অচেনা, বহিরাগত প্রার্থী কেন, ক্ষোভ ধূমায়িত তৃণমূলের অন্দরেই
ব্যাপারটা কী রকম?
শুরু করা যাক উত্তরবঙ্গ থেকে। এখানে আলিপুরদুয়ার আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন দশরথ তিরকে। কে তিনি? বলা চলে, কয়েক মাস আগেও তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সংস্রবই ছিল না। আরএসপি করা লোক। বাম জমানায় তিনি মন্ত্রীও হয়েছিলেন। উত্তরবঙ্গে এক সময় বাম-বিরোধীদের ওপর নিপীড়নও চালিয়েছিলেন বিস্তর। সেই দশরথবাবু হঠাৎ 'দিদি'-র নয়নমণি হয়ে উঠলেন আর টিকিটও পেয়ে গেলেন।
মালদা দক্ষিণ থেকে যিনি প্রার্থী হয়েছেন, সেই মোয়াজ্জেম হোসেন কোনও দিন প্রত্যক্ষ রাজনীতিই করেননি। তিনি কলকাতার একটি হাসপাতালে ডাক্তারি করেন। আবার মালদহ উত্তর আসনে টিকিট পেয়েছেন 'ভূমি' ব্যান্ডের সৌমিত্র রায়। মালদহের মতো জটিল সমীকরণযুক্ত জেলায় আদ্যন্ত অরাজনীতিক লোক কী করবেন, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের মুখে। এখানে তৃণমূলের সৎ কর্মীরা যাঁরা এতদিন কংগ্রেস, সিপিএমের হাতে মার খেলেন, তাদের কী মূল্য রইল? প্রশ্ন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল যুবনেতার।
এতদিন তা হলে কী করলাম, প্রশ্ন কর্মীদের
এবার আসা যাক, বর্ধমান পূর্ব আসনে। এখানে অলোক দাশ প্রার্থী হবেন, এটা মোটামুটি সবাই ধরে নিয়েছিলেন। তালিকা বেরোতে দেখা গেল, টিকিট পেয়েছেন সুনীল মণ্ডল। ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে সুনীল মণ্ডল কিছুদিন আগে এসেছেন তৃণমূলে। ফলে রেগে কাঁই পুরনো তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। এঁদের একটা বড় অংশ ভোটের কাজে নিজেদের গুটিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।
ভাবা হয়েছিল, আসানসোলের মলয় ঘটক বা তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী কাউকে টিকিট দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই জায়গায় শিল্পাঞ্চল আসানসোলে 'উড়ে এসে জুড়ে বসলেন' বিতর্কিত দোলা সেন। ফলে মলয় ঘটক বা তাপসবাবু মুখে যাই বলুন, দোলা সেনের সঙ্গে কতটা সহযোগিতা করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। আবার তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-তে দোলা সেনের অনুগামীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই আছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামীরাও। আসানসোলে শোভনবাবুর অনুগামীদের সংখ্যা যথেষ্টই। এঁদের থেকে নিশ্চিতভাবেই দোলা সেন কোনও সহযোগিতা পাবেন না।
ঝাড়গ্রাম থেকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে উমা সোরেনকে। অথচ তিনি কে, সেটা জানতে অন্তত ২৪ ঘণ্টা সময় লেগেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রদ্যোৎ ঘোষের। মন্ত্রী তথা স্থানীয় মানুষ সুকুমার হাঁসদাও পরিচিত নন উমা সোরেনের সঙ্গে।
আবার বাঁকুড়ায় মুনমুন সেন, ঘাটালে দেব কিংবা মেদিনীপুর থেকে সন্ধ্যা রায় দাঁড়াচ্ছেন শুনে খুশি নন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। কারণ বাঁকুড়া, মেদিনীপুরে এক সময় বিরোধীদের ওপর সিপিএম প্রচণ্ড দমন-পীড়ন চালিয়েছিল বলে অভিযোগ। এই দুই জেলায় খুনোখুনি তো লেগেই থাকত। দলের স্থানীয় কর্মীদের প্রশ্ন, দুর্দিনে মুনমুন সেন, দেব, সন্ধ্যা রায় এঁরা কোথায় ছিলেন? এরা কি সিপিএমের হাতে কখনও মার খেয়েছেন দলের স্বার্থে? কতটুকুই বা জানেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ইতিহাস-ভূগোল-রাজনীতি?
এখন এই ধিকিধিকি ক্ষোভ ইভিএমে কতটা প্রভাবে ফেলে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে সেই ১৬ মে পর্যন্ত।