মমতার রাজ্যে শিক্ষকদের মৃত্যু মিছিল, ডিইএলইডি পরীক্ষার চিন্তায় মৃত্যু দাবি সহকর্মীদের
ডিইলইডি পরীক্ষা বিতর্কের মাঝে আরও এক শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। এবার এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে কোচবিহারের শীতলকুচি-তে।
ডিইলইডি পরীক্ষা বিতর্কের মাঝে আরও এক শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। এবার এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে কোচবিহারের শীতলকুচি-তে। মৃত শিক্ষকের এক সহকর্মী জানিয়েছেন, শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ডিইএলইডি পরীক্ষায় বসেছিলেন মৌলানা মহম্মদ জমিরউদ্দিন মিঞাঁ। বয়ষ্ক ওই শিক্ষক রাতদিনই ডিইএলইডি পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা করতেন। ২৫ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্ট ৩ফ্রেব্রুয়ারি-র পরীক্ষায় স্থগিতাদেশ না দেওয়ায় ভেঙে পড়েছিলেন মহম্মদ জমিরউদ্দিন। এরপর নাকি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
জানা গিয়েছে মহম্মদ জমিরউদ্দিন শীতলকুচির বরমরিসা মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষকতা করতেন। এটি একটি সিনিয়র মাদ্রাসা বলে জানা গিয়েছে। সিনিয়র মাদ্রাসা-তে ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়ানো হয়। পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসা শিক্ষকদের ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কোচবিহার জেলা শাখা সম্পাদক মহম্মদ কোবাদ আলি জানিয়েছেন, জমিরউদ্দিন সমানে চিন্তা করছিলেন যে কীভাবে ৩ ফেব্রুয়ারি-তে একটানা ছ'ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পরীক্ষা দেবেন? জমিরউদ্দিনের যেখানে বাড়ি তা প্রত্যন্ত অঞ্চল। ইন্টারনেটের সুবন্দোবস্ত নেই। দিনের অধিকাংশ সময়ই মোবাইলে টাওয়ার পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে এমনিতেই অনলাইনে ডিইএলইডি-র প্রশিক্ষণ নেওয়াটা প্রকৃত অর্থেই কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন কোবাদ আলি। তিনি আরও জানিয়েছেন, স্টাডি সেন্টার অর্ধেক সময় বন্ধ থাকে। ফলে অনলাইন ক্লাসে কিছু বুঝতে অসুবিধা হলে তা স্টাডি সেন্টারে গিয়ে বুঝে আসার মতো সুযোগ মেলে না। ফলে, ডিইলইডি নিয়ে যাবতীয় উৎসাহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের শিক্ষকরা কার্যত উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন।
প্রয়াত শিক্ষক জমিরউদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টাও করা হয়েছিল। কিন্তু, মোবাইল নেটওয়ার্ক ঠিকমত না থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি। জমিরউদ্দিন মাদ্রাসায় আরবি পড়াতেন। স্ত্রী ছাড়়াও এক ছেলে এবং এক মেয়ে জমিরউদ্দিনের। বাবা-কে হারিয়ে এখন শোকে মূহ্যমান ১২ বছরের ছেলে এবং বছর আঠারোর মেয়ে। গতবছরই উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছে জমিরউদ্দিনের মেয়ে। বাবা-কে হারিয়ে কলেজের পড়াশোনা কী ভাবে চলবে তা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।
বাড়িতে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন জমিরউদ্দিন। সরকারি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করলেও মাইনে এমন কিছু না হওয়াতে কিছুই সেভাবে সঞ্চয় নেই বলেই দাবি সহকর্মীদের। ডিইএলইডি পরীক্ষা বিতর্কে আগাগোড়া শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ। এই সংগঠনের রাজ্যসম্পাদক মইদুল ইসলাম রীতিমতো ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, 'এ তো শিক্ষকদের মত্যু মিছিল। এটাই কি কাম্য ছিল? শিক্ষক প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট দেওয়ার চাপটা এত বেশি বয়সের শিক্ষকরা নিতে পারছেন না। যাঁরা তাঁদের চাকরি জীবনের ৭৫শতাংশ পার করে এসেছেন, তাঁদেরকে যেভাবে একটা কঠিন পরিস্থিতি এবং চাকরি হারানোর ভয় দেখিয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রমাণ দাখিল করতে বলা হচ্ছে তাতে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এই মৃত্যুর মিছিল যাতে আর না বাড়ে সেটাই প্রার্থনা করছি। রোজই কোনও না কোনও শিক্ষকের অসুস্থতার খবর পাচ্ছি। আমার কাছে যে হিসাব এসেছে তাতে ডিইএলইডি-র আতঙ্কে ইতিমধ্যে ১৫ থেকে ২০ শিক্ষক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রাজ্য সরকার কি এরপরও এই সব শিক্ষকদের হয়ে কোনও পদক্ষেপ নেবে না!'