বর্ধমানে আরও এক জঙ্গিঘাঁটির সন্ধান, গ্রেফতার হয়নি কেউ
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বিন্দুমাত্র সহায়তা করেনি এনআইএ-কে, রিপোর্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে
দুর্গা পুজোর মহাষ্টমীর দুপুরে অর্থাৎ ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। নিহত হয় দুই জঙ্গি। জখম হয় একজন। এরা আল জিহাদ, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, সিমি ও জামাতুল মুজাহিদিনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। ঘটনার পর গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। তাদের জেরা করে জানা যায়, বর্ধমান শহরে জাল বিছিয়েছে জঙ্গিরা। ধৃত হাসান মোল্লা পুলিশকে জানিয়েছে, খাগড়াগড়ের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল বাংলাদেশি জঙ্গিদের। ভারতে নাশকতা চালানোর পাশাপাশি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধেও ফন্দি আঁটা হচ্ছিল বর্ধমানে বসে।
বুধবার বর্ধমানের বাবুরবাগ লিচুতলায় একটি বাড়িতে আচমকা হানা দেয় পুলিশ। সেখানে গত তিন মাস ধরে একটি বাড়ির দু'টি ঘর ভাড়া নিয়েছিল চারজন। দু'জন পুরুষ ও দু'জন মহিলা। এরা খাগড়াগড়ের শামিম আহমেদ ওরফে শাকিলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। অষ্টমীর দিন বিস্ফোরণের সংবাদ পেয়ে সবাই গা-ঢাকা দেয়। তার পর থেকে পাড়ার লোক দেখেছেন, বাড়িটি তালাবন্ধ। সিআইডি ও বর্ধমান থানার পুলিশ তালা ভেঙে ঢুকে বাড়িতে তল্লাশি চালায়। উদ্ধার হওয়া কাগজপত্র ঘেঁটে দেখে পুলিশের অনুমান, বর্ধমান ও আশপাশের জেলায় এদের এমন গোপন আস্তানা আরও থাকতে পারে। যারা গা-ঢাকা দিয়েছে, তাদের সন্ধানে খোঁজ শুরু হয়েছে।
রাজ্য পুলিশের অসহযোগিতায় তদন্ত বন্ধ করল ক্ষুব্ধ এনআইএ
অন্যদিকে, বর্ধমান বিস্ফোরণের পর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি) এসে হাজির হলেও আপাতত তারা তদন্ত থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে বলে খবর। প্রথমত, রাজ্য পুলিশ ও সিআইডি নানাভাবে তাদের সঙ্গে অসহযোগিতা করায় ক্ষুব্ধ এনআইএ গোয়েন্দারা। রাজ্য পুলিশ থাকতে এনআইএ তদন্ত করলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বিঘ্নিত হবে, এই দাবি করা হয়েছে সরকারের তরফে। তাই এনআইএ এবং আইবি এখন দর্শকের ভূমিকায়। এমনকী, তাদের না জানিয়েই পুলিশ প্রমাণ নষ্ট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দ্বিতীয়ত, দিল্লি থেকে তদন্তের ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা এসে পৌঁছয়নি। ফলে আগ বাড়িয়ে কিছু করতে চাইছে না এনআইএ।
এই মুহূর্তে বর্ধমান থানার পুলিশ ও সিআইডি খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের তদন্ত করছে। রাজ্য সরকারের বেজায় ভরসা এদের ওপর। কিন্তু জঙ্গি কার্যকলাপের তদন্তে যে প্রশিক্ষণ ও পরিকাঠামো দরকার, কোনওটাই নেই পুলিশ বা সিআইডির। ফলে তদন্ত হবে নাকি প্রহসন, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় কৌতূহল।
আশ্চর্যের ব্যাপার হল, যেখানে প্রাথমিক তদন্তে বোঝা গিয়েছে যে, এরা দেশের বিরুদ্ধে নাশকতা চালানোর ছক কষছিল, সেখানে মামলা দেওয়া হয়েছে লঘু ধারায়। খুনের চেষ্টা, আঘাত করা ইত্যাদি। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২১, ১২১ (এ), ১২১ (বি) অর্থাৎ দেশদ্রোহের মামলা দেওয়া হয়নি। ইএপিএ বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন, যা কি না দেশবিরোধী কার্যকলাপে প্রয়োগ করা উচিত, তাও টেনে আনেনি পুলিশ। সুতরাং রাজ্য পুলিশ কতটা নিরপেক্ষ তদন্ত করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।