পরিশ্রমের পুরস্কার, রাজনীতির আঙিনায় উত্তরণ 'পরিণত' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে আজ তৃণমূল ভবনে সবচেয়ে বড় ঘটনা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির আঙিনায় উত্তরণ। পরিণত অভিষেক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক হিসেবে পরিশ্রমের পুরস্কার পেলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে উন্নীত হয়ে। এদিন থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস গ্রহণ করল এক ব্যক্তি এক পদ নীতি। নেতৃত্বদানের এই নতুন পদ্ধতিকে অবলম্বন করে তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের প্রাধান্য ও লক্ষ্যের কথাও জানিয়ে দিয়েছে। তা হল, দেশের মানুষের সেবায় অবিচল থাকা। এটাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
Today, the All India Trinamool Congress takes a new step towards effective leadership. Going forward, we shall be committed towards being a #OnePersonOnePost party.
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) June 5, 2021
Once again, our commitment to serve the people of India in the best way possible, remains top priority.
তৃণমূলে অভিষেক
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাঝেমধ্যেই এক ঘটনার কথা বলে থাকেন। তা হলো তাঁর পিসি, কিন্তু যাঁকে অভিষেক সকলের মতোই ছোটবেলা থেকে দিদি বলেন, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হন অভিষেক। ছোট্ট অভিষেক বাড়িতেও স্লোগান দিতে দিতে দৌড়াতেন। উচ্চশিক্ষার পর বড় চাকরি বা পারিবারিক ব্যবসার প্রতি আগ্রহ না দেখিয়ে অভিষেক নিজেকে নিয়োজিত করেন মানবসেবার কাজে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছিলেন, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ডায়মন্ড হারবারকে এতটাই ভালোবাসেন যে রাজ্যসভা বা অন্য কোনও জায়গা থেকে দাঁড়াতেও চান না। সম্প্রতি অভিষেক বলেছেন, মানুষের কাজ করতে কোনও পদের দরকার হয় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই রাজনীতিতে আসা। দলের নিষ্ঠাবান সৈনিক হিসেবে নিজের কর্তব্যে অবিচল থাকার পুরস্কারই পেলেন এদিন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে উন্নীত হয়ে।
নজরকাড়া যুব সভাপতি
সৌমিত্র খাঁ-র পর সর্বভারতীয় তৃণমূল যুব কংগ্রেসের যুব সভাপতি হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আগে ছিলেন যুবা-র দায়িত্বে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আদর্শ মেনে নিজেকে তৈরি করায় অভিষেকের মধ্যে নেতৃত্বদানের দক্ষতাও ক্রমেই রাজনৈতিক মহলে আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। সকলকে নিয়ে চলায় তিনি যেমন বিশ্বাসী, তেমনই যুব কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে দলের যুব সংগঠনে এক নয়া বিপ্লব এনে দিয়েছেন অভিষেক। যুব সংগঠনের যে ভিত তিনি তৈরি করে দিয়েছেন ব্যাটন হাতে নিয়ে সায়নী ঘোষের চলার পথ তাই মসৃণ হবে নিশ্চিতভাবেই। সর্বোপরি, গত বছর থেকে অভিষেকের যুব সংগঠনের দুই কর্মসূচি তো কার্যত নজিরবিহীন। গত বছর লকডাউনে তিনি নিজের ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে লক্ষাধিক মানুষের জন্য কল্পতরু নামে কমিউনিটি কিচেন চালু করেছিলেন, পরে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্যে। সেই সঙ্গে আমফান ও করোনা বিধ্বস্ত বাংলার মানুষের পাশে দাঁড়াতে দল-মত-নির্বিশেষে অভিষেক বাংলার যুবশক্তি নামে কর্মসূচি চালু করেন তা সুপারহিট।
শক্ত পিচে শতরান
সমালোচকরা প্রায়ই বলে থাকেন, রাজনৈতিক সংগ্রাম না করে পিসি-র জন্যই দলের উচ্চপদে অভিষেক। অভিষেককে মুখ্যমন্ত্রী করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা পরিকল্পনাতেই দলে ভাঙন। এমন নানা কথা নিন্দুকরা বলেন। রাজ্য তো বটেই নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ-সহ ভিনরাজ্যের বিজেপি নেতারা অভিষেককে আক্রমণ করে চলেছেন লাগাতার। সে সবে বিচলিত না হয়ে পাল্টা জবাবও দিয়েছেন অভিষেক। বলেছেন, আমার দোষ প্রমাণ করলে আমি নিজে গিয়ে ফাঁসির দড়ি গলায় পরব। এ তো গেল রাজনৈতিক বিবৃতির কথা। দলের সংগঠনকে মজবুত করতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেকের উপর যে আস্থা রেখেছিলেন তার পূর্ণ মর্যাদা দিয়েছেন অভিষেক। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে আসা, দিদিকে বলো-র মতো কর্মসূচি থেকে বাংলার গর্ব মমতা। কর্পোরেট কালচারে দলকে অনুশাসনে বেঁধেও কীভাবে মাটিতে পা রেখে চলা যায় তা দেখিয়ে দিয়েছেন অভিষেক।
