তাপস পালের প্ররোচনার পর হিংসা ছড়াল নদীয়ার গ্রামে
নাকাশিপাড়ার চৌমুহা ও তেঘড়ি এবং তেহট্টের গোপীনাথপুরে তাপস পাল সেই দিন কী বলেছিলেন, তা মোটামুটি সবার এখন জানা। কিন্তু তিনি গত ১৪ জুন হিংসার প্ররোচনা দেওয়ার পর কী হয়েছিল, তা এ বার সামনে এল।
নাকাশিপাড়ার দোগাছিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত তেঘড়ি গ্রাম। এখানে থাকেন রফিকুল শেখ। গত পঞ্চায়েত ভোটে তিনি ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী। কিন্তু দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে কোণঠাসা রফিকুল শেখ এ বারের লোকসভা ভোটের আগে যোগ দেন সিপিএমে। লোকসভা ভোট চলার সময় তেঘড়ি গ্রামে সিপিএম-তৃণমূল কংগ্রেস সংঘর্ষ বাধে। রফিকুল শেখ-সহ ১৫ জন সিপিএম কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জমা পড়ে। পুলিশি ধরপাকড় এড়াতে তাঁরা গা-ঢাকা দেন। যদিও এর পর কয়েকজনকে পাকড়াও করতে সক্ষম হয় পুলিশ। কিন্তু রফিকুল এখনও আত্মগোপন করে রয়েছেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ জুন তেঘড়ি গ্রামে যান তাপস পাল। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় বিধায়ক কল্লোল খান। 'রংবাজ' তাপস পাল বলেন, "আমি বলে যাচ্ছি, কোনও সিপিএমের বাচ্চা এখানে থাকবে না। আপনারা কেউ ভয় পাবেন না। আপনারা একজোট থাকুন। নিজেদের কাছে কুড়ুল, ভোজালি রাখুন। আপনারা মারুন। তার পর আপনাদের কে জেলে নিয়ে যায়, আমি দেখব। ওই রফিকুল শেখের বাড়ি যদি ভেঙে দিতে পারেন, বুঝব আপনাদের দম আছে। আমি বলছি, ওর বাড়ি ভেঙে দিন। কুড়ুল নেই? কুড়ুল দিয়ে মেরে বাড়ি ভেঙে দিন।"
"কোনও সিপিএমের বাচ্চা এখানে থাকবে না। ওই রফিকুল শেখের বাড়ি ভেঙে দিন।"
এর পরই ১৫ জুন অন্তত ৩৫-৪০ জন লোক চড়াও হয় রফিকুল শেখের বাড়িতে। অভিযোগ, তাদের হাতে ছিল শাবল, গাঁইতি, কুড়ুল আর মাথায় তেরঙা ফেট্টি বাঁধা। এরা তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী বলে দাবি স্থানীয় মানুষের। রফিকুল শেখের অশীতিপর বাবা নুর মহম্মদ শেখ বলেন, "ওরা বলছিল, সাংসদ সাহেব বলে গিয়েছেন। তোদের সবগুলোকে এ বার পুঁতে ফেলব। দেখি কে বাঁচায়? এর পরই জোর করে ঘরে ঢুকে পড়ে। লাথি মেরে জিনিসপত্তর ফেলে দেয়। বাড়ির টালি ভেঙে দেয়। হুমকি দিয়েছে, পুলিশে যদি অভিযোগ করি তা হলে আমার নাতনিকে তুলে নিয়ে যাবে।"
এই গ্রামেরই আশাবানু বিবি, রাজিয়া বিবিরা বলেছেন, "রফিকুল শেখের বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর পর ওরা আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়। দেখুন, জলের কলটাও ভেঙে দিয়েছে। আমরা বাধা দিতে গেলে আমাদের ধর্ষণ করার হুমকি দেয়।"
যদিও এ ঘটনায় তাঁরা জড়িত নন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ফিরদৌস মণ্ডল। তিনি বলেন, "গ্রামের কিছু সিপিএম সমর্থক পুলিশ ফাঁড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছিল। তাই পুলিশ এসে ওদের বাড়ি ভেঙে দিয়েছে।" কিন্তু নদীয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অজয়প্রসাদ বলেন, "পুলিশ কেন লোকের বাড়ি ভাঙতে যাবে? আমাদের কাছে এ ব্যাপারে খবর নেই।"
এ দিকে, তেঘড়ি গ্রামে তাপস পালের প্ররোচনামূলক ভাষণের ফুটেজ যিনি সংবাদমাধ্যমকে দিয়েছেন, দোগাছিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সেই উপপ্রধান আবদুল মোল্লা বলেন, "দেশের স্বার্থে এটা মিডিয়াকে দিয়েছি। আরও কেউ চাইলে তাকেও দেব। আমি চাই, দেশের লোক জানুক, যারা এই রাজ্যে ক্ষমতায়, তাদের দলের লোকেরা কী ভাষায় কথা বলে!" তাঁর আরও বক্তব্য, "টাকার বিনিময়ে ফুটেজ দিইনি। একটা পয়সাও নিইনি।"
সিপিএমের নদীয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেছেন, "প্ররোচনা ছড়ালে তার পরিণতি কী হতে পারে, তা তেঘড়ির ঘটনাতেই স্পষ্ট। এর পরও মুখ্যমন্ত্রী কথা বলছেন তাপস পালের সমর্থনে। এটা দুঃখজনক।"