প্রশান্ত কিশোরের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তিনিই কাঠগড়ায়! সরাসরি জবাব দিলেন অভিষেক
প্রশান্ত কিশোরের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তিনিই কাঠগড়ায়! সরাসরি জবাব দিলেন অভিষেক
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল করতে না পেরে ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরকে পরিকল্পনা রূপায়ণে এনেছিল তৃণমূল। প্রশান্ত কিশোর তৃণমূলের হয়ে বাংলায় ভোট কৌশল নিরূপণের কাজ শুরু করতেই দলের নেতারা কাঠগড়ায় তুলতে শুরু করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অভিযোগ ওঠে, অভিষেক-পিকে দুজনে মিলে চালচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রশান্ত কিশোর নির্দেশ দেননি, প্রস্তাব দিয়েছেন মাত্র
মুকুল রায়ের মতো দক্ষ সংগঠক তৃণমূল ছাড়ার পর তৃণমূল কংগ্রেসে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। সেই শূন্যতা পূরণ করতেই ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরকে আনা হয়েছিল সংগঠনকে আরও চাঙ্গা করতে। তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে দলের হয়ে প্রচার পরিকল্পনা নিরূপণ করেছিলেন। তার কিছু সুফল তৃণমূল পাচ্ছে বলেই অভিমত অভিষেকের। প্রশান্ত কিশোর কোনও নির্দেশ দেননি, তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন মাত্র।
আমরা প্রশান্ত কিশোরকে কাজে লাগাতেই দোষ হয়ে গেল!
অভিষেক বলেন, প্রশান্ত কিশোর দলের কেউ নন। তিনি এবং তাঁর সংস্থাকে দিয়ে তৃণমূল কিছু প্রচার পরিকল্পনা তৈরি করেছে। মানুষের মন বুঝতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হয়েছে। এটা সব দলই করেছে। বিজেপি প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে কাজ করিয়েছে। অন্য অনেক দল কাজড করিয়েছে। তখন দোষ হয়নি, আর আমরা প্রশান্ত কিশোরকে কাজে লাগাতেই দোষ হয়ে গেল!
কার স্বার্থে ঘা পড়তেই এমন অভিযোগ উঠেছে, পাল্টা অভিষেকের
অভিষেকের কথায়, তিনি বা প্রশান্ত কিশোর নন, তৃণমূল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বা নির্দেশে কোর কমিটির সিদ্ধান্ত মেনেই সমস্ত কিছু হয়। প্রশান্ত কিশোরের অন্তর্ভুক্তি থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক কাজ হয় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। কার স্বার্থে ঘা পড়তেই এমন অভিযোগ উঠেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব ও নির্দেশেই চলে তৃণমূল
অভিষেক বলেন, আমি বা প্রশান্ত কিশোর বা অন্য কেউ দলের কোনও কাজে কোনও প্রস্তাব রাখতে পারি। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কমিটিই ঠিক করে। সেই কমিটতে আমিও আছি। সুব্রত বক্সি ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ সাতজনের কমিটি যে কোনও সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেয়।
প্রশান্ত কিশোর আসার পর অনেকের স্বরূপ ফাঁস হয়ে গিয়েছে
অভিষেকের কথায়, প্রশান্ত কিশোর আসার পর অনেকের স্বরূপ ফাঁস হয়ে গিয়েছে। তাঁর টিম নিচুস্তরে নেমে দলের কোথায় কী দুর্বলতা বের করে এনেছে। আমরা তার মেরামত করার চেষ্টা করেছি। কোন নেতা কোথায় কী করছে, তা জানাজানি হয়ে যেতেই এমন অভিযোগ করছে যে অভিষেক-পিকে মিলে দল চালাচ্ছে। এই দলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়ন্ত্রণ নেই। তা সর্বেব ভুল।
স্বার্থে আঘাত পড়তেই অভিযোগ করছে আমার বিরুদ্ধে
অভিষেক বলেন, তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক আমরা। কারও কারও স্বার্থে আঘাত পড়তেই তাঁরা অভিযোগ করছে আমার বিরুদ্ধে। টার্গেট করছে আমাকে। উল্লেখ্য, শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে মিহির গোস্বামী, শীলভদ্র দত্ত ও আরও অনেকে, যাঁরা সম্প্রতি দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁরাই অভিযোগ করছিলেন প্রশান্ত কিশোর আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দল চালাচ্ছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন একাই একশো