সেকেন্ড ইন কম্যান্ড
নির্বাচনী রণকৌশল সাজানো থেকে দলের মেদ ঝরানো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রশান্ত কিশোর ও তাঁর টিমের কাজে নজর রেখে চলেছেন অভিষেক। দলের মধ্যে নানা চোরাগোপ্তা সমালোচনায় বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়েই। এবারের বিধানসভা নির্বাচনেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর সবচেয়ে বেশি যিনি দলের মধ্যে নির্বাচনী প্রচার ও রোড শো করেছেন তিনি হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিজ্ঞতার সঙ্গে তারুণ্যের মেলবন্ধন ঘটিয়ে দলের অনুশাসনকে আধুনিকতার মোড়কে এনে তিনি এক নতুন দিশা দেখাতে পেরেছেন। ফলে তৃতীয়বার মা-মাটি-মানুষ সরকার ক্ষমতায় আসার কৃতিত্বের ভাগ অবশ্যই অভিষেকেরও প্রাপ্য। দলনেত্রী তারই পুরস্কার দিলেন। আজ বৈঠকে যুব সভাপতির পদ ছেড়ে দেওয়ার পর অভিষেক হয়ে গেলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
নতুন চ্যালেঞ্জ
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের যুব সভাপতি থাকাকালীন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের ক্যালেন্ডারে দলনেত্রীর ছবি দিয়ে লেখা থাকে আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে...। অভিষেক তাঁর বাংলার যুবশক্তি কর্মসূচির মাধ্যমেও সেই লাইনগুলির যথার্থতা উপলব্ধি করে সকলকে মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। ইয়াস বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই ছুটে গিয়েছেন অভিষেক। ডায়মন্ড হারবারই হোক বা সন্দেশখালি, ধামাখালি, তাজপুর বা কাঁথি। বিভিন্ন শিবিরে ঘুরে ঘুরে মানুষের পাশে ভোটের পরও দাঁড়িয়েছেন অভিষেক। দলের যুব সংগঠন তো বটেই, তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীর কাছেও শিক্ষণীয় অভিষেকের সৌজন্য। দলত্যাগী তথা বর্তমানে বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায়ের স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছেন অভিষেক। তাঁর টিমের মাধ্যমে আপদে-বিপদে মানুষের পাশে থাকেন অভিষেক। রাজনীতির আঙিনায় নম্র অভিষেকের মধ্যে পরিণত ভাবও এখন দেখা যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হয়েছে পাশে আছে অভিষেক হ্যাশট্যাগটি।
লক্ষ্য চব্বিশ
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপি-র শীর্ষ নেতাদের দিক থেকে ধেয়ে আসা তিরের মোকাবিলা করতে নিজেই প্রস্তুত। দলনেত্রীর নির্দেশে দলের ভাঙনের মধ্যেও প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছেন নির্বাচনের আগে, এসেছে আশাতীত সাফল্য। বিপুল জনসমর্থন নিয়ে। তারপর বিজেপির আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়িয়েছে। অভিষেক বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তিনিই সে সবের মোকাবিলায় প্রস্তুত। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনের শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অভিষেক। নতুন দায়িত্বে এসে প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে তিনি যে চব্বিশের লোকসভা ভোটে বিরোধীদের এককাট্টা করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে বড় সৈনিকেরই ভূমিকা পালন করবেন আজকের বৈঠকের পর সেটা পরিষ্কার হয়ে গেল।
We extend our heartiest congratulations to Shri @abhishekaitc for being appointed as the All India Trinamool Congress General Secretary.
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) June 5, 2021
We continue to remain humbled by his remarkable work as the former Youth Wing President.#OnePersonOnePost