বিজেপির ভুলেই ভিক্টোরিয়ায় বিপত্তি! মমতাকে অপমানের নেপথ্যে কোন নেতারা?
একেবারে ডেকে এনে অপমান। সরকারি অনুষ্ঠান। মঞ্চে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমন্ত্রিত রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রীও। সবার নজর ছিল অনুষ্ঠানের দিকে। এই সভার বহু টিকিটই নাকি বিজেপি দলীয় কর্মাদের দেওয়া হয়েছিল। আর তা দেওয়া হয়েছিল আমন্ত্রিত সাংসদদের তরফেই। আর সেই নিচুতলার কর্মীরাই সেদিন অনুষ্ঠানে 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান তুলেছিলেন। এদিকে এই ঘটনার নেপথ্যে মূল অভিযুক্তদের নামের মধ্যে রয়েছে সৌমিত্র খাঁ এবং শঙ্কুদেব পণ্ডার নামও।
টিকিট পান অনেক মণ্ডল পর্যায়ের নেতারাও
সূত্রের খবর অনুষ্ঠানের আগেই বিভিন্ন বিজেপি সাংসদদের দেওয়া হয়েছিল প্রায় ৩০০-৪০০ টিকিট। সেগুলি বিভিন্ন দলীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল সাংসদদের তরফে। তবে সেই টিকিট পান অনেক মণ্ডল পর্যায়ের নেতারাও। এঁদের অনেকেরই সরকারি অনুষ্ঠানে যোদ দেওয়ার কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। এর জেরেই ঘটে সেই বিপত্তি।
ভোটের আগে একমঞ্চে মোদী-মমতা
নামে সরকারি অনুষ্ঠান হলেও রাজ্য-রাজনীতির নিরিখে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ভোটের আগে একমঞ্চে মোদী-মমতা। দিনভর লাইমলাইটে ভিক্টোরিয়া হাউজ। কিন্তু হঠাৎ তাল কাটল। মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা হতেই দর্শকাসনের এক প্রান্ত থেকে উড়ে এল জয় শ্রীরাম স্লোগান। বিরক্তিতে কোনওরকম ভাষণ না দিয়েই পোডিয়াম ছাড়েন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে 'রামনাম'
জয় শ্রীরাম স্লোগান কতটা রাজনৈতিক, কতটা ধর্মীয়, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু এই স্লোগান যে বঙ্গ রাজনীতির গৈরিক নৌকার পালে যথেষ্টই হাওয়া দিয়েছে তা স্বীকার করতে দ্বিধা করবে না মুরলিধর সেন স্ট্রিটও। এর আগেও একাধিকবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে 'রামনাম' নিতে দেখা গিয়েছিল বিজেপি কর্মীদের।
এর আগে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী
জগদ্দলের সেই ঘটনা হয়ত এখনও অনেকের মনে রয়েছে। তখন সবে লোকসভা ভোট শেষ হয়েছে। ঘাসফুলে ভরা বাংলায় অনেকটাই থাবা বসিয়ে দিয়েছে পদ্মফুল। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের সামনেই জয় শ্রীরাম তুলেছিলেন বিজেপি সমর্থকরা। তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গাড়ি থেকে নেমে চামড়া গুটিয়ে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
'মৌনতা' ধারণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী
কিন্তু ২৩ তারিখের ছবিটা ছিল পুরো উল্টো। একেবারে 'মৌনতা' ধারণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিগত প্রায় এক দশক ধরে যে 'জ্বালাময়ী' ভাষণে বিরোধীদের কার্যত দুরমুশ করে দেওয়ার জন্য পরিচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, গতকাল তিনি যেন আশ্চর্যজনকভাবে নীরব। আজ আর বললেন না, 'বুকের পাটা থাকে তো সামনে এসে বল।' না কাউকে বললেন, 'ক্রিমিনাল', না দিলেন কোনওরকম ধমক। এ যেন এক অন্য মমতা!
সামনাসামনি জবাব দেওয়ার উচিত ছিল
বঙ্গ রাজনীতির আনাচে কানাচে এখন এই নিয়েই শুরু হয়েছে তর্জমা। কেউ বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী চুপ থেকেই যোগ্য প্রতিবাদ করেছেন। কেউ আবার বলছেন, চুপ না থেকে সামনাসামনি জবাব দেওয়ার উচিত ছিল। সামনাসামনি জবাবটা তিনি হয়ত দিতেই পারতেন। স্বয়ং নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে বিজেপি অনুগামীদের তুলোধনা করতে কে না চায়।
বিজেপির পাল্টা প্রশ্ন
সেদিনের ঘটনার পর রাজ্য বিজেপি অবশ্য বলছে 'রামনামে' এত উত্তেজিত হওয়ার কী আছে। বিজেপি যতই সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করুক, মমতা কিন্তু পাশে পেয়েছেন বাম-কংগ্রেসকে। রাজনৈতিক বিভেদ থাকলেও মমতার পাশে দাঁড়িয়ে এককাট্টা হয়েছেন অধীর-বিমানরা। সেই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর পদের গরিমাকে অপমান করা হয়েছে বলে মনে করছেন অধীর চৌধুরী। সিপিএম নেতা বিমান বসু জানিয়েছেন, সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকী পালনের সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে যেভাবে স্লোগান তোলা হয়েছে তা অনুচিত। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ দেওয়ার সময় এই অন্যায় কাজ করা হয়েছে। রাজ্যের পক্ষে মর্যাদাহানিকর কাজ হয়েছে। এই ঘটনা নিন্দনীয়।
বিষয়টিকে মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব না দিলেই সমীচীন হত
তবে বিষয়টিকে মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব না দিলেই সমীচীন হত বলে মনে করছেন বাম ও কংগ্রেস নেতারা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল সমগ্র বিষয়টি উপেক্ষা করা। মুখ্যমন্ত্রীকে একই পরামর্শ দিচ্ছেন বিমানও। বলছেন, এই ঘটনা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষিপ্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ মুখ্যমন্ত্রী ক্ষিপ্ত হবেন জেনেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই গতকালের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ছিল উপেক্ষা করে তার বক্তব্য পেশ করা। সেই বক্তব্যের মাধ্যমে কড়া জবাব দিতে পারতেন।
পায়ের তলার মাটি হারাতে বেশি সময় লাগবে না পদ্মশিবিরের
সেই অনুষ্ঠানে দর্শকাসনের যেদিক থেকে এই ধরনের 'অভব্য' স্লোগান উড়ে এসেছিল, তার কাছাকাছিই ছিলেন রাজ্য বিজেপির বেশ কিছু নেতানেত্রীরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের কথায়, রাজ্যে বিজেপির ক্ষমতা বাড়ছে। পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত করছে বিজেপি। কিন্তু তেইশে জানুয়ারির প্রতি আপামর বাঙালির যে শ্রদ্ধা রয়েছে, তাতে আঘাত এলে পায়ের তলার মাটি হারাতে বেশি সময় লাগবে না পদ্মশিবিরের।