কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী রাসমেলার রাসচক্র! নিরামিষ খেয়ে কাজ এক মুসলিমের
প্রতিবছর কোজাগরী উৎসবের দিন থেকেই এই রাসচক্র নির্মাণের কাজ শুরু করেন আলতাপ মিয়া। সর্বধর্ম সমন্বয়ের বিরল নজির দেখা যায়। একজন মুসলমানের নিষ্ঠা আর অধ্যাবসায়ে গড়ে ওঠে হিন্দু সম্প্রদায়ের এই রাসচক্র।
প্রতিবছর কোজাগরী উৎসবের দিন থেকেই এই রাসচক্র নির্মাণের কাজ শুরু করেন আলতাপ মিয়া। সর্বধর্ম সমন্বয়ের বিরল নজির দেখা যায়। একজন মুসলমানের নিষ্ঠা আর অধ্যাবসায়ে গড়ে ওঠে হিন্দু সম্প্রদায়ের এই রাসচক্র। কোচবিহার শহরে লাগোয়া হরিণ চওড়া এলাকার বাসিন্দা আলতাফ মিয়া এই কোজাগরী উৎসবের দিন থেকে দীর্ঘ এক মাস নিরামিষ খেয়ে কাজ করেন।
উত্তরবঙ্গ অসম সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রাচীন ও বৃহত্তম উৎসবের নাম রাসমেলা। প্রায় ২৯ ফুট উচ্চতার এই রাসচক্র আর এই রাসমেলার মূল আকর্ষণ রাসচক্র। ঐতিহ্য মেনেই রাজার আমল থেকেই এই রাসচক্র সূচনা হয়। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত কোচবিহারের মহারাজা রাসচক্রটি ঘুরিয়ে এই রাসমেলা উদ্বোধন করতেন। বর্তমানে এই রাসচক্রটি ঘুরিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কোচবিহারের জেলাশাসক। কোচবিহারের দেবতার ট্রাস্ট বোর্ডের সূত্রের খবর, ১৮১২ সালে কোচবিহারের ভেটাগুড়িতে প্রথম রাসমেলার আয়োজন করা হয়। ওই বছরই রাসপূর্ণিমা তিথিতে কোচবিহারের মহারাজ হরেন্দ্র নারায়ণ ভেটাগুড়িতে নবনির্মিত রাজ প্রাসাদে চলে যান।
সেই দিনটিই থেকে সেখানে রাসমেলার আসর বসে। ১৮৯০ সালে কোচবিহার শহরের বৈরাগী দিঘির পাড়ে মদনমোহন মন্দির নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়। ওই বছর থেকেই মন্দির লাগোয়া এলাকায় মেলা বসত বলে গবেষকদের ধারণা। ১৯১৭ সাল নাগাদ প্যারেড গ্রাউন্ডে মেলা স্থানান্তরিত হয়।
বর্তমানে তা রাসমেলা মাঠ নামে পরিচিত বংশানুক্রমিক ভাবে এই রাসচক্র তৈরির কাজ সামলে আসে আলতাফের পরিবার। তাঁর দাদু পান মহম্মদ মিয়া এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর বাবা আজিজ মিয়া রাসচক্র তৈরি করতেন। বাঁশ কেটে বাতা তৈরি করে শুকিয়ে কাগজের কারুকাজ্য করে নির্মিত হত এই চক্র। এই কারুকার্যে মধ্যে যেমন থাকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মীয় কারুকার্য ঠিক একইভাবে ইসলামিক ঐতিহ্যের বিভিন্ন নকশা ও বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নানান হস্ত শিল্পের নিদর্শন এর দেখা মেলে এই রাসচক্রতে। সারা বছর কোচবিহার কেশব আশ্রমে নৈশ প্রহরী দায়িত্ব সামলানোর ব্যস্ততা তাঁরই।
কিন্তু কোজাগরী উৎসবের দিন থেকে দীর্ঘ এক মাস তার সমস্ত ব্যস্ততা এই রাসচক্র নির্মাণকে ঘিরে। কাগজ কেটে তাতে এই সমস্ত নকশা নিখুঁত ভাবে প্রস্তুত করে বাঁশের তৈরি কাঠামোতে লাগিয়ে সর্বধর্ম সমন্বয়ের প্রতীক এই রাসচক্রের নির্মাণের পূর্ণতা দেন এই আলতাফ মিয়া।