করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি শীতকালে বেশি, দাবি ভারতীয় বিজ্ঞানীদের
সার্স কোভিড–২ ভাইরাস মহামারির জন্য বিশ্বজুড়ে ১.২৫ কোটি মানুষ আক্রান্ত এবং সংখ্যাটা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মহামারির প্রাথমিক স্তরে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু বিজ্ঞানী জানিয়েছিলেন যে নোভেল করোনা ভাইরাস তাপমাত্রায় বাঁচতে পারে না এবং উচ্চ তাপমাত্রায় এই ভাসরাস তার শক্তি হারিয়ে ফেলতে পারে। যদিও এটা একেবারেই যে ভিত্তিহীন দাবি ছিল তা গোটা বিশ্বে এই ভাইরাসের দাপট দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এর অর্থ হ'ল করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার উপরে আবহাওয়া এবং তাপমাত্রার প্রভাবগুলির মূল্যায়ন এতটা সহজ নাও হতে পারে। যদিও এ নিয়ে গবেষণা চলছে এবং বিতর্কও।
করোনার ওপর আবহাওয়ার প্রভাব নেই
হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রথম এটা লক্ষ্য করা যায় যে নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণে তাপমাত্রা ও আদ্রতার প্রভাব রয়েছে। তাদের গবেষণায় এটা দেখা গিয়েছে যে চিন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানে এই ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে ২৩ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। তাঁরা তাঁদের গবেষণায় এই সমাধানে এসেছে যে এই ভাইরাস সংক্রমণের ওপর আবহাওয়া কোনও প্রভাব ফেলে না।
করোনা ভাইরাস নিয়ে চিনও গবেষণা করেছে
যদিও অন্য এক গবেষণায়, যা চিনের উহানে করা হয়েছিল এবং ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়, সেখানে বলা হয় যে গ্রীষ্মকালে সবচেয়ে বেশি ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ও ৭৫ শতাংশ আদ্রতায় এই ভাইরাস দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিভিন্ন সমীক্ষা চলে গোটা বিশ্ব জুড়ে, যেখানে আবহাওয়া ও ভাইরাসের মধ্যেকার যোগাযোগকে কেউ কেউ সমর্থন করে আবার কেউ বা খারিজ করে দেয়।
আমেরিকার গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে
সম্প্রতি আমেরিকার আর্মি মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিইউট অফ ইনফেকসিয়াস ডিজিস খুঁজে পায় যে কম তাপমাত্রায় করোনা ভাইরাস ত্বকের মধ্যে দীর্ঘদিন থাকে এবং যার ফলে সংস্পর্শে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এর আগে হু-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস যেখানে খুশি সেখানে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমনকী গরম ও আদ্রতা রয়েছে এমন আবহাওয়া যুক্ত অঞ্চলেও।
শীতকালে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেবে
ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজস্থানের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের গবেষণায় পেয়েছে যে এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শীতকালে বাড়তে পারে। সমীক্ষায় জৈব রসায়নবিদ ডঃ চাঁদনি মণ্ডল ও ডঃ মহাভীর সিং পানওয়ার মার্চের শেষের দিক থেকে শুরু করে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়কার বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ সক্রিয় কেসগুলির সঙ্গে গড় তাপমাত্রার তুলনা করেন। সমীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা গিয়েছে যে উচ্চতর অক্ষাংশে যেখানে জলবায়ু প্রায় সর্বদা শীতল থাকে, উষ্ণ এবং নিম্ন-অক্ষাংশ জলবায়ু সহ জায়গাগুলির তুলনায় করোনা ভাইরাস কেসের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। এই সমীক্ষার ফলাফল থেকে গবেষকরা এই সমাধানে এসেছিল যে সার্স-কোভ-২ সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি রয়েছে ঠাণ্ডা পরিবেশের মধ্যে।
শীতকালে এই রোগের সংক্রমণ বেশি হবে
দেখা গিয়েছে, ফ্লুয়ের মতো রোগ গোটা শীতকালে হয় দু'টি কারণে। প্রথমত, শীতকালে কম সূর্যের আলো থাকে এবং আবহাওয়া শুষ্ক থাকে অধিকাংশ সময়। পরিবেশে অতিবেগুনী রশ্মি কম মাত্রায় থাকায় এটি ভাইরাসের স্থায়িত্ব বাড়ায়। দ্বিতীয়ত সূর্যের আলোর অভাবে আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর পরিমাণ মাধারি থাকে, যা আমাদের এই ভাইরাসে সহজে আক্রান্ত হতে সাহায্য করে। ভারতীয় গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে শীতের মরশুমে এই রোগের বিস্তার আরও বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে গ্রীষ্মের মরশুমই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভাল সময় হতে পারে।