রবিবার রাজ্যে ৭ পুরসভার ভোট, লড়াইয়ে শাসক দলকে মাত দেবে বিরোধীরা?
রাত পোহালেই রবিবার রাজ্যের সাত পুরসভায় ভোট। প্রত্যেকটি বুথেই ভিডিওগ্রাফির নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। শাসক ও বিরোধী জোর লড়াইয়ের প্রস্তুতি।
রাত পোহালেই রবিবার রাজ্যের সাত পুরসভায় ভোট। প্রত্যেকটি বুথেই ভিডিওগ্রাফির নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিং জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট করার সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকলেও নির্বাচনে যাতে কোনও কারচুপি না হয়, সে জন্য আটঘাট বেঁধেই নেমেছেন তাঁরা। বুথে বুথে কড়া পাহারার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সাহায্য নেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিরও।
রবিবার পাহাড়ের চার পুরসভা- দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং, মিরিকে ভোট। আর সমতলে রায়গঞ্জ, ডোমকল ও পূজালি- তিন পুরসভায় ভোট। সাত পুরসভার ভোট নিয়ে এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল। সাত পুরসভার মধ্যে ডোমকল নতুন পুরসভা। এই প্রথমবার সেখানে ভোট হচ্ছে। অধীর-দূর্গে ঘাসফুল ফোটার পর এই প্রথম ভোট। তাই রাজনৈতিক মহলের নজর এখন সেদিকেই। তার উপর ভোটের আগেই মুর্শিদাবাদে তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
ডোমকল কার দখলে যাবে, তা নিয়ে চাপানউতোর চলছে অনেক আগে থেকেই। একদা কংগ্রেসের ভূমিপুত্র বলে পরিচিত, মান্নান হোসেন ও তাঁর ছেলে সৌমিক হোসেন ডোমকলে তৃণমূলের নেতৃত্বে। তাদের হাত ধরে অধীর দূর্গে তৃণমূল বিজয় কেতন ওড়াতে প্রস্তুতি সেরেছে। তারপর রয়েছে সিপিএমের আনিসুর রহমান। ডোমকলে তাঁর দাপট সর্বজনবিদিত। এখনও তিনি ডোমকলকে নিজের হাতে রাখতে পারেন কি না তা দেখা যাবে এই পুরভোটে।
পূজালি বর্তমান তৃণমূলের দখলে। কংগ্রেসি গড় পূজালি পুরসভা এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলকে প্রকৃত কংগ্রেস বলে মনে করে। হাত কংগ্রেসের অস্তিত্ব এখন প্রায় বিলুপ্ত। তাই এই পুরসভায় জয় নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত তৃণমূল শিবির। তবে বাকি ছয় পুরসভা দখল করতে এবার ঝাঁপাচ্ছে তারা। জোর লড়াই অপেক্ষা করে আছে বাকি ছয় পুরসভাতেই। পাহাড়ের পাশাপাশি রায়গঞ্জ ও ডোমকলের লড়াইও যে কঠিন হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পাহাড়ে এতদিন কর্তৃত্ব ফলিয়েছেন বিমল গুরুং। তাঁর মোর্চাই ছিল এখানে শেষ কথা। এবার সেখানে তৃণমূল লড়াইয়ে অবতীর্ণ। ফলত চাপে মোর্চা। পাহাড় তারা দখল রাখতে পারবে কি না, নাকি তৃণমূল এবার পরিবর্তন আনবে পাহাড়ে? সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। বাম-কংগ্রেস জোটও এখানে লড়াই দেবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আর তলে তলে বিজেপিও যে কম যাবে না, তা তো বিগত নির্বাচনগুলিই তার প্রমাণ।
বিশেষ করে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে বিজেপি পড়ে রয়েছে। এই পুরসভাকেই ভালো ফলের ব্যাপারে প্রথম টার্গেট করেছে বিজেপি। সেইমতো ঘুঁটি সাজিয়েই দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে রাজ্য নেতৃত্বের প্রথম সারির নেতারা পড়ে রয়েছেন জেলায়।
এদিকে উন্নয়নের দাবিকে সামনে রেখেই পাহাড়ে বাজিমাত করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তিনি পাহাড়ে দায়িত্ব দিয়েছেন পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে। আর রায়গঞ্জ ও দমকলে তাঁর সেনাপতি পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। দুই সেনাপতির উপর দায়িত্ব সঁপে দিয়ে মমতা এবার বাজি জিততে চাইছেন। রবিবারই সেই বহু আকাঙ্খিত পুরভোট।
পাহাড়ে তৃণমূল যেমন উন্নয়নকে ইস্যু করার পাশাপাশি মোর্চার বিরুদ্ধে দুর্নীতিকেই হাতিয়ার করেছে, তেমনই সেই পুরনো গোর্খাল্যান্ডোর জিগির তুলেছে মোর্চা। রাজনৈতিক মহলের ধারণা মোর্চার এই ইস্যু এবার ধোপে টিকবে না। আর কংগ্রেস ও বাম শিবির জর্জরিত ভাঙনে। সাত পুরসভার নিরিখে বিজেপিকে ততটা তৈরি লাগছে না। তাই অ্যাডভান্টেজ তৃণমূল।