অধীরই বড় ‘কাঁটা’ মমতার ‘হ্যাটট্রিকে’র পথে! কংগ্রেসের সিদ্ধান্তে ‘সমীকরণ’ কার্যত পাকা
অধীরই বড় ‘কাঁটা’ মমতার ‘হ্যাটট্রিকে’র পথে! কংগ্রেসের সিদ্ধান্তে ‘সমীকরণ’ পাকা
মুর্শিদাবাদের 'রবীন হুড' তিনি। তাঁকে বহরমপুরের বেতাজ বাদশাও বলে থাকেন অনেকে। সেই অধীর চৌধুরীই এবার হতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হ্যাটট্রিকের পথে বড় কাঁটা। মমতা বিজেপি-বিপদ এড়াতে সক্ষম হলেও অধীর-কাঁটা কী করে দূর করবে, তা নিয়েই এখন ঘোরতর সংশয় রয়েছে। বাংলায় একুশের নির্বাচনী লড়াই আরও কঠিন হল নয়া সমীকরণে।
তৃণমূলের পথ কঠিন করে দিয়েছেন অধীর
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা গান্ধী পরিবারের অনুগত অধীররঞ্জন চৌধুরী প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি নিযুক্ত হয়েছেন। এই নিয়োগ বিজেপির জন্য যেমন সুসংবাদ বয়ে এনেছে, তেমনই তৃণমূলের পথ কঠিন করে দিয়েছে। কারণ অধীর চৌধুরী হলেন একজন নেতা, যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কঠোর সমালোচক। এবং বাংলায় বামেদের সঙ্গে নির্বাচনী জোটের পক্ষে।
কংগ্রেসের অবস্থান হয়ে গেল তৃণমূল বিরোধী
প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হিসাবে অধীর চৌধুরী যে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই আক্রমণ শানাবেন, তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে নিশানা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এতদিন অধীর চৌধুরী কংগ্রেস নেতা তথা সাসংদ হিসেবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে এসেছেন, এবার কংগ্রেসের অবস্থানই হয়ে গেল তৃণমূল বিরোধিতা করা।
অধীরের এন্ট্রি সব হিসেব গুলিয়ে দিতে পারে
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপির বিরুদ্ধে ঝাঁঝ বাড়াবে। অধীরা চৌধুরী আসায় ফের কংগ্রেস সতেজ হতে পারে বলে আশাবাদী অনেকেই। এর অর্থ হ'ল বিজেপি-বিরোধী ভোট তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিজেপি বিরোধী ভোটকে একীকরণের কৌশল নিয়েছেন, তখন অধীরের এন্ট্রি সব হিসেব গুলিয়ে দিতে পারে।
বাম-কংগ্রেস জোটের পক্ষেই সওয়াল অধীরের
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে অধীর চৌধুরীই বামদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করেছিলেন। কংগ্রেস-বাম জোট নির্বাচনের আগে ঝড় তুললেও, নির্বাচনী ক্ষেত্রে খুব খারাপ ফল করেছিল। তা সত্ত্বেও আবারও বাম-কংগ্রেস জোট করে দু-পক্ষই ফায়দা তোলার চেষ্টা রয়েছে। এই জোট চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেই অধীর চৌধুরী।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্বে যখন অধীর!
সোমেন মিত্রের মৃত্যুর পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। বাংলায় দলীয় ইউনিটের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অধীর চৌধুরীকে বেছে নেয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। এই নির্বাচন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একটি বিশেষ ইঙ্গিত যে, কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কাজ করবে না। বরং বামেদের সঙ্গে পথ চলা কংগ্রেসের আরও দৃঢ়তা পাবে।
কংগ্রেস-তৃণমূলের মিত্রতা শত্রুতায় বদলে গিয়েছে!
তৃণমূল ও কংগ্রেস ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে লড়াই করেছিল জোট বেঁধে। তাদের মৈত্রীই ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল। ক্ষমতায় এনেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তারপর কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২ বছরের মধ্যেই জোট ভেঙে গিয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরপর কংগ্রেস ভাঙতেই বেশি তৎপর ছিলেন। তা উভয়ের মিত্রতাকে শত্রুতায় বদলে দিয়েছে।
পিছন থেকে ছুরিকাঘাত করেছিল তৃণমূল, তাই...
কংগ্রেসের অভিযোগ, "আমাদের মিত্র হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূল আমাদের বাংলা থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল। এটি আমাদের পিছন থেকে ছুরিকাঘাত করোর মতোই অপরাধ এবং আমাদের সঙ্গে যেভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, তারপর তৃণমূলের সঙ্গে আবার হাত মিলিয়ে চলা বা সেই দলের প্রধানের বিরুদ্ধে নরম হওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না।"
বাংলায় ক্ষমতায় ফেরা নিশ্চিত করতেই মমতার কৌশল!
বাংলায় বিজেপির উত্থান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন চ্যালেঞ্চের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করছে। বিজেপি বিরোধী ভোট একীকরণের কৌশল নিয়েছেন তিনি। তাঁর এই কৌশল শুধু বাংলায় নিজের ক্ষমতায় ফেরা নিশ্চিত করতেই, এমনটাই মনে করে বাংলার কংগ্রেস নেতৃত্ব।
সোনিয়া-মমতার পারস্পরিক শ্রদ্ধার ছবি, জল্পনা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি কংগ্রেস হাইকমান্ডকে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছিলেন। সম্প্রতি একটি বৈঠকে উভয়কে সৌহার্দ্র্যপূর্ণ রূপে দেখা দেয়। একে অপরের প্রতি শ্র্দ্ধাশীল ছিলেন তাঁরা। সেই ছবি এক মহাজল্পনার বাতাবরণ তৈরি করে এ রাজ্যে। ফের কংগ্রেস-তৃণমূল একসঙ্গে চলতে পারে, এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়। যদিও প্রবল মমতা-বিরোধী অধীরের প্রদেশের দায়িত্ব ফিরে আসা সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিয়েছে।
পুজোর আগে রাজ্যের কৃষকদের জন্য সুখবর, কী ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়