একটি মাত্র শব্দের অর্থের খোঁজ বদলে দিয়েছিল ছাত্র নরেনের জীবন
একটি মাত্র শব্দের অর্থের খোঁজ বদলে দিয়েছিল ছাত্র নরেনের জীবন
একটি বিশেষ শব্দের অর্থের খোঁজ করছিলেন তিনি। বেশি নয়, মাত্র একটা শব্দ। সেই খোঁজ তাঁর জীবন পুরোপুরি বদলে দেবে তিনি নিজেও তা ভাবেননি। যিনি এই শব্দের খোঁজ করছিলেন তিনি স্বামী বিবেকানন্দ। তখন তিনি নরেন্দ্রনাথ দত্ত। নেহাতই এক ছাত্র। সেদিনের সেই ছাত্রের জীবন আমূল বদলে গিয়েছিল পরম পুরুষের কাছে পৌঁছে।
শব্দের খোঁজ
তখন স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র নরেন্দ্রনাথ। কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ডক্টর হেস্টি। তিনি শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের গুণগ্রাহী ছিলেন। একদিন ক্লাসে নিতে এসেছেন হেস্টি। পড়াচ্ছেন উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের লেখা 'দ্য এক্সকারসন' কবিতাটি। ক্লাসে অন্যান্য ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন নরেন্দ্রনাথও। মন দিয়ে শুনছেন প্রফেসরের পড়ানো। একটি শব্দে গিয়ে তিনি আটকে গেলেন। শুধু নরেন নয় অনেকেই বুঝতে পারলেন না। কবিতায় একটি লাইনে 'ট্র্যান্স' শব্দটি ছিল। এই শব্দের অর্থ কী ছাত্ররা বুঝতে পারছিল না। তারা প্রফেসরকে এর অর্থ জানতে চায়।
উত্তরে কী বলেন প্রফেসর?
কিছুক্ষণ
থেমে
হেস্টি
বলেন
,
যদি
এই
শব্দের
প্রকৃত
অর্থ
বুঝতেই
হয়
তাহলে
তোমাদের
একটা
জায়গায়
যেতে
হবে।।ছেলেরা
বলে
কোথায়?
স্যার
বলেন,
তোমরা
দক্ষিণেশ্বরের
পাগলা
ঠাকুরের
কথা
শুনেছ
কী?
শ্রীরামকৃষ্ণের
কথা
বলছি।
তোমাদের
তাঁর
কাছে
যেতে
হবে।
তাহলেই
তোমরা
এই
শব্দের
অর্থ
সঠিক
ভাবে
বুঝে
যাবে।
নরেন
সহ
কয়েকজন
সত্যিই
শব্দের
অর্থ
সন্ধানে
বেরিয়ে
পড়েন।
পৌঁছে
যান
দক্ষিণেশ্বরে।
কিভাবে বদলে গেল নরেন্দ্রনাথের জীবন ?
প্রথম দর্শনে শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের। কিন্তু প্রথম দেখায় ঠাকুরকে অত্যন্ত সাধারণ একজন মানুষ বলেই মনে হয়েছিল নরেনের। স্বামীজি জিজ্ঞাসা করেছিলেন ,'মহাশয় আপনি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন?' এরপরই স্বামীজি এক বড় প্রশ্ন করে বসেন। পরমহংসকে জিজ্ঞাসা করে বসেন, 'আপনি কি ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারেন?' উত্তরে শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, 'আমি তোমাকে যেমন আমার সম্মুখে দেখিতেছি, তাঁহাকেও ঠিক সেই রূপে দেখি। বরং আরও স্পষ্টতর আরও উজ্জ্বল রূপে দেখি।'
তারপরের ঘটনা কেমন?
রামকৃষ্ণদেবের এই বক্তব্যই পাল্টে দেয় স্বামীদির জীবন চেতনা। আমূল পাল্টে যায় নরেনের জীবন দর্শন। বাংলা তখন এক অগ্নিগর্ভ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চলেছে। স্বাধীনতার লড়াইয়ে সেই সময় এগিয়ে চলেছে মানুষ। এই আগুনে পা দেওয়ার জন্য দেশের যুব সমাজকে উদ্বুদ্ধ করার আরও একটি অধ্যায় উঠে আসতে শুরু করে স্বামীজির হাত ধরে। সেদিনের ছাত্র নরেন স্বামীজি হয়ে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ নির্বিষেশে খুঁজে পেতে থাকেন ঈশ্বরকে।
১৮৮৭ সাল, স্বামীজি শ্রীরামকৃষ্ণের থেকে দীক্ষা গ্রহণ করেন নরেন্দ্রনাথ। আর দীক্ষা গ্রহণের পর তিনি হয়ে ওঠেন স্বামী বিবেকানন্দ। যদিও এই সন্ন্যাস গ্রহণের আগের পর্যায়টি ছিল এক্কেবারে অন্যরকম। রাত ৩ টেয়ে উঠে মন্ত্র জপ থেকে শুরু করতে হত নরেনদের। এরপর স্নান সেরে ধর্মচর্চার মধ্য দিয়ে দ্বৈত ও অদ্বৈতবাদ নিয়ে বহু তর্ক বিতর্কে অংশ নিতে দেখা যেত যুবক নরেন্দ্রনাথকে। আর এই সমস্ত পর্ব কাটিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন সন্ন্যাসী। হয়ে ওঠেন যুব সমাজের এক আদর্শ।