মুকুলের খাসতালুকে থাবা মমতার, বড়সড় ফাটল ধরিয়ে বিজেপি ‘প্রার্থী’র যোগ তৃণমূলে
মুকুলের গড়েই বিজেপি ফাঁকা হয়ে যেতে বসেছে। খাস বীজপুরেই বিজেপিতে বড়সড় ফাটল ধরিয়ে তৃণমূলে চললেন ‘বিদ্রোহী’ নেত্রী আলোরানি সরকার।
মুকুল রায়কে দলে এনে তৃণমূলের ঘরে সিঁদ কাটতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ঘটল তো তার উল্টোটা! মুকুলের গড়েই বিজেপি ফাঁকা হয়ে যেতে বসেছে। খাস বীজপুরেই বিজেপিতে বড়সড় ফাটল ধরিয়ে তৃণমূলে চললেন 'বিদ্রোহী' নেত্রী আলোরানি সরকার। তাও তিনি একা নন, বিজেপির আরও ছ-জন পদাধিকারীকে নিয়ে তিনি বৃহস্পতিবার যোগ দিচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসে।
এদিন তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে পতাকা তুলে নেবেন আলোদেবী। মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে আগেই বিজেপি ছেড়েছিলেন। এবার নতুন 'আশ্রয়' খুঁজে নিলেন। মুকুল রায়ের তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পরই উত্তর ২৪ পরগনার বীজপুরের রাজনৈতিক চিত্রটা আমূল বদলে যেতে বসেছে।
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার মনস্থ করার পর বিজেপি মহিলা মোর্চার প্রাক্তন সহ সভাপতি আলোরানি সরকার জানিয়েছেন, 'তিনি বীজপুরের মানুষের পাশে থাকতে চেয়ে মুকুল রায়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হতেই রাজনীতিতে এসেছিলেন। নাম লিখিয়েছিলেন বিজেপিতে। সেই বিজেপি এখন মুকুল রায়দেরই আশ্রয় দিচ্ছে। তাই বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মানুষের জন্য কাজ করতে চাই, সেই কারণেই তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরলাম। মুকুল রায়দের মতো দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে লড়াই বলবৎ থাকবে।'
শুভ্রাংশু রায়ের বিরুদ্ধেও তো আপনার লড়াই? তাঁর বিরুদ্ধেই তো আপনি প্রার্থী হয়েছিলেন? এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে আলোদেবী বলেন, 'আমার কাছে মুকুল রায়ই ফ্যাক্টর। শুভ্রাংশু নয়, শুভ্রাংশুর সঙ্গে একসঙ্গে লড়াই করতে বা মঞ্চ শেয়ার করতে তার কোনও আপত্তি নেই।' তাঁর মতে, আসল লোক মুকুল রায়। তিনিই তো এখন বিজেপিতে।
আসলে মুকুল রায় দলে আসার পর তলে তলে দুটি ভাগ হয়ে গিয়েছে বিজেপি। একটা বড় অংশ যে মুকুলকে দলে নেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন, তা প্রকট হয়ে উঠছে ক্রমশ। মুকুল রায়কে ব্যবহার করে তাই তৃণমূল ভাঙার যে পরিকল্পনা করেছিল বিজেপি, তা বারবার প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। মুকুল রায়ই বিজেপির বড় ভাঙনের কারণ হয়ে উঠেছেন। তারই প্রতিফলন দেখা গেল মুকুলের খাসতালুকে। নিজের গড়েই মুকুল 'একা' হয়ে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে নতুন বছরের শুরুতেই বিজেপির সমস্ত পদ ত্যাগ করেছিলেন আলোরানি সরকার। বলেছিলেন, 'মুকুল রায় যে দলে রয়েছেন, সেই দলে থেকে একই মঞ্চ শেয়ার করার মানসিকতা নেই। তাই বিজেপি ত্যাগের সিদ্ধান্ত। দল নয়, আমার কাছে আদর্শই আগে, বীজপুরবাসীর কাছে আমি দায়বদ্ধ। তাঁদের জন্যই আমার এই লড়াই।'
মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর দীপ্তাংশু চৌধুরীর মতো বড়মাপের নেতা দলত্যাগ করে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন। এবার দীপ্তাংশুবাবু পথ অনুসরণ করে বিজেপি ত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন আলোদেবী। সঙ্গে নিয়ে গেলেন এলাকার তাবড় নেতা-নেত্রীকে। সেইসঙ্গে দেড় হাজার কর্মীও যোগ দেবেন তৃণমূলে। অনুষ্ঠানে অভিষেক ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। থাকতে পারেন বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশুও।