কুলগামের ঘটনার পর কাশ্মীর থেকে ১২২ জন শ্রমিককে ফেরাতে উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার
কুলগামে জঙ্গিদের হাতে বাংলার পাঁচ শ্রমিকের খুনের পর কাশ্মীরে এ রাজ্যের কোনও শ্রমিক কাজ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাশ্মীরে কর্মরত এ রাজ্যের ১২২ জন অভিবাসী শ্রমিককে বাড়ি ফেরানোর উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার। কাশ্মীরের প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারী শ্রমিকদের চিহ্নিত করে তাঁদের কাছে রেল টিকিট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে তাঁরা নিরাপদে নিজেদের পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ব্যক্তিগত স্তরে গোটা বিষয়টির ওপর নজরদারি রাখছেন। এছাড়া রাজ্য সরকারের দুই আধিকারিক শ্রমিকদের ফেরা নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু–কাশ্মীরের সরকারের সঙ্গে অনবরত যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
কাশ্মীরে শ্রমিক খুন নিয়ে বিজেপির অবস্থান প্রসঙ্গে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'যদি প্রত্যেকের অধিকার থাকে যে দেশের যে কোনও প্রান্তে গিয়ে কাজ করার তাহলে কেন বাংলার দরিদ্র নিরীহ শ্রমিকদের খুন করা হল।’ তিনি দাবি করেছেন, 'দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকে যেমন সবাই এসে এখানে কাজ করে এবং শান্তিভাবে বসবাস করে তেমনি বাঙালিদেরও অধিকার রয়েছে যে কোনও জায়গায় গিয়ে কাজ করার।’ কাশ্মীর থেকে যে সব শ্রমিকরা ফিরে আসছেন তাঁরা প্রধানত দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ এবং মালদার বাসিন্দা। দু’জন সরকারি শীর্ষ আধিকারিকের মতে, যাঁরা ফিরে আসছেন তাঁরা সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে রয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।
দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগামে মুর্শিদাবাদের পাঁচ শ্রমিক জঙ্গিদের হাতে খুন হওয়ার পরই বাংলার সব শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এক শ্রমিক আহত অবস্থায় ভর্তি রয়েছে শ্রীনগরের হাসপাতালে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রমিক খুনকে পূর্ব পরিকল্পিত বলেন এবং যথাযথ প্রমাণ ও তদন্তের দাবি করেছেন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপুরণ দেওয়া হবে। রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী আক্রান্তদের বাড়ি গিয়ে তাঁদের হাতে চেক তুলে দিয়ে আসবেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, তাড়াতাড়ি অর্থ উপার্জন করার জন্য ওই শ্রমিকরা গত চার বছর ধরে কাশ্মীরের আপেল বাগানে কাজ করছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ আলম বলেন, 'অতীতে কখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। সাধারণত ওই শ্রমিকরা কাশ্মীরে দু–তিনমাস কাজ করতেন তারপর বিনা বাধায় বাড়ি ফিরে আসতেন। এই ঘটনার পর অন্য শ্রমিকদের পরিবারও ভয় পেয়ে রয়েছে। তারা তাদের বাড়ির সদস্যকে রাজ্যের বাইরে আর কাজ করতে দিতে চাইছে না।’ আলম জানান, মুর্শিদাবাদের শ্রমিকরা উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, দক্ষিণ ভারত ও গুজরাটে কাজ করতে যান। কিন্তু এখন তাঁদের পরিবার চাইছে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসুক।