আনিস খুনের পরে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহে পরতে পরতে গাফিলতির অভিযোগ! প্রথম ৪ দিনের তদন্তে পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন
আনিস খুনের পরে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহে পরতে পরতে গাফিলতির অভিযোগ! প্রথম ৪ দিনের তদন্তে পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন
মঙ্গলবার দুপুরে আমতায় আনিস খানের (Anish Khan) বাড়িতে পৌঁছে যান সিটের আধিকারিকরা। সেখানে তাঁর বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। পরিবারের সদস্যরা অবশ্য সিবিআই (CBI) তদন্তে অনড়। তবে প্রশ্ন উঠছে শুক্রবার গভীর রাতের পর থেকে জেলা পুলিশ কিংবা রাজ্য পুলিশ এই ঘটনা নিয়ে কতটা তদন্ত করেছে। আদৌ কি পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে তারা, সেই প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ।
পরীক্ষা হয়নি সিসিটিভি ফুটেজ
এখন স্থানীয় প্রশাসনের সুবিধার জন্য সিসিটিভি বসানো রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। সেরকমটি রয়েছে আনিসের গ্রামে ঢোকার রাস্তাতেও। শুক্রবার গভীর রাতের ঘটনার পরে গ্রামের কারও চোখে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষার কথা নজরে আসেনি। সোমবার নতুন করে সেখানে সিসিটিভি বসাতে দেখা গিয়েছে। কেন পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করল না, কেন এই কাজে তাদের অনীহা, সেই প্রশ্ন করছেন স্থানীয়রা। তাহলে কি আনিসের বাবার অভিযোগই ঠিক, সেই প্রশ্ন পরিবার ও গ্রামবাসীদের।
মোবাইল খোঁজায় গাফিলতি
কারও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের তরফ থেকে মৃতের মোবাইল খোঁজ করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে আনিসের পরিবারের অভিযোগ পুলিশ এব্যাপারে খোঁজখবর করেনি। শুক্রবার গভীর রাতের ঘটনার পরে সোমবার আনিসের বাড়ির তরফে থেকে জানানো হয় তাঁরা মোবাইল খুঁজে পেয়েছেন। তবে তাঁদের প্রশ্ন পুলিশ কেন মোবাইল ট্র্যাক করল না। তাহলে তো জানা যেত সেটি কোথায় রয়েছে।
অভিযুক্তদের সনাক্তকরণের চেষ্টা হয়নি
আনিস খানের বাবা সালেম খান বারে বারে বলছেন পুলিশের খাঁকি পোশাকে একজন এসেছিলেন। বাকি তিনজন ছিলেন সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাকে। অভিযুক্তদের সামনে আনলে তিনি চিনিয়ে দিতে পারবেন। সেকথা বলার পরেই পুলিশের তরফ থেকে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করতে স্কেচ তৈরি করা হয়নি। কেন এই গাফিলতি তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ভাইরাল অডিও নিয়েও উদাসীনতা
শুক্রবার গভীর রাতে আনিসের বাবা আমতা থানায় ফোন করেছিলেন। ফোনের সেই অডিও ভাইরাল। সেই অডিওতে মৃত্যুর কথা জানানোর পরেই অপরপ্রান্তে থাকা পুলিশকর্মীকে কার্যত নির্লিপ্ত থাকতে শোনা গিয়েছে। যেখানে আনিস খানের বাবা নিজে বলছেন, সেই অডিও তাঁরই, তাহলে কেন পুলিশ এব্যাপারে প্রথমেই তদন্ত করল না, তাহলে কি পুলিশের মধ্যেই গলদ, প্রশ্ন করছেন স্থানীয়রা।
কেন প্রথমেই থানার পুলিশদের মোবাইল টাওয়ার পরীক্ষা করা হল না
মৃত্যুর তিনদিনের শেষে দিয়ে তদন্ত শুরু করতে গিয়ে সিটের আধিকারিকরা থানায় গিয়ে পুলিশকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। সেই রাতে কে কোথায় ডিউটিতে ছিলেন, তা জানার চেষ্টা করলেন। কেন প্রথমেই থানার পুলিশ কর্মীদের মোবাইল টাওয়ার পরীক্ষা করার কথা বললেন না হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার সৌম্য রায়।
আনিসের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার উল্লেখ পুলিশের
শুক্রবার গভীর রাতে ঘটনার পরে একদিন বাদ গিয়ে হাওড়া গ্রামীণের পুলিশ সুপার সৌম্য রায় সাংবাদিক সম্মেলন করে বললেন বাগনান এবং আমতা থানায় আনিসের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকার কথা। আনিসের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। কেন আনিসের পুরনো মামলা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি প্রশ্ন পরিবারের এবং স্থানীয়দের একটা বড় অংশের। আর আনিসের বিরুদ্ধে যা মামলা রয়েছে তার সবই পুলিশের সাজানো বলেও অভিযোগ তাঁদের। কেন আনিসের বিরুদ্ধে মামলার কথা তোলা হল, পুলিশ আধিকারিকের এই চেষ্টা কি আনিসকে অপরাধী প্রমাণের জন্য, সেই প্রশ্নও করেছেন তাঁরা।
কেন ঘটনাস্থল ঘিরল না পুলিশ
আনিসের পরিবারের অভিযোগ তিনতলার ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। আনিস যে জায়গায় পড়েছিল, কেন সেই জায়গা ঘেরার জন্য আমতা থানার তরফে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হল না। সেই জায়গায় থেকে তো অন্য কোনও প্রমাণও পরে মিলতে পারত, পরে মোবাইল পাওয়ার মতো। পরে বাড়িতে শয়ে শয়ে লোক গিয়েছে উবে গিয়েছে যাবতীয় প্রমাণ। এমনটাই অভিযোগ পরিবারের। কেন পরতে পরতে গাফিলতি পুলিশের, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
Recommended Video