মমতার ভূমিকা দেখে সোনিয়া-রাহুল বিস্মিত, বিরোধী ঐক্য নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধলেন অধীর
মমতার ভূমিকা দেখে সোনিয়া-রাহুল বিস্মিত, বিরোধী ঐক্য নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধলেন অধীর
কংগ্রেসের নেতৃত্বে দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে একুশের ভোট মিতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগ নিয়েছিলেন সর্বাগ্রে। সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যাই সবার আগে বিরোধী ঐক্য গঠনকে শিকেয় তুলে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে শুরু করেছেন। জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকা দেখে বিস্মিত হয়েছেন সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী উভয়েই।
অভিষেককে ইডি-তলবের পরই বদলে গিয়েছে তৃণমূলের ভূমিকা
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন সম্প্রতি। তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রসের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়া হয়েছে বিজেপির। তাই কংগ্রেসের ঐক্যের হাত দূরে সরিয়ে বিজেপি বিরোধিতায় বিকল্প হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে তৃণমূল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইডি-তলবের পরই বদলে গিয়েছে তৃণমূলের ভূমিকা। তারপর থেকেই কংগ্রেস-বিরোধিতা শুরু করে বিরোধী ঐক্য গড়া জলাঞ্জলি দিয়েছে তৃণমূল।
বিশেষ কোনও কারণেই তৃণমূল এই নতুন খেলা শুরু করেছে
অধীর চৌধুরী বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী ঐক্য ভেঙে এখন কংগ্রেস বিরোধিতায় নেমেছে। আর তা করা হচ্ছে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই। বিশেষ কোনও কারণেই তৃণমূল এই নতুন খেলা শুরু করেছে। আর তাঁদের এই গোপন আঁতাত সবারই চোখে লাগছে। যাঁরা বিজেপি বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে চায় দেশে, তারা বুঝতে পারছে এই তৃণমূলের ভূমিকা কী! কেন তৃণমূল একলা চলার নীতি নিয়েছে তাও স্পষ্ট হয়ে উঠছে সকলের কাছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আলাদা করে স্নেহ করে গান্ধী পরিবার, তবু...
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথায় ক্ষোভ ও অভিমান দুই-ই ফুটে উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আলাদা করে স্নেহ করে গান্ধী পরিবার। তারপরও কংগ্রেসকে যেভাবে ভেঙে বিজেপির হাত শক্ত করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা দুর্ভাগ্যের। কোনও স্বার্থসিদ্ধি করা ছাড়া এমনটা হতে পারে না। কংগ্রেস যেখানে শক্তিশালী সেখানে তৃণমূল ইউনিট খুলে কংগ্রেসকে দুর্বল করছে, তাতে সুবিধা হচ্ছে সেই বিজেপিরই। এই শর্তেই হয়েছে উভয়ের গোপন আঁতাতে।
২০২৪ সাল পর্যন্ত এই কাজই করে যেতে হবে তৃণমূলকে, ব্যাখ্যা অধীরের
তৃণমূল কংগ্রেস গোপন আঁতাতের ফলেই বিজেপির সুবিধা করে দিচ্ছে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী কড়া বাক্যে তৃণমূলের সমালোচনা করে বলেন, যেখানে কংগ্রেস শক্তিশালী সেখানে গিয়ে ইউনিট খুলে সংগঠন বিস্তারের নামে কংগ্রেসকে ভাঙা এবং বিজেপির জয়ের রাস্তা পরিষ্কার করার পিছনে কী অভিষন্ধি থাকতে পারে, তাও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত এখন এই কাজই করে যেতে হবে তৃণমূলকে। তা না হলেই ইডি-সিবিআই লেলিয়ে দেওয়া হবে।
রাজ্যে রাজ্যে ইউনিট খুলে বিজেপির সুবিধা, না করলেই বিপদ
অধীরের কথায়, শর্ত হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠন বিস্তারের নামে ইউনিট খুলে বিজেপির সুবিধা করে দিতে হবে। তবেই রক্ষা। তা না হলেই বিপদের জাল বিছনো রয়েছে। হঠাৎ ত্রিপুরা ফেলে গোয়া নিয়ে পড়েছে তৃণমূল। মাস তিনেক পরে ভোট। এখন সেখানে সংগঠন গড়ে কংগ্রেসকে ভাঙান উদ্দেশ্য বিজেপির জয়ের পথ সুগম করা। সেটা একটা শিশুও বুঝবে। আর বিভিন্ন রাজ্যে ভোটের আগে ইউনিট খোলার অর্থ যে বিরোধী ভোট কাটা তাও বোঝা যাচ্ছে। আর ত্রিপুরা বিজেপির ভাঙন নিয়েও এখন সব চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। তাহলে কী খেলা চলছে তা স্পষ্ট রাজনৈতির মহলের কাছে।
কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট আর তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হিসেবটা একবার দেখুন
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করে কড়া ভাষায় অধীর চৌধুরী বলেন, তিনি মুখে বিজেপির বিরোধিতা করছেন, কাজে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছেন। সারা দেশে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট আর তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হিসেবটা একবার চোখ বুলিয়ে নিন। সারা দেশে মাত্র চার শতাংশ ভোট রয়েছে তৃণমূলের। সেই চার শতাংশ ভোট নিয়ে আপনি কংগ্রেসের সঙ্গে তুলনা টানছেন। হাস্যাস্পদ হয়ে উঠেছে কংগ্রেসের বিকল্প হয়ে ওঠার বিষয়টি।
জাতীয় রাজনীতিতে কোনও দলকেই পাশে পাবে না তৃণমূল, বলছেন অধীর
অধীরের কথায়, বিজেপি ও তৃণমূলের শর্ত হয়েছে- বাংলায় দিদি আর দিল্লিতে মোদী। তাঁর অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বরূপ সবাই জেনে গিয়েছে। উনি বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তাঁর দলের কর্মপরিকল্পনায়। যাঁরা বিজেপি বিরোধিতা চান, তাঁদের আর এই গোপন আঁতাত বুঝতে আর বাকি নেই। ফলে জাতীয় রাজনীতিতে কোনও দলকেই পাশে পাবে না তৃণমূল।
কংগ্রেসের কোনও উদ্যোগ নেই, তাই একলা চলো নীতি তৃণমূলের
তৃণমূল পাল্টা জবাব দিয়েছে অধীরের এই মনগড়া কথার। সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠন বিস্তারের অধিকার সমস্ত দলের রয়েছে। গত অগাস্টে দিল্লি সফরে গিয়ে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি বিরোধী সমস্ত দলকে এক ছাতার তলায় আনতে সোনিয়া গান্ধীর কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস নিজের ঘর সামলাতেই ব্যস্ত থেকেছে। এখন পর্যন্ত কংগ্রেসের কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। তাই তৃণমূল একলা চলো নীতি গ্রহণ করেছে বিজেপি বিরোধিতায়। তৃণমূলের পক্ষে অনন্তকাল অপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না!
বিরোধী ঐক্য গড়তে ছুটেছিলেন সোনিয়া-রাহুলের দ্বারে, তাহলে এখন কেন বেসুরো মমতা