৫০ বছর ধরে শিক্ষার মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তা দিচ্ছেন পণ্ডিত অনিল কুমার দাশ
অর্ধশতাব্দী ধরে সংস্কৃত ও হিন্দি শিক্ষাদানের মাধ্যমে সম্প্রীতির পীঠস্থান গড়ে তুলেছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক পন্ডিত অনিল কুমার দাশ। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর আগে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের হাসনাবাদের সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলেন 'আশালতা চতুষ্পাঠী' বা সংস্কৃত টোল গড়ে তোলেন তিনি।

ছাত্রজীবন থেকেই যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির স্বপ্ন দেখেছিলেন অনিল বাবু তার সেই স্বপ্ন পূরণের প্রতিষ্ঠান আশালতা চতুষ্পাঠী। তৎকালীন ২৪ পরগনা জেলার প্রত্যন্ত সুন্দরবন লাগোয়া হাসনাবাদ রেল স্টেশনের কাছে খেলার মাঠের পাশে ছোট্ট এক ভূখণ্ডে গড়ে তোলা ওঠে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় পথ চলা। আজও চলছে 'আশলতা চতুষ্পাঠী'। অব্যাহত রয়েছে শিক্ষাদানের ধারা। যার প্রধান পরিচালক, অধ্যক্ষ ও শিক্ষক রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত পন্ডিত অনিল কুমার দাশ। কলকাতার সংস্কৃত কলেজ থেকে এমএ, কাব্য, ব্যাকরণ তীর্থ ও রত্ন পড়াশুনা করে অনিল বাবু সংস্কৃত ভাষাকে হিন্দু, মুসলিম থেকে দলিত সব ধর্ম-বর্ণ সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াই একমাত্র লক্ষ্য ছিল তাঁর।
অনিল বাবু জানান, মা আশালতা দেবীর স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন 'আশালতা চতুষ্পাঠী' বা 'সংস্কৃত টোল'। এর পাশাপাশি ১৯৮৮ সালে গড়ে তুলেছেন আশালতা হিন্দি বিদ্যালয় বা হিন্দি টোল। যা ভারত সরকারের অনুমোদন ও সাহায্য প্রাপ্ত। এছাড়া ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কেবলমাত্র মেয়েদের জন্য হাসনাবাদ হিন্দি বালিকা বিদ্যালয়। সংস্কৃত ও হিন্দি শিক্ষা প্রসারে পন্ডিত অনিল কুমার দাশের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৩ সালে জাতীয় শিক্ষক সম্মান পুরস্কার পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি শংকর দায়াল শর্মার হাত থেকে।
আশালতা চতুষ্পাঠী বা সংস্কৃত টোল এর প্রাক্তনী হাসিনা বানু, মুজিবর রহমান, হায়াত আলী গাজী, পঞ্চানন মন্ডলরা উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য সরকারি আর্থিক পুরস্কার পেয়েছেন। অন্যদিকে আশালতা হিন্দি বিদ্যালয় বা টোলের শিক্ষার্থী মহিমা খাতুন দীপাঞ্জন সরকার সহ ২৭ জন কৃতি ভারত সরকারের জাতীয়় বৃত্তি লাভ করে এই প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি বাড়িয়েছে।
সত্তরোর্ধ প্রবীণ পন্ডিত অনিল কুমার দাশ আরও জানিয়েছেন, ভারতবর্ষের শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িত চতুষ্পাঠী বা টোল। এইসব প্রতিষ্ঠানকে সেকেলে মনে হলেও এর গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা আজও সমান।'
হাসনাবাদ হিন্দি বালিকা বিদ্যালয় থেকে রত্ন যোগ্যতা অর্জন করেছেন পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সুদীপ্ত দাস। যিনি বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক। এছাড়া এখান থেকে রত্ন যোগ্যতা অর্জন করেছেন অঞ্জনা সরকার, শিশিরকুমার দাশ, মিনতি দাশ, অর্পিতা মন্ডল, শিল্পী জানা, অনামিকা ব্যানার্জি, সাধনা নাথ, আলপনা বিশ্বাস, খোকন সরদাররা এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে যুক্ত।