সম্প্রতি এক জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দল চাইলেও তিনি কোনও পদ চান না। আগামী ২০ বছর তাঁর কোনও পদ দরকার নেই। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন একাই একশো। তাঁর কোনও ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রীর দরকার নেই। আমরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। তাঁর সৈনিক হয়েই কাজ করব।
কোনও পদও চান না আগামী ২০ বছর
বর্তমানে দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড তিনি। তৃণমূলের অবিসংবাদী যুবরাজ। এই সব তত্ত্বই তিনি উড়িয়ে দেন। অভিষেক বলেন, তিনি তৃণমূলের একজন সৈনিক, সাধারণ কর্মী। ডি ফ্যাক্টো, যুবরাজ, সেকেন্ড ইন কম্যান্ড- এইসব তকমা চাপিয়ে দেওয়া। তিনি এসব তকমাও চান না, কোনও পদও চান না আগামী ২০ বছর।
কোনও নেতা নয়, কর্মীরাই দলের সম্পদ
তবে কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও উচ্চাকাঙ্খা নেই। অভিষেক নিজেকে দক্ষ সংগঠক হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছেন নিজেকে। ভবিষ্যতে তিনি সংগঠন শক্তিশালী করার কাজ করতে চান। দল দায়িত্ব দিলেও তিনি নিতে চান না। রাজনৈতিক দলের সংগঠনটাই আসল। কোনও নেতা নয়, কর্মীরাই দলের সম্পদ।
ভাইপো-প্রীতিতেই তৃণমূলের কফিনে পেরেক!
শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায়রা বারবার অভিষেককে কাঠগড়ায় তুলেছেন। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসানোর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পথ তৈরি করছেন বলেও অভিষোগ তুলেছেন তাঁরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো-প্রীতিকে শিখণ্ডি করে তৃণমূলের কফিনে পেরেক পুততে চেয়েছেন বিরোধীরা। এমনকী তৃণমূলত্যাগী নেতা-নেত্রীরাও অভিষেককে নিশানা করেছেন।
মুকুল-শুভেন্দুদের গাত্রদাহের কারণ অভিষেক
মুকুল রায় সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ছিলেন তৃণমূলের। আর শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ছিলেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পর থেকে। যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি ছিলেন ২০১৪ সাল পর্যন্ত। অভিষেকের কাছে সেই পদ খোয়ানোর পর থেকে যেমন তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধি হতে শুরু হয়, তেমনই মুকুল রায়ের থেকে অভিষেক বেশি গুরুত্ব পেতেই তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে।
অভিষেককে ঢাল করে মমতার তৃণমূলে বিক্ষুব্ধ
২০১৪ সালে তরুণ সাংসদ নির্বাচিত হওয়া, যুব সভাপতি পদ পাওয়ার পর থেকেই তৃণমূলে অভিষেক-বিরোধিতা শুরু হয় একাংশের। যাঁরা অভিষেকের জন্য গুরুত্ব বা পদ হারিয়েছেন তাঁদের সামনে রেখেই দলের একাংশ অভিষেককে ঢাল করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলে বিক্ষুব্ধ হতে থাকে। তাঁরাই বিদ্রোহ করে দল থেকে বেরিয়ে যায় একুশের আগে।
তৃণমূলে বড় ফাটল অভিষেককে নিশানা করেই
স্বভাবতই অভিষেকের উত্থান নিয়ে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। বলা হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপোর প্রতি স্নেহই তৃণমূলের কাল করছে। তা না হলে মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীদের মতো নেতাদের বেরিয়ে যেতে হয় না। তাঁদের অনুগামীরাও দল ছাড়ায় তৃণমূলে বড় ফাটল তৈরি হয়েছে। সেই পথ দিয়েই তৃণমূলের পতন আসবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।