ফেডেরারের বিদায় মুহূর্তে আপ্লুত কোহলি থেকে নাদাল, সেরা ছবি বেছে বিরাট দিলেন কোন বার্তা?
রজার ফেডেরার পেশাদার টেনিস থেকে অবসর নেওয়ার পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক ঘণ্টা। শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয়ের স্বাদও পাননি ফেডেক্স। কিন্তু তাঁর বিদায় মুহূর্ত আলোড়ন ফেলে দিয়েছে বিশ্বের ক্রীড়ামহলকে। টেনিস দুনিয়া যে দুই তারকার দ্বৈরথ নিয়ে প্রায় দুই দশক মেতে ছিল, তাঁদের একজনের অবসরে অপরজনের কান্না রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। যা বিশ্বের ক্রীড়া জগতকেই দিয়েছে এক অনন্য বার্তা। যেখানে প্রমাণিত প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঊর্ধ্বেও পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা।
সেরা ছবি
লেভার কাপে ডাবলস কাপে ম্যাচের শেষে পাশাপাশি বসে কাঁদছেন রজার ফেডেরার ও রাফায়েল নাদাল। এই মুহূর্তটি আন্দোলিত করেছে ক্রীড়াবিদ থেকে ক্রীড়াপ্রেমী সকলকেই। ব্যতিক্রম নন বিরাট কোহলিও। তিনিও সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, কে ভেবেছিলেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর একে অপরের প্রতি এমন অনুভূতি দেখা যেতে পারে! এটাই খেলার জগতের সৌন্দর্য। আমার কাছে খেলার জগতের এটিই সেরা ছবি। যখন কারও জন্য তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা কাঁদেন, মনে রাখতে হবে তিনি এটা করাতে পেরেছেন তাঁর ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভার সৌজন্যেই। দু-জনের প্রতিই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিরাট।
তৃপ্ত ফেডেক্স
লেভার কাপে রজার ফেডেরার গতকালই নিজের শেষ ম্যাচটি খেলে ফেললেন। টিম ইউরোপের ফেডাল জুটিকে অবশ্য টিম ওয়ার্ল্ডের জ্যাক সক ও ফ্রান্সেস তিয়াফো হারিয়ে দিয়েছেন। নাদালকে নিয়ে প্রথম সেট জিতেছিলেন ফেডেরার। পরের সেটটি জেতার আশাও জাগিয়েছিলেন। বেশ কয়েকবার ম্যাচ পয়েন্ট হাতছাড়া করে তিন সেটের লড়াইয়ে ফেডেররার হেরে যান। ফেডেরার ম্যাচের পর জানিয়েছেন, শেষ ম্যাচে নামার আগে কাফ মাসল বা পিঠের চোট ব্যাঘাত ঘটানোর আশঙ্কা উঁকি মেরেছিল তাঁর মতে। কিন্তু পুরো ম্যাচ খেলেই বিদায় নিতে পেরে তিনি তৃপ্ত।
আবেগাপ্লুত নাদাল
ফেডেরারের অবসরে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন রাফায়েল নাদাল। তিনি জানিয়েছেন, ফেডেরার অবসর নেওয়ায় তাঁর জীবনের একটা অংশেও যবনিকাপাত হলো। নাদালের কথায়, ফেডেরারের শেষ ম্যাচের সঙ্গী হতে পারাটা বিশাল সম্মানের। টেনিস খেলার ইতিহাসে অসাধারণ এক মুহূর্তের সাক্ষী হতে পারলাম। আমরা একসঙ্গে অনেক বছর কাটিয়েছি। প্রতিপক্ষ হিসেবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছি। আমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক প্রতি দিন, প্রতি বছরই উন্নত হয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। আবার খেলার স্টাইল পুরোটাই আলাদা। সে কারণেই সম্ভবত আমাদের পারস্পরিক দ্বৈরথ বড় আকার ধারণ করেছে, আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে ক্রমাগত। তাই ফেডেরারের পরিবার-সহ সকলকে দেখে আমিও আবেগ সামলাতে পারিনি। এই মুহূর্ত অসাধারণ। তবে সঠিকভাবে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
মিরকার অবদান
ফেডেরারের কেরিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে স্ত্রী মিরকার। ফেডেক্সের শেষ ম্যাচে তিনিও ছিলেন গ্যালারিতে। নিয়ে এসেছিলেন চার সন্তান লিও, লেনি, মাইলা ও শার্লিনকে। ফেডেরারের বাবা-মা রবার্ট ও লিনেটও ছিলেন। ফেডেরার কোর্টে দাঁড়িয়ে ইন্টারভিউ দেওয়ার পর তাঁর পরিবারের সদস্যরা গিয়ে ফেডেরারের সঙ্গে মিলিত হন। ফেডেরার ও মিরকার চোখেও তখন জল। ২০০২ সালের হপম্যান কাপে ফেডেরার ও মিরকা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ২০০৯ সালের এপ্রিলে বিয়ে। সে বছরই যমজ কন্যাসন্তানের জন্ম। ২০১৪ সালে ফেডেরার ও মিরকার কোলে আসে যমজ পুত্রসন্তান। তাঁর কেরিয়ারে মিরকার অবদানের কথাও লন্ডনের ও২ অ্যারেনায় লেভার কাপের আসরে উল্লেখ করেন ফেডেরার। বলেন, মিরকা চাইলে অনেক আগে থেকেই আমাকে খেলা থেকে সরিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু তা না করে এত বছর খেলতে যাতে পারি সেজন্য উৎসাহিত করে সহযোগিতা করেছেন। তাই তাঁকে ধন্যবাদ জানাতেই হবে। মায়ের জন্যই তিনি এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছেন বলেও জানান রজার।