বিরোধীদের হাতিয়ার নাকি সত্যিই কিং-মেকার! বাংলায় এখন ট্রেন্ডিং আব্বাস
বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল-বিজেপি লড়াই তো ক্লিশে। কিন্তু এবারের বিধানসভা নির্বাচনে রাজনীতির মঞ্চে লাইমলাইট কেড়ে নিচ্ছেন এক পীরজাদা। মুখ কিংবা নাম অপরিচিত নয়।
বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল-বিজেপি লড়াই তো ক্লিশে। কিন্তু এবারের বিধানসভা নির্বাচনে রাজনীতির মঞ্চে লাইমলাইট কেড়ে নিচ্ছেন এক পীরজাদা। মুখ কিংবা নাম অপরিচিত নয়।
তবে রাজনীতির মেনস্ট্রিম লড়াইতে তাঁর এমন উত্থান চমকপ্রদ তো বটেই। তিনি কী ভবিষ্যতের 'কিং'? প্রশ্ন এটা নয়। মসনদে কে বসবে সেটাই নাকি স্থির করবেন এই পীরজাদা। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করতে কে কোন হাত ধরবে
মানুষের জন্য কাজ! সেটা বোধ হয় মিথ। ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করতে কে কোন হাত ধরবে, সেটাই বোধ হয় মূল উপজীব্য। সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা যতটা উদাসীন থাকার চেষ্টা করুন না কেন, বাংলার রাজনীতিতে ওই ৩০ শতাংশ ভোটই 'কিং মেকার', সেটা মেনে নেয় রাজনৈতিক মহলের একাংশ। সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ির মাঝেই জেনে বুঝে কার্যত সেই সাম্প্রদায়িকতাকে ভর করেই এগোচ্ছে বাংলার 'সংযুক্ত মোর্চা'। এমনটাই অন্তত মত ওয়াকিবহাল মহলের। দলের নামে 'সেকুলার' শব্দটা লুকিয়ে থাকলেই যে নিরপেক্ষতার সংজ্ঞার সঙ্গে মিলে যাবে এমনটা নয়। ভাইরাল বক্তৃতা গুলো কি নেট দুনিয়া থেকে মুছে দিতে পারেন আব্বাস?
আব্বাসের পরিচিত কন্ঠস্বর
ব্রিগেডের মঞ্চে নাকি তিনিই নায়ক। সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা সে দিনের ছবিতে দেখা গিয়েছে কীভাবে তিনি মঞ্চে উঠতেই করতালির ঝড় ফিকে করে দিয়েছে বর্ষীয়ান নেতাদের উপস্থিতি। আব্বাসের ক্যারিশ্মা নিয়ে যখন কথা হচ্ছে তখন ইন্টারনেটের সৌজন্যে পুরনো বক্তব্য গুলো ভুলতে দিচ্ছে না তাঁর চেনা ইমেজ। তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেত্রী নুসরত জাহানকে দেহ ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, গাছে বেঁধে মারা উচিৎ তাঁকে। মহম্মদকে অপমান করলে তাঁর বেঁচে থাকাই উচিৎ নয়। এমন মন্তব্যও করেছিলেন। কলকাতার বিদায়ী মেয়র তথা পুর-প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমকেও কু-কথা বলতে ছাড়েননি তিনি। হিন্দু ধর্মের পুজোয় সামিল হওয়ার জন্যর ফিরহাদকে কাফির, বেইমান, গদ্দার বলতেও শোনা গিয়েছে আব্বাসের মুখে। সেই লোকটা কি সত্যিই রাতারাতি 'সেকুলার' হয়ে গেল!
বিরোধীদের দাবি, আদতে সেকুলার নয় বরং নিজেদের সেকুলার ইমেজটাকেই তছনছ করে দিচ্ছে বাম-কংগ্রেস।
বিজেপির অস্ত্র!
তৃণমূল হোক কিংবা বাম কংগ্রেস, বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে সাম্প্রদায়িক শব্দটা ব্যবহার করেছে সব দলই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদাহারণ টেনে বিজেপিকে হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী হিসাবে বর্ননা করে এসেছে সব দল। এবার সেই গেরুয়া শিবিরের হাতেই কার্যত অস্ত্র তুলে দিয়েছে এই নবীন রাজনীতিকের উত্থান। স্বাভাবিকভাবেই আব্বাসের প্রসঙ্গ টেনে ব্যাপক প্রচার শুরু করেছে বঙ্গ বিজেপি। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে মানূষের কাছে। তাঁদের উদাহারণে উঠে আসছে জ্যোতি বসুর নামও।
জ্যোতি বসু ও মুসলিম লীগ
বামেদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকেও সামনে নিয়ে আসছে বঙ্গ বিজেপি। মুসলিম লীগের বামেদের সখ্যতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে চালাচ্ছে বিরোধী প্রচার। প্রয়াত বামনেতার সঙ্গে মুসলিম লিগ নেতা হাসান শাহিদের একটি ছবি রয়েছে। আর এই হাসান শাহিদই ১৯৪৬ এ 'ক্যালকাটা-রায়েটে'র অন্যতম অভিযুক্ত। ২৮ এর ব্রিগেডে বাম-কংগ্রেস নেতাঁদের সঙ্গে আব্বাসের ছবির পাশে জ্যোতি বসুর এই ছবি লাগিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে চলছে প্রচার। এমনকি, বাম মনস্কো বহু বাঙালি সিপিএমের এই পদক্ষেপ ভালো চোখে দেখছে না। সোশ্যাল মিডিয়ার কমেন্ট বক্সে অন্তত এমনই আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।
কি বলছে প্রতিপক্ষ!
তৃণমূলের বিধায়ক তথা বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে আউটলুককে জানিয়েছেন যে, বাম কিংবা কংগ্রেসের সঙ্গে মতাদর্শের যতই ফারাক থাকুক তিনি এতদিন পর্যন্ত গর্ব করে বলতেন, ওই দুল দল কখনই সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে হাত মেলাবে না। নিরপেক্ষতার প্রতি তাদের দায়বব্ধতা নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু এই জোট তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ধারণা শেষ হয়ে গেল বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। অন্যদিকে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, পশ্চিমবঙ্গকে কার্যত ধংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এই জোট। তাঁর কথায় সেদিনের ব্রিগেড থেকে এই বার্তা স্পষ্ট যে, অসহায় অনবস্থায় সাম্প্রদাইয়িক শক্তির কাছে কার্যত মাথা নত করেছে বাম কংগ্রেস, ঠিক যেমন দেশ ভাগের সময় দুটি দল করেছিল।