বাঁকুড়ায় দ্বারকেশ্বর নদের পাশে দুশো বছরের পুরানো মুড়ি মেলা
বাঁকুড়ায় দ্বারকেশ্বর নদের পাশে দুশো বছরের পুরানো মুড়ি মেলা
এখন জলখাবারে অনেক কিছু খাওয়া হলেও বাঙালির কাছে আজও জলখাবার হিসেবে সবচেয়ে প্রিয় মুড়ি । সকালে বা বিকেলে নানা ধরনের তেলেভাজা সহযোগে মুড়ি খেতে ভালোবাসে না এমন বাঙালি পাওয়া দুষ্কর । অনেকেই আবার তেলেভাজা সহ বা তা বাদ দিয়ে পেঁয়াজ শশা সহ মুড়ি পছন্দ করেন । বলতে গেলে দেশ বিদেশে নানা জায়গাতে যেখানেই বাঙালি সেখানেই মুড়ি আর আড্ডা । বাঙালির এই মুড়িপ্রীতি নিয়ে কারোর কোনও রকম সন্দেহ নেই । কিন্তু তাই বলে মুড়ি মেলা!
হ্যাঁ, ঠিক তাই । মুড়ি মেলা ।
প্রতি বছর মাঘ মাসের ৪ তারিখ বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়া গ্রামে দ্বারকেশ্বর নদের পাশে বসে এই মেলা । এই দিন এই এলাকার লোকজন তো বটেই আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন চলে আসে এখানে । সঙ্গে নিয়ে আসেন মুড়ি । নদের পাশে বসে, কেউ কাগজের পাতায়, কেউ থালাতে, চপ, সিঙারা, শশা, পেঁয়াজ, চানাচুর এই সব দিয়ে মুড়ি মাখিয়ে খান । অনেকেই নদের পারের বালিতে গর্ত খুঁড়ে জল বার করে খান ।
" প্রায় দুশো বছরের পুরানো এই প্রথা । আগে এখানে নদের পাশে আশ্রমে হরিনাম সংকীর্তন শুনতে লোকজন এসে বাতাসা মুড়ি খেত । এখন এটা মেলার আকার নিয়েছে । প্রতি বছর মাঘ মাসের চার তারিখে অনেক গ্রামের লোকজন মুড়ি নিয়ে এসে নদের পাশে বসে খান। মুড়ি মেলা এখানে প্রায় উত্সবের আকার ধারণ করেছে," বলেন স্থানীয় বাসিন্দা সুজিত দাস ।
এই নদের পাশে এই গ্রামে আছে সঞ্জীবনী আশ্রম। প্রতি বছর মাঘ মাসের এক তারিখ থেকে শুরু হয় হরিনাম সংকীর্তন । চার তারিখে তা শেষ হয়।
এই দিন একদিকে যেমন ওই আশ্রমে খিচুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয় তেমনই লোকজন এসে নদের পাশে বসে মুড়ি খায়।
বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা লোক সংস্কৃতি গবেষক অরবিন্দ চ্যাটার্জি জানিয়েছেন যে এই এলাকায় এই আশ্রম করেন রায় কিশোর চট্টোপাধ্যায় । তিনি ছিলেন জমিদার বাড়ির সন্তান । সন্ন্যাসী হয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে সন্ন্যাস নেন । গ্রামে ফিরে তিনি এই আশ্রম করেন । তখন এই এলাকা ছিল জঙ্গলে ঢাকা । আশ্রমে হরিনাম সংকীর্তন শুনতে লোকজন এসে বাতাসা মুড়ি দিয়ে খেতেন । পরে এই জায়গাতে এই নির্দিষ্ট দিনে মুড়ি খাওয়া শুরু হয়েছে। কবে নাগাদ এটা শুরু হয়েছে তা জানা যায় নি । তবে এই দিন সকালে এসে সেখানে মুড়ি খাওয়া মেলায় পরিণত হয়েছে ।