অধীরের বিজেপিতে যোগ নিয়ে জোর জল্পনা, কংগ্রেসের মমতা-সখ্যে চাপে ‘রবীন হুড’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রাক্তনমন্ত্রী হুমায়ুন কবীর কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে পা বাড়াতেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গেল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রাক্তনমন্ত্রী হুমায়ুন কবীর কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে পা বাড়াতেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গেল। তবে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কংগ্রেস হাইকমান্ডের সখ্যতার জেরে অধীর চৌধুরীকে বেছে নিতে হবে বিজেপিকেই? সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ফের।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই মুর্শিদাবাদ তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্বে থাকা পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী হুঙ্কার ছেড়েছিলেন নিজের গড়েই ব্রাত্য হয়ে পড়বেন অধীর চৌধুরী। তাঁকে বহরমপুর ছাড়া করবো। এমনই পরিস্থিতি তৈরি হবে যে, তাঁর শেষ আশ্রয় হবে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোণঠাসা হয়ে পড়েন অধীর চৌধুরী। মুর্শিদাবাদের মতো জায়গায় একটি মাত্র জেলা পরিষদ আসন দখল করতে সক্ষম হয়েছে অধীরের কংগ্রেস। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতেও তদ্রুপ অবস্থা।
এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরই লোকসভার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছাকাছি আসতে শুরু করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ও ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী। বিশেষ করে কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের পর উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মোদী বিরোধী জোট চিত্র সুষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে দেশে। কাছাকাছি আসছেন প্রদেশের পরস্পর বিরোধীরাও।
ফলস্বরূপ রাহুল গান্ধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জোটের রাস্তায় হাঁটলে প্রবল মমতা-বিরোধী অধীর চৌধুরীর পক্ষে তা মেনে নেওয়া সম্ভব হবে কি না, সেটা একটা বড় ব্যাপার। আবার বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলায় কংগ্রেসের অবস্থাও বিপন্ন। এই শক্তি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বাংলায় লড়াই করা কি সম্ভব হবে?
তার উপর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে জুনেই। তারপর কী হবে অধীর চৌধুরীর অবস্থা! এইসব জল্পনার মাঝেই পঞ্চায়েত ভোট শেষ হতেই অধীরের ডান হাত বলে পরিচিত হুমায়ুন কবীর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন। তাতে জল্পনা আরও বেড়েছে অধীরকে নিয়ে। তবে কি হুমায়ুনকে বিজেপিতে পাঠিয়েই নিজের পথ প্রশস্ত করতে চাইছেন অধীর? এই প্রশ্নও উঠে পড়েছে।
অধীর অবশ্য এই বিষয়ে স্পিকটি নট। মুকুল রায়ের বিজেপিতে যোগদানের পরও তাঁর তৃণমূল যোগদান নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। দিলীপ ঘোষ তাঁর জন্য দুয়ার খুলে রেখেছিলেন। সেসব অবশ্য সমূলে উৎখাত করে দেন অধীর চৌধুরী। এবার তিনি এখন পর্যন্ত চুপ। এখন দেখার তিনি কংগ্রেসেই দাঁত কামড়ে পড়ে থাকেন, নাকি মমতার বিরোধিতা করতে বিজেপির ছত্রছায়ায় আশ্রয় নেন।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, অধীর চৌধুরী লড়াইয়ের পথ থেকে পালিয়ে যেতে শেখেননি। তিলে তিলে যে গড় তৈরি করেছিলেন, তিনি মনে করেন এখন সেখানে তাঁর ভিত নড়ে যায়নি। হাইকমান্ড তাঁর উপর ভরসা রাখলে ফের মুর্শিদাবাদে তিনি কংগ্রেসে সুদিন ফিরিয়ে আনতে পারেন।
এই অবস্থায় প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির পদ হারাতে হলেও, তিনি মুর্শিদাবাদে ফের বিস্তার লাভের চেষ্টা করতে পারেন। তবে সেজন্য তাঁর নিরাপত্তা একটা বড় প্রশ্ন। আর তিনি যে নিরাপদ নন, তিনি যে যেকোনো মুহূর্তে খুন হতে পারেন, সে আশঙ্কাও ইতিমধ্যে করেছেন অধীর চৌধুরী। সব নিয়ে অধীর চৌধুরীকে নিয়ে রাজনৈতিক মহলও দোলাচলে।