ছোট্ট ইমতাজের জন্য রক্ত দেবে গোটা গ্রাম, মানব চেতনার এক অসামান্য কাহিনি
মাসে অন্তত তিন বার রক্ত চায় ছোট্ট শরীরটা। হিমগ্লোবিন যখন নেমে যায় তখন ব্যাথা আর সর্দি-কাশিতে ভেঙে পড়তে চায় ৮ বছরের ছোট্ট শরীরটা।
মাসে অন্তত তিন বার রক্ত চায় ছোট্ট শরীরটা। হিমগ্লোবিন যখন নেমে যায় তখন ব্যাথা আর সর্দি-কাশিতে ভেঙে পড়তে চায় ৮ বছরের ছোট্ট শরীরটা। তবু লড়াই করছে ছোট্ট ইমতাজ। লড়ে যায় সে। ছোট্ট মনে বোঝে না সে থ্য়ালাসেমিয়া কাকে বলে। শুধু এইটুকু জানে শরীরটা যখন ব্যাথ্যা আর সর্দি-কাশিতে কাবু হয়ে যায় তখন তাকে হাসপাতালে যেতে হয়। সেখানে বড় বড় সূচ ফুটিয়ে তাকে রক্ত দেওয়া হয়।
মাত্র আড়াই বছর বয়সে ইমতাজ-এর শরীরে থ্যালাসেমিয়া প্রভাবের কথা জেনেছিলেন আঁতুর আলি। পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগণার ভাঙড়ের রাজাপুর গ্রামে। গ্রামে বরাবরই সকলের প্রিয় আঁতুর। তাঁর মতো তাঁর ছোট্ট ছেলে ইমতাজকেও রাজাপুর গ্রামের সকলে পছন্দ করে। ছোট্ট ইমতাজ যে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত তা গ্রামের অন্যরাও জেনেছিল।
একদিকে গরিবি, অন্যদিকে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছেলে ইমতাজ। ভেঙে পড়েননি আঁতুর। লড়াই চালিয়েছেন। কিন্তু রক্তের জোগাড় করতে করতে ক্লান্ত তিনি। সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত না মিলেল পকেট থেকে অনেকটা অর্থই খসিয়ে রক্ত কিনতে হয় ছেলে ইমতাজের জন্য।
আঁতুরের এই কষ্ঠ লাঘব করতে তাই এগিয়ে এসেছে রাজাপুর গ্রাম। আয়োজন করা হয়েছে এমন এক রক্তদান শিবিরের যা শুধুই ইমতাজের জন্য। ছোট্ট ইমতাজের যাতে রক্তের অভাবে কখনও সমস্যায় না পড়তে হয় তার জন্য রাজাপুর পূর্ব পাড়ার পরিচালনায় হতে চলেছে এক বিশাল রক্তদান শিবির। যেখানে রক্তদান করবেন রাজপুর গ্রামের বাসিন্দারা। এমনকী আশপাশের গ্রাম থেকেও রক্ত দিতে আসার জন্য ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন অনেকে। সকলেই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছোট্ট ইমতাজের পাশে দাঁড়াতে চায়।
ইমতাজের বাবা আঁতুর আলি এই উদ্যোগের জন্য সকল গ্রামবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাঁর আশা গ্রামবাসীদের রক্তদানের সুবাদে এবার আর তাঁকে আর রক্ত কিনতে হবে না। স্থানীয় তৃণমূল নেতা জেলা পরিষদ সদস্য কাইজার আহমদেও ১৪ অক্টোবর উপস্থিত থাকবেন রাজাপুর গ্রামের এই নজিরবিহীন উদ্য়োগে সামিল হতে। ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, 'এমন উদ্য়োগের আরও প্রয়োজন রয়েছে। মানুষ মানুষের জন্য। মানুষ যদি অন্য মানুষের পাশে দাঁড়ায় তহেল সমাজ আরও এগিয়ে যাবে। রাজাপুর গ্রামের মানুষ ছোট্ট ইমতাজের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে তা এককথায় অসামান্য।'
প্রথমে ঠিক ছিল ২১ অক্টোবর এই রক্তদান শিবির হবে। কিন্তু, কিছু অসুবিধার জন্য তা ১৪ তারিখে এগিয়ে আনা হয়। ছোট্ট ইমতাজের জন্য এখন গ্রামে গ্রামে প্রচার চালানো হচ্ছে। ছোট্ট শিশুটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য সকলের কাছে আহ্বান জানাচ্ছেন রাজাপুর পূর্ব পাড়া। ইমতাজের বাবা আঁতুর আলি-র চোখের সামনে এখন ভেসে বেড়াচ্ছে কী ভাবে তাঁকে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতাল থেকে ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে ছোটাছুটি করতে হয়। এর সঙ্গে রক্ত পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিলে তখন যেন মাথায় বাজ ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি হয়। গ্রামের মানুষের উদ্যোগে এবার চিন্তা কিছুটা কমবে বলেই আশায় রয়েছেন আঁতুর।