ সালে মে মাসের তিন তারিখ সকালে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন সংস্থায় কর্মরত অনুপম সিংহ (৩৪)কে তাঁর বাড়িতেই নৃশংস ভাবে খুন হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তদন্তে প্রকাশ পায়, তাঁর মাথায় ভারী অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তাঁকে খুন করা হয়েছিল আগের রাতেই। খুনি হিসেবে প্রেমিক বুবাইকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করতে পুলিশ সময় নেয় প্রায় দু সপ্তাহ।
পুলিশ তদন্তটিকে বিভিন্ন আবর্তে মোড়া বলেই জানিয়েছিল। তবে অর্থ বিনিময়কারী সংস্থার কর্মী এবং আর্থিক ভাবে অবস্থাপন্ন অনুপমের খুনের পিছনে টাকাপয়সার প্রত্যক্ষ সংযোগ পুলিশ খুঁজে পায়নি। ২ মে তারিখে গভীর রাতে খুন হয়েছিলেন অনুপম। সেই সময় তাঁর স্ত্রী বাপের বাড়িতে থাকলেও ঘটনার দিন দুপুরে হৃদয়পুরে অনুপমের বাড়িতে অনুপমের অগোচরে অজিত মনুয়ার উপস্থিতি ও স্বামীর হাত থেকে এনগেজমেন্ট রিংয়ের অন্তর্ধান সহ একাধিক বিষয় পুলিশকে স্ত্রী মনুয়া ও অজিতের দিকে নজর ফেরাতে বাধ্য করেছিল।
জানা যায়, মনুয়া ওই বাড়ি থেকে বারাসতে বাপের বাড়ি ফিরলেও থেকে গেছিল অজিত। পুলিশ এই সূত্র ধরেই তদন্তের জাল গুটিয়ে আনতে থাকে।
মাধ্যমিক অনুত্তীর্ণ অশোক নগর এলাকার বাসিন্দা অজিত ও মনুয়ার দীর্ঘ দিন ধরেই অনুপমের অজ্ঞাত সারে সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। হৃদয়পুর তালতলা এলাকার বাসিন্দা অনুপম বাড়িতে না থাকলেই হাজির হত বুবাই।
বিষয়টি অনুপমের নজরে আসার পরে পথের কাঁটা অনুপমকে সরিয়ে দিতে মনুয়ার সঙ্গে মিলে অজিত চক্রান্ত করে ও সেইমতো হত্যার রাতে ভারী অস্ত্র দিয়ে একাধিক আঘাত হানে। খুনের সময় স্ত্রী মোবাইলে অনলাইন ছিল ও স্বামীর শেষ আর্তনাদ নিজের কানে শুনেছে। অভিযুক্ত দুজনকেই নেওয়া হয় পুলিশি হেফাজতে।
অবশেষে হত্যার ৮৬ দিন পরে চার্জশিট জমা দেয় বারাসাত থানার তদন্তকারী পুলিশ। এর মধ্যে ফিংগারপ্রিন্ট ও ফরেনসিক রিপোর্ট ও ছিল। ৩০২ ও ১২০বি ধারায় খুন ও ষড়যন্ত্রের মামলা চলে। ২৭ জন সাক্ষী ছিলেন । ৪৬৯ পাতার চার্জশিট জমা পড়ে।