
ঘূর্ণিঝড় অশনির সঙ্গে ভারত মহাসাগরে তৈরি হয়েছে যমজ ঝড়, জোর টক্কর চলছে সমুদ্রে
ঘূর্ণিঝড় অশনি তো দুয়ারে কড়া নাড়ছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়ে দিয়েছে ঘূর্ণিঝ়ড় আরও তীব্রতর হবে সোমবার। এরই মধ্যে আরও এক ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া দফতর। সেই ঘূর্ণিঝড় এখন অশনির থেকে খানিক দূরে ভারত মহাসাগরে অবস্থান করছে। অর্থাৎ এই মুহূর্তে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জোড়া ঘূর্ণিঝড় বাসা বেঁধেছে। এই দুটি ঘূর্ণিঝড়কে আবহবিদরা টুইন সাইক্লোন বা যমজ ঘূর্ণিঝড় আখ্যা দিয়েছেন।


যমজ ঝড়ের উপরই নির্ভর করবে অশনির ভবিষ্যৎ
এখন প্রশ্ন উঠেছে, দুটি ঘূর্ণিঝড় যেহেতু পরপর অবস্থান করছে মহাসাগরীয় অঞ্চলে, তাহলে কি দুর্যোগের আশঙ্কা দ্বিগুণ থাকছে? আবহবিদরা সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে আবহিবদরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় অশনি কতখানি মারাত্মক হতে পারে বা আম্ফানের মতো শক্তিশালী হয়ে ওঠে কি না, তা নির্ভর করবে ওই দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়ের উপর।

দুই গোলার্ধে একইসঙ্গে দুটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে
এক ঘূর্ণিঝড়ের পিছু পিছু দ্বিতীয় ওই ঘূর্ণিঝড় তৈরির কারণ কী? তাও ব্যাখ্যা করেছেন আবহবিদরা। পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওয়েস্টার্ন উইন্ড বার্স্ট বা পশ্চিমা বায়ুর বিস্ফোরণ দায়ী। এখন ভারত মহাসাগরে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাব এতটাই যে দুই গোলার্ধে একইসঙ্গে দুটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। সেই কারণেই এই দুটি ঘূর্ণিঝড়কে যমজ বলা হচ্ছে।

দুই ঘূর্ণিঝড়কে দাঁড়িপাল্লার সঙ্গে তুলনা আবহবিদদের
বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন, দু'টি গোলার্ধে দু'টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ায় এর প্রকৃতি দুইরকমের। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়টির বায়ুপ্রবাহ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরবে। আর ভারত মহাসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের বায়ুপ্রবাহ ঘুরবে ঘড়ির কাঁটার দিকে। বিজ্ঞানীরা এই দুই ঘূর্ণিঝড়কে দাঁড়িপাল্লার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

দাঁড়িপাল্লার মতো ওজন করেই শক্তি বাড়ানোর যুদ্ধ
বিজ্ঞানীদের কথায়, দুটি ঘূর্ণিঝড় বায়ুপ্রবাহকে দু-মুখে টানছে। এখন যে ঘূর্ণিঝড় যত পশ্চিমা বায়ুকে টানতে পারবে, সে ততটাই শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তাই এই দুই ঝড় দাঁড়িপাল্লার মতো ওজন করেই শক্তি বাড়ানোর যুদ্ধে নেমেছে। যার পাল্লা যত ভারী হবে, সে তত শক্তি সঞ্চয় করে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠবে।

ঘূর্ণিঝড় ফণী যখন আছড়ে পড়েছিল, তৈরি হয়েছিল লর্নাও
এই যমজ ঘূর্ণিঝড় যে এই প্রথম হল, তা কিন্তু নয়। এর আগে একাধিকবার যমজ ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। আর এর জ্বলন্ত প্রমাণ রয়েছে। মাত্র তিন-বছর আগে এমনই এক ঘটনা ঘটেছে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে। ২০১৯-এ ঘূর্ণিঝড় ফণী যখন আছড়ে পড়েছিল, তখন ভারত মহাসাগরে ঠিক এমনই এক যমজ ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল। সেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল লর্না।

ঘূর্ণিঝড় অশনি ফণীর মতোই সাংঘাতিক হবে
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ফণী ও ভারত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় লর্নার একই সময়ে আবির্ভাবের মাশুল গুণতে হয়েছিল ওড়িশাকে। ফণী শক্তি বাড়িয়ে লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল উপকূল। এখন দেখার এবারও কি ঘূর্ণিঝড় অশনি ফণীর মতোই সাংঘাতিক হয়ে উঠবে। অনেকে এই অশনির সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছে আয়লা ও আম্ফানেরও। এখন দেখার কতটা পশ্চিমা বায়ু আহরণ করতে সক্ষম হয় ঘূর্ণিঝড় অশনি।

ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঝড়ই বেশি পশ্চিমা বায়ু টেনে নিচ্ছে
এখন পর্যন্ত পূর্বাভাস ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে। আবার এই অশনির উপকূলে আছড়ে পড়ার তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন আবহবিদরা। সমুদ্রেই স্থায়ী হবে এই ঝড়। আর এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, আম্ফানের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার। এখন পর্যন্ত ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঝড়ই বেশি পশ্চিমা বায়ু টেনে নিচ্ছে বলে আবহবিদরা জানিয়েছেন।

আরব-দক্ষিণ চিন সাগরের জলীয় বাষ্পেও মিলবে শক্তি
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের উপ অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, একটা ঘূর্ণিঝড় কতটা শক্তিশালী হবে, তা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। শুধু ভারত মহাসাগরে থেকে বেশি পশ্চিমা বায়ু আহরণ করতে পারল না বলে যে সেই ঝড় শক্তিশালী হবে না, তা কোনও কারণ নয়। আরব সাগর, দক্ষিণ চিন সাগর থেকে জলীয় বাষ্প জোগানেও শক্তিশালী হতে পারে। কারণ সমুদ্রের জলস্তরের তাপমাত্রা অনুকূল রয়েছে।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এখন পর্যন্ত যা পূর্বাভাস
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের কেন্দ্রীয় বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তর-পশ্চিমে সরতে সরতে অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা উপকূলের দিকে আসবে। তবে এই ঘূর্ণিঝড়ের আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা কম। ঘূর্ণিঝড়টি অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা উপকূলের কাছে এসে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে বেঁকে যাবে। তবে ১০ থেকে ১২ তারিখ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে। উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। তবে কতখানি শক্তি বৃদ্ধি করতে সমর্থ হল অশনি, তা বোঝা যাবে সোমবার।
রেলের টিকিটে PNR-এর অর্থ কী? এই ১০ সংখ্যা যাত্রীদের কীভাবে উপকার করে