খুনের হুমকি আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসকের, ভাইরাল ভিডিও-তে চাঞ্চল্য
রীতিমতো চোখ-রাঙানি দিয়েই বন্দিকে একজন জেলাশাসক বলছেন, 'আধ ঘণ্টার মধ্যে তোমাকে মধ্যে থানার ঢোকাতে পারি, তাহলে তোমায় বাড়িতে গিয়ে মেরে ফেলতে পারি'!
জেলায় প্রশাসনের শীর্ষকর্তা তিনি। কিন্তু তাই বলেএতবড় হুমকি। রীতিমতো চোখ-রাঙানি দিয়েই বন্দিকে একজন জেলাশাসক বলছেন, 'আধ ঘণ্টার মধ্যে তোমাকে যদি থানার মধ্যে ঢোকাতে পারি, তাহলে বাড়িতে গিয়ে তোমায় মেরেও ফেলতে পারব'! জেলাশাসকের এই আপত্তিকর আচরণের ভিডিও এখন ভাইরাল হয়েছে নেট দুনিয়ায়। ঘটনাটি আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটায়। ভিডিও-টিতে দেখা গিয়েছে জেলাশাসক নিখিল নির্মল এবং তাঁর স্ত্রী নন্দিনী কৃষ্ণণ এক যুবককে নানা ধরনের হুঁশিয়ারি ও হুমকি দিতে দিতে বেধড়ক মারধর করছেন। সামনে পুলিশ থাকলেও তারা কেউই সেই যুবককে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন না। এমনকী, আরও এক মহিলাকেও সেই ভিডিও-তে দেখা গিয়েছে। তিনিও নিগৃহীত যুবককে উদ্দেশ্য করে নানা ধরনের ধমকানি দিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে এই ঘটনাটি ঘটে আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা থানায়। স্থানীয় সূত্রে খবর ফালাকাটা থানা বিনোদ সরকারকে নামে এক যুবককে সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীল মন্তব্যের জন্য আটক করে। কিন্তু, কি সেই মন্তব্য তার কোনও স্ক্রিন শট পাওয়া যায়নি। বিনোদের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব ছিল আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মল-এর স্ত্রী নন্দিনী কৃষ্ণণের। ফালাকাটার স্থানীয় এক সূত্রে দাবি, বিনোদ সম্প্রতি নন্দিনীকে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি গ্রুপে অ্য়াড করেন। কিন্তু, বিনোদ সেখানে জেলাশাসক ও তাঁর স্ত্রী-কে নিয়ে কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করেন। নন্দিনীর অভিযোগ তা অশ্লীল।
জেলাশাসকের অভিযোগের ভিত্তিতে ফালাকাটা থানা বিনোদ সরকারকে সাইবার ক্রাইমে গ্রেফতারও করে। বিনোদ-কে থানায় আনার খবর পেয়ে গিয়েছিলেন জেলাশাসক নিখিল নির্মল এবং তাঁর স্ত্রী নন্দিনী। অভিযোগ, ফালাকাট থানায় আইসি-র রুমে ঢুকেই অভিযুক্ত বিনোদের উপরে চড়াও হন জেলাশাসক এবং তাঁর স্ত্রী।
জেলায় তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কোনও কথা বলার সাহস দেখায় না বলে বিনোদকে শাসাতেও দেখা যায় জেলাশাসক নিখিল নির্মল-কে। সেই সঙ্গে সপাটে থাপ্পড় কষাতে দেখা যায় তাঁকে। মোবাইলে একটি মেসেজ বের করে বিনোদকে দেখাতে দেখাতে মারধর করেন নিখিল নির্মল-এর স্ত্রী নন্দিনী কৃষ্ণণ। গোটা ঘটনাই ঘটে ফালাকাটার থানার আইসি সৌম্যজিৎ রায়ে-এর ঘরেই। সৌম্যজিৎ রায়-কে ঘটনার সময় চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। মাঝে মাঝে তিনিও বিনোদকে কিছু কথা বলছিলেন। কিন্তু, সে সব কথার মধ্যে কোনও হুমকি বা শাসানি না থাকলেও একজন পুলিশ আধিকারিক হিসাবে তিনি বিনোদকে প্রথমে মারমুখী জেলাশাসক ও তাঁর স্ত্রী-র হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেননি। উল্টে বিনোদকে দেখে মনে হচ্ছিল ফাঁদে পড়ে যাওয়া এক বন্দি। যাকে নিয়ে এখন লোফালুফি খেলছেন পুলিশ ও প্রশাসনের দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা।
অনেকেরই যুক্তি, অপরাধ করলে তার জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুবিধা রয়েছে। আর একজন জেলাশাসক ও তাঁর স্ত্রী - যাঁরা শীর্ষপ্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাঁরা এবং ফালাকাটা থানার আইসি সৌম্যজিৎ রায় আইনকে নিজেদের হাতে কেন তুলে নিলেন? আইনের শাসনকে প্রতিষ্ঠা করা যাদের আশু কর্তব্য বলে ধরা হয় তাঁরা কেন এমন মস্তানের মতো আচরণ করবেন এবং অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলবেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকী, জেলাশাসক নিখিল নির্মল একটা সময় বিনোদকে হুমকি দিয়ে বলেন, 'আধ ঘণ্টার মধ্যে তোমাকে যদি থানার মধ্যে ঢোকাতে পারি, তাহলে তোমায় বাড়িতে গিয়ে মেরেও ফেলতে পারি।' আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে হঠাত করে একজন জেলাশাসক এমন আলটপকা কথা বলতে যাবেন?
এদিকে, এই ঘটনার পর নিখিল নির্মল-কে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। নবান্নেও এই ঘটনা নিয়ে খোঁজ-খবর করা হচ্ছে। যদিও গোটা ঘটনাই অস্বীকার করেছেন জেলাশাসক নিখিল নির্মল। জেলাশাসক স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে নন্দিনীও কেন হুমকি ও মারধরে সামিল হলেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জেলাশাসক নিখিল নির্মলকে এমন কথাও বলতে দেখা যায়- 'আমার জেলাতে আমার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলবে না।' তাঁর স্ত্রী নন্দিনী আবার তাঁদের সঙ্গে থাকা লোকজনকে গাড়ি থেকে লাঠি আনতে বলেন। এই ঘটনায় আরও এক মহিলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সায়নী সরকার নামে ওই মহিলা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালান এবং জেলাশাসক ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলেও জানা গিয়েছে। সায়নীও বিনোদকে নানা হুমকি দেন। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই শারীরিক নিগ্রহকে সমর্থন করেনি। সকলেরই যুক্তি, বিনোদ কী মন্তব্য করেছে তা জানা যায়নি। ধরা যাচ্ছে তিনি যা করেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য, কিন্তু একজন জেলাশাসক এবং তাঁর স্ত্রী ক্ষমতা ও প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে যেভাবে বিনোদের উপর চড়াও হয়েছেন তা সমর্থনযোগ্য নয়। এটা পুরোপুরি ক্ষমতার অপব্যবহার। প্রশাসনের একজন দায়িত্বপূর্ণ আধিকারিকের এমন আচরণ স্বাভাবিকভাবেই সমাজের বুকে হিংস্রতার জন্ম দেবে বলেই মনে করছেন এইসব মানবাধিকারকর্মী।