বাংলায় বিজেপিকে রুখতে মমতার হাত শক্ত করার ডাক অখিলেশের
বাংলায় বিজেপিকে রুখতে মমতার হাত শক্ত করার ডাক অখিলেশের
ভোটের আগে বঙ্গ রাজনীতিতে নয়া মোড়! বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে চায় সমাজবাদী পার্টি। শুধু লড়াই করাই নয়, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে চায় সপা প্রধান অখিলেশ যাদব। এই মর্মে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন অখিলেশ যাদব। যদিও এখনও তৃণমূলের তরফে জোটের বিষয়ে কিছুই মন্তব্য করা হয়নি। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভাঙার পর থেকে এককভাবেই বঙ্গ রাজনীতিতে লড়াইয়ে বিশ্বাসী তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকি, তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্যেও এককভাবে লড়াইয়ের কথা উঠে এসেছে। তবে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে তৃণমূল জোট বাঁধে কিনা সেটাই এখন দেখার!
একাধিক আসন ছাড়ার প্রস্তাব
বাংলার রাজনীতিতে নজর অখিলেশের। 'বিজেপি হিংসা ছড়িয়ে নির্বাচনে জিততে চাইছে। কিন্তু তা হতে দেওয়া যায় না। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা সমর্থন করব।' আগেই এমন মন্তব্য করেছিলেন সপা প্রধান। কিন্তু সরাসরি জোটের প্রস্তাব দেওয়া হয়নি সপা প্রধানের তরফে। এবার সরাসরি জোটের প্রস্তাব দিয়ে মমতাকে চিঠি অখিলেশের। চিঠিতে তিনি লেখেন, বাংলায় বিধানসভা ভোটে লড়তে আগ্রহী সমাজবাদী পার্টি। জোট বেঁধে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রস্তুত তাঁরা। কিন্তু এক্ষেত্রে তৃণমূল নেত্রীর কাছে অখিলেশের প্রস্তাব বেশ কয়েকটি আসন। অর্থাৎ বেশ কয়েকটি আসন সপাকে ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর তা দেওয়া হলে হাতেহাতে মিলিয়েই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁরা প্রস্তুত বলে নেত্রীকে দেওয়া চিঠিতে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অখিলেশ। প্রাথমিক ভাবে অখিলেশ চিঠিতে ১০ থেকে ১২টি বিধানসভা আসন তাঁদের ছাড়ার কথা বললেও, প্রয়োজনে আলোচনার ভিত্তিতে আসন সংখ্যা আরও কমানো হতে পারে বলেও বার্তা সমাজবাদী পার্টির তরফে। তবে জোট না হলে কি হবে সেই রাস্তাও খুলে রেখেছেন অখিলেশ।
জোট না হলে কি হতে পারে?
একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জোটের প্রস্তাব দিয়ে চিঠি দিলেও অন্যদিকে অন্য রাস্তাও খুলে রেখেছেন অখিলেশ। তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূল জোটে যদি আগ্রহ না দেখায় তাহলে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে একাই লড়বে সমাজবাদী পার্টি। সেক্ষেত্রে একাধিক আসনে আলাদা করেই সপা প্রার্থী ঘোষণা করবে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে। যদিও এখনও প্রত্যুত্তরে অখিলেশকে কিছু জানানো হয়নি তৃণমূলের তরফে।
বাংলার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক সমাজবাদী পার্টির!
বামেদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের জোট ছিল সমাজবাদী পার্টির। পশ্চিমবঙ্গ সোস্যালিস্ট পার্টি এই নামে বামদের সঙ্গে শরিক ছিল তাঁরা। বাম মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন তাঁদের বিধায়ক। দীর্ঘদিন মৎস্য দফতরের মন্ত্রী ছিলেন সপা নেতা কিরণময় নন্দ। ফলে একটা শক্ত মাটি তাঁদের বাংলায় দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। যদিও ২০১১ সালের পর বামেদের সঙ্গে জোট ভেঙ্গে যায় সপার। কিন্তু ২০১১ সালেও একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সপা। একটা মাত্র আসনে জয়ও পায়। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা আসনে জয় পায় চাঁদ মোহম্মদ। যদিও পরবর্তীকালে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। এরপরেও ২০১৬ বিধানসভা ভোটেও তাঁরা প্রার্থী দেয়। একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দেয় সমাজবাদী পার্টি। যদিও পরিবর্তনের হাওয়াতে কোনও আসনে জয় আসেনি। এবার ফের একবার বাংলায় নজর অখিলেশের। তবে তৃণমূলের সঙ্গে জোট না হলে ভোট কাটাকাটি হতে পারে বলে আশঙ্কা।
ভোটের কাটাকাটির অংক!
২০২১-এর নির্বাচন যত এগিয়েছে, ততই তৃণমূল ভাঙিয়ে আরও শক্তি সঞ্চার করেছে বিজেপি। এই পরিস্থিতি ফের ২০১৯-র সমীকরণ ফিরে আসছে বঙ্গে। শিবসেনা এর আগেই মমতাকে সাহায্য করতে এবং বিজেপির 'হিন্দু ভোটে' থাবা বসাতে বঙ্গ নির্বাচনে নামার ঘোষণা করেছে শিবসেনা। বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থী তাঁরা দেবে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপির আদিবাসী ভোটেও থাবা বসাতে রাজ্যে আসছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা। বাংলার জঙ্গলমহল অঞ্চলে কয়েক দফায় বৈঠকও সেরেছে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা। তাতে যদিও ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেত্রীর। নেত্রীর কথায় ভোট কাটাকাটির অংকে বিজেপিকে সুবিধা করে দিচ্ছে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা। অন্যদিকে, বাংলায় বেশ কয়েকটি প্রার্থী দেবে মিম অর্থাৎ আসাউদ্দিনের দল। সেখানে একটা মুসলিম ভোট কাটার সম্ভাবনা রয়েছে। যা কিনা তৃণমূলের দখলেই ছিল। এক্ষেত্রে আরও একটা সমীকরণ কাজ করছে। ইতিমধ্যে নয়া দল ঘোষণা করেছেন পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। যদিও তাঁরা বামে-কংগ্রেস জোটের পক্ষেই। তবুই ভোট অংকে শাসকের উপর চাপ বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এর মধ্যে বাংলার রাজনীতিতে পাকাপাকিভাবে প্রবেশ কিরতে চায় উত্তরপ্রদেশের এই দল।
২০১৯ এর সমীকরণ কি ছিল?
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী সব আঞ্চলিক দল হাত মিলিয়েছিল। ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে দেশের বহু দলকে ডেকে এনে মোদী বিরোধিতার রব তুলেছিলেন মমতা। তবে নিজের রাজ্যেই বিজেপির কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল মমতার তৃণমূলকে। যদিও লোকসভার নিরিখে বিধানসভা ভোটের তত্ত্ব কি খাটবে? প্রশ্নটা থেকেই যাবে।
ধর্মের ভিত্তিতে জাত-পাতের বিভাজন করে বিজেপি
মমতাকে দেওয়া চিঠিতে বিজেপির বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সপা প্রধান অখিলেশ যাদব। তিনি জানিয়েছেন, ধর্মের ভিত্তিতে জাত-পাতের বিভাজন ঘটিয়ে ভোটের মেরুকরণ করে বিজেপি। আর সেই পন্থাতেই বিজেপি উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতায় এসেছে। আগামিদিনে সভাবেই বিজেপি বাংলায় আসার চেষ্টা করবে বলে মনে করেন সপা। এছাড়াও উন্নয়নের নামে মিথ্যা কথা, এবং ঘৃণার রাজনীতি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করবে। র তা আটকাতে না পারলে বিজেপিকে রোখা সম্ভব নয় বলেই দাবি অখিলেশের। যদিও এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও উত্তর যায়নি তৃণমূল সুপ্রিমোর তরফে।
মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক কি তৃণমূলের সঙ্গেই, একুশের নির্বাচনে বড় পরীক্ষায় নামছেন মমতা