হুগলি জেলায় তৃণমূলের যুব সভাপতি বদল নিয়ে অসন্তোষ, চিঠি পাঠানো হচ্ছে অভিষেকের কাছে
হুগলি জেলায় তৃণমূলের যুব সভাপতি বদল নিয়ে অসন্তোষ চরমে, চিঠি পাঠানো হচ্ছে অভিষেকের কাছে
দুএকটি জেলার সঙ্গে হুগলি জেলায় তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি বদল নিয়ে অসন্তোষ চরমে। লোকসভা নির্বাচনে এই জেলায় দলের খারাপ পারফরম্যান্সের পর দলের অনেক বিধায়ক, নেতা যখন ঘরে বসে, তখন বিজেপির বাড়বাড়ন্ত রুখেছিলেন সদ্যপ্রাক্তন তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।
সক্রিয় ছিলেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়
গুপ্তিপাড়া থেকে উত্তরপাড়া, চাঁপদানি থেকে চণ্ডীতলা, তারকেশ্বর থেকে ডানকুনি, আরামবাগ, খানাকুল, পোলবা দলের পার্টি অফিস খোলা থেকে শুরু করে বিজেপিতে ভাঙন ধরানোর কাজ, বিজেপির খাসতালুকে গিয়ে দলের সংগঠন জোরালো করা থেকে শুরু করে রাতবিরেতে বিপদে সবার আগে কর্মীরা পাশে পেয়েছেন দলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব আর শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এমনকী লকডাউনে ও আমফানের পর শহিদ পরিবারগুলির পাশে থাকা থেকে শুরু করে নানা অভিনব পরিকল্পনায় খাদ্যসামগ্রী, ত্রাণ বিলি, অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা করা, রাজ্যের সক্রিয় যুব সভাপতিদের মধ্যে অন্যতম হয়ে প্রথম সারিতে থেকেছেন শান্তনু।
বেড়েছে রাজনৈতিক গুরুত্ব
তৃণমূল সূত্রে খবর, গ্রাম থেকে উঠে আসা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির শান্তনুর উত্থান মানতে কষ্ট হয়েছে অনেক বিধায়কের, শান্তনুর নামে বানানো মিথ্যা অভিযোগ জমাও পড়ে উপরতলায়। তবে ভাল কাজের পুরস্কার হিসেবে শান্তনুকে রাজ্যস্তরে উন্নীতই শুধু করেননি অভিষেক, সহ সভাপতির তালিকায় সোহম চক্রবর্তীর নামের পরেই শান্তনুর নাম রেখে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব।
পদোন্নতিতে জেলায় সংগঠনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়
যদিও শান্তনুর পদোন্নতিতে হুগলি জেলায় দলের সংগঠনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলে দিলীপ-শান্তনু জুটি যেভাবে বিজেপি শিবিরে কাঁপুনি ধরিয়েছিল, তা আর হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। শান্তনু রাজ্য কমিটিতে যেতেই যে জেলা তিনি একা সামলাচ্ছিলেন সেখানে জেলা সংগঠন তিন টুকরো করতে বাধ্য হয়েছেন অভিষেক। হুগলি লোকসভায় জেলা সহকারী সভাধিপতি সুমনা সরকার আর শ্রীরামপুর লোকসভায় অরিন্দম গুঁইকে যুব সভাপতি করলেও আরামবাগে এখনও কাউকে যুব সভাপতি নিয়োগ করা হয়নি। শান্তনুর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেওয়া হাজার হাজার কর্মীও নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকে বিজেপিতে ফিরে যেতে চাইছেন। আরামবাগ লোকসভায় সবচেয়ে বেশি বিজেপিতে ভাঙন ধরানো গিয়েছিল। আরও হাজার তিনেক প্রথম সারির বিজেপি নেতা-কর্মীকে তৃণমূলে নিয়ে আসার ছক তৈরি ছিল। আপাতত তাঁরাও বিজেপি-ত্যাগে নারাজ। দলের সিদ্ধান্ত মানলেও বেশ কয়েকজন ব্লক যুব সভাপতি বললেন, যে দু'জন দায়িত্বে এলেন তাঁদের কাউকে রাতে কোনও ঘটনা ঘটলে বা বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধে সামনে পাব না নিশ্চিত। লোকসভার ধাক্কা কাটিয়ে সংগঠন মজবুত হওয়ার সময় এই জেলায় পরিবর্তন না হলেই ভালো হতো। শান্তনু রাজ্যস্তরে গেলেন ঠিকই, কিন্তু যুব সংগঠন, বিশেষ করে সদ্য দলে আসাদের ধরে রাখা কীভাবে হবে জানি না। ষড়যন্ত্র করে পদ পাওয়া যায়, কিন্তু লোকসভায় যা ফল তাতে অনেক বিধায়কের যা ভাবমূর্তি তাতে নিজের বুথে তাঁরা হারবেন। এক কথায়, শান্তনু রাজ্য সহ সভাপতি হতেই মুষড়ে পড়েছে জেলার যুব সংগঠন। এই জেলাতেও পিকে-র টিমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরেই। নিরপেক্ষ রিপোর্ট না দেওয়ার অভিযোগ আছে।
চিঠি যাচ্ছে অভিষেকের কাছে
শান্তনু সরতেই ৯০ শতাংশ ব্লক যুব সভাপতি পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। আপাতত তাঁদের ঠেকিয়েছেন শান্তনু। তবে তাঁরা ঠিক করেছেন জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে চিঠি পাঠাবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। সংগঠন বাঁচাতে হয় শান্তনুকে জেলা সভাপতি পদে ফেরানো হোক, নয়তো সহ সভাপতি হিসেবেই এই জেলা দেখুন শান্তনু, এই আর্জি জানানো হচ্ছে। ভোটের কয়েক মাস আগে সংগঠন অভিভাবকহীন হোক, চাইছেন না কেউই। লকডাউন মিটলে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসা কয়েক হাজার মানুষ ফের বিজেপিতে চলে যাওয়ার ভাবনাচিন্তাও করছেন।
উপাচার্যদের কাজের ওপর নজর রাখা হচ্ছে! সক্রিয় হোন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্যপাল