বছর ঘুরতেই বাংলায় বিধানসভা ভোট, জঙ্গলমহলের ভাগ্য নির্ধারণে কতটা ছাপ ফেলবে কুর্মি সম্প্রদায়ের ভোট?
বছর ঘুরতেই বিধানসভা ভোট, জঙ্গলমহলের ভাগ্য নির্ধারণে কতটা ছাপ ফেলবে কুর্মি সম্প্রদায়ের ভোট?
বছর ঘুরতেই বিধানসভা ভোট শুরু হবে বাংলায়। আর তার আগেই ভোটের ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে শাসক-বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলই। অন্যদিকে বাংলার মাটিতে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসাবে যখন ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে বিজেপি তখন সংখ্যালঘু ও দলিত ভোট টেনে বাজিমাত করতে চাইছে ঘাসফুল শিবির। এদিকে প্রতি নির্বাচনের মতো আসন্ন বিধানসভা ভোটে জঙ্গলমহলের ভাগ্য নির্ধারনে কুর্মি সম্প্রদায়ের ভোট যে বড়সড় নির্নায়ক ভূমিকা রাখতে চলেছে তা এক কথায় স্বীকার করছেন সমস্ত রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
কুর্মি সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্ক গোছাতে একাধিক বড়সড় পদক্ষেপ ঘাসফুল শিবিরের
এদিকে কুর্মি সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্ক নিজের ঘরে টানতে চলতি বছরের শুরু থেকেই একাধিক নতুন কৌশল নিতে দেখা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই রাজ্য কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন জঙ্গলমহলের একদা নায়ক ছত্রধর মাহাতো। দীর্ঘদিনের কারাবাস কাটিয়ে এই বছরেই তৃণমূলের হাত ধরেই ফের সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন তিনি। অন্যদিকে ছত্রধর মাহাতোর স্ত্রী নিয়তি মাহাতোকে শিশু সুরক্ষা কমিশনের সদস্যও করেছেন মমতার প্রশাসন। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা এই দুই চালের মাধ্যমে দলছুট কুর্মি-মাহাতো সম্প্রদায়কে আবারও নিজের দিকে টানার চেষ্টা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কী বলছে কুর্মিদের রাজনৈতিক ইতিহাস ?
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া সহ জঙ্গলমহলের বিস্তৃর্ণ অঞ্চলের মোট ভোটের মধ্যে ৩৮ তেকে ৪০ শতাংশ ভোটই কুর্মিদের দখলে। এদিকে ১৯৭৭ সালের প্রথম ক্ষমতা দখলের পর থেকেই এই কুর্মি সম্প্রদায়ের সমর্থন সর্বদাই থেকে সিপিআইএম-র খাতায়। অন্যদিকে ২০১১ মমতা পরিবর্তনের ডাকে ঘাসফুলে ছোঁয়া লাগে জঙ্গলমহলেও। কুর্মিদের সমর্থেই ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে জঙ্গলমহলে বড় মার্জিনে জয় পায় তৃমমূল প্রার্থীরা।
কুর্মিদের হাতেই বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে বড়সড় ধাক্কা
এদিকে ২০১১-র পালাবদলের পর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। গোটা জঙ্গলমহলেই মাওবাদীদের দাপট কমলেও বদলেছে একাদিক রাজনৈতিক সমীকরণ। এই কুর্মি সম্প্রদায়ের একাংশের আশীর্বাদেই জঙ্গলমহলের বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে গেরুয়া শিবিরের উত্থান দেখেছে রাজ্যবাসী। যার ছাপ স্পষ্ট শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনেও। যদিও প্রাথমিক সমর্থন পেলেও পরবর্তীতে কুর্মিদের হাতেই আবার বারংবার ধাক্কা খেয়েছে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি।
জোর করে ধর্ম পরিবর্তনের অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে
এদিকে ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলেও দেখা যাবে কোনও রাজনৈতিক দলের একতরফা এজেন্ডাকে কখনওই সমর্থন করেনি কুর্মিরা। উল্টে তাদের দীর্ঘদিনের একগুচ্ছ দাবি নিয়েই একাধিকবার সরব হতে দেখা গেছে কুর্মি সম্প্রদায়ের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতাদের। এদিকে বর্তমানে কুর্মিদের দ্বারাই জোর করে ধর্ম পরিবর্তনের অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছে বিজেপি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সর্ন ধর্মকেই দীর্ঘদিন থেকে তাদের সরকারি ধর্মীয় পরিচয় করার দাবি জানিয়ে আসছে কুর্মি সম্প্রদায়ের মানুষেরা। কিন্তু অভিযোগ, বর্তমানে জোর করে তাদের হিন্দু রীতি-নীতি মানতে বাধ্য করছে বিজেপি।
কুর্মি-মাহাতোদের মন জিততে কোনোরকম ফাঁকই রাখছেন না মুখ্যমন্ত্রী
এদিকে ভোটের আগে কুর্মি-মাহাতোদের মন জিততে কোনোরকম ফাঁকই রাখছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। চলতি বছরের কুর্মিদের বহুল প্রচলিত করমপুজোর জন্য জঙ্গলমহলে ছুটিও ঘোষণা করেন তিনি। যা নিয়ে অগাস্টের শেষে প্রচুর জল্পনা কল্পনা দেখা যায় রাজনৈতিক মহলে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই করমপুজোয় ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও ছত্তিশগড়ে এমনিতেই ছুটি থাকে। এবার সেই তালিকায় চলতি বছরেই যোগ হয় বাংলার নাম। কিন্তু এতকিছু পরেও কুর্মিদের মন কাদের প্রতি সদয় হয় এখন সেটাই দেখার।
১৬ টি বিধানসভা আসনেই কুর্মিদের দাপট, এসটি তালিকাভুক্তির দাবি
এদিকে বিধানসভা ভোট প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আনতে দেখা যায় ঝাড়গ্রামে আদিবাসী কুরমি সমাজের সভাপতি অনুপ মাহাতোকে। তার সাফ বক্তব্য, তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে যে রাজনৈতিক দল কাজ করে দেখাবে তাদেরকেই খোলাখুলি সমর্থন করবেন তারা। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে উল্টে আবার রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণের প্রসঙ্গও টেনে আনেন অনুপ মাহাতো। তার কথায়, ‘রাজ্যের ১৬ টি বিধানসভা আসনেই কুর্মিদের ভোটব্যাঙ্ক অনেক শক্তিশালী। তাই ভোটে জিততে হলে আমাদের সমর্থনের কথা ভুলে গেলে চলবে না।' একইসাথে কুর্মিদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে এসটি তালিকাভুক্তির বিষয়েও এদিন ফের তাকে সরব হতে দেখা যায়।
কমছে করোনা ভাইরাস, দেশের নতুন কোভিড সংক্রমণে ৭৯ শতাংশ অবদান এই ১০ রাজ্যের