ফিরে দেখা ২০২২: ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসে মনে রাখার মতো বছর কাটাল ভারত
ফিরে দেখা ২০২২: ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের ইতিহাসে মনে রাখার মতো বছর কাটাল ভারত
দেখার বিষয় হবে যে বয়সভাড়ানো যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে তা লক্ষ্য সেনের পারফরম্যান্সের উপর প্রভাব ফেলে কি না, যখন তিনি আগামী মসে দিল্লিতে ইন্ডিয়া ওপেনে খেলতে নামবেন। পাশাপাশি এই মরসুম থেকেই শুরু হয়ে যাবে টোকিও অলিম্পিক ২০২৪-এর কোয়ালিফাইং প্রসেস। তবে, এই বিষয়ে কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না যে তারকা সাটলারদের মধ্যে ২০২২-এর সব থেকে উজ্জ্বল পারফর্মার এই তরুণ।
বর্তমানে শীর্ষ স্থানীয় সাটলারদের মধ্যে লক্ষ্য সেন অন্যতম। অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন ভিক্টর অ্যাক্সেলসনকে জার্মান ওপেনের সেমিফাইনালে পরাজিত করেন লক্ষ্য সেন। তবে, সেটা অবাক করার বিষয় নয় কারণ তার আগে বিশ্ব ক্রমতালিকায় সেরা ছয়ে জায়গা করে নিলেছেন লক্ষ্য সেন।
কয়েক মাস আগে একটি সাক্ষাৎকারে লক্ষ্য সেন বলেছেন, "আমার লক্ষ্য বিশ্বের সেরা ২০-এর মধ্যে এই বছর স্থান করে নেওয়া। আমি অত্যন্ত খুশি হবো যদি এই বছর এই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি। আমাের অ্যাকাডেমিতে (প্রকাশ পাডুকন ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি) এখন বিদিশে কোচ রয়েছেন এবং মুভমেন্ট ও ডিফেন্সে আমাকে আরও ভাল করে তোলার লক্ষ্যে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।" লক্ষ্য সেনের স্ম্যাস বরাবরই নজর কেড়ে কোর্টে কিন্তু তাঁর দুর্বলতা মূলত ছিল ডিফেন্সের ক্ষেত্রে। সেই দিক দিয়েও আলমোরের এই তরুণ অনেকটা উন্নতি করেছেন তা দেখা গিয়েছে এই বছর। অ্যাক্সেলসন, অ্যান্ডার্স অ্যান্টোনসেন, লি ঝি জিয়া, লু কন ইউ-এর মতো সালটারদের বিরুদ্ধে লক্ষ্য সেনের ডিফেন্সিভ প্লে নজর কেড়েছিল। অল ইংল্যান্ড ওপেনের ফাইনালস পর্যন্ত গিয়েছিলেন লক্ষ্য সেন এবং বালিতে ইয়ার এন্ডিং ট্যুরের জন্য কোয়ালিফাইও করেন তিনি। গত বছর জানুয়ারিতে ইন্ডিয়া ওপেনে তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন লি কন ইউকে পরাজিত করেছিলেন দিল্লিতে। কমনওয়েলথ গেমসে পুরুষদের সিঙ্গলসে সোনা জয়ের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন ফেভারিট।
লক্ষ্য সেন নিজেকে তারকার স্তরে উন্নীত করেন যখন ঐতিহ্যশালী থমাস কাপ জয়ের নেপথ্যে ভারতের দলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। গত বছর যে কোনও খেলায় এটাই ভারতের সেরা পারফরম্যান্স। সারা বছর আলোচনায় থেকেছে ঐতিহ্যশালী থমাস কাপ জয়। ভারতীয় সাটলারদের এই ফলাফলে এতটাই গর্বিত হয়েছিল দেশ যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সামনাসামনি কথা বলেন প্রত্যেকের সঙ্গে এবং তাঁদের আরও এগিয়ে যেতে মোটিভেট করেন। দেশের রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর সঙ্গে নৈশাহার সারার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ছিলেন থমাস কাপ জয়ী দলকে।
বিগত দশ বছর লক্ষ্য সেনকে ট্রেন করা কোচ বিমল কুমার বলেন, "লক্ষ্যের এখনও অনেক কাজ বাকি। লক্ষ্য আরও ফিট হচ্ছে এবং আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হচ্ছে। সাফল্যের জন্য ওর কঠিন পরিশ্রম আমায় অভিভূত করে। যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজে সন্তুষ্ট হচ্ছে ততক্ষণ একই শট ও খেলে যায়।" ভারতের থমাস কাপ জয় বিশ্ব স্তরে নিজেদের দাপুটে অস্তিত্বকেও জানান দেয়। থমাস কাপ জেতার মধ্যে দিয়ে বিশ্বের টেনিস সার্কিটকে ভারত বুঝিয়ে দেয় বিশ্ব স্তরে নিজের পা দাপটের সঙ্গে রেখেছে ভারত এবং যে কোনও পাওয়ার হাউসকে যে কোনও সময়ে যে কোনও জায়গায় মোকাবিলা করতে এই দল তৈরি। এই থমাস কাপ লক্ষ্য সেনের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠা দেয় দিয়েছে এইচ এস প্রণয়কেও। প্রাক্তন বিশ্বের ১ নম্বর তারকা কিদামী শ্রীকান্তের নেতৃত্বে থমাস কাপ জেতে ভারত।
এই বছর ডবলসেও দারুণ পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছে ভারত। চিরাগ শেট্রি এবং স্বাত্বিকসাইরাজ রাঙ্কিরেজড্ডির জুটি বিশ্বের প্রায় সমস্ত শীর্ষ জুটিকেই পরাজিত করেছে। থমাস কাপে সোনা জেতার পাশাপাশি কমনওয়েলথ গেমসেও সাফল্যের কাব্য রচনা করে এই জুটি। একমাত্র মালয়েশিয়ার জুটি অ্যারন চিয়া এবং সো উ ইকের জুটিকে এখনও এঁরা পরাজিত করতে পারেননি। ফলে সিঙ্গলের মতোই ডবলসেও ব্যাডমিন্টনে এই বছর নিজের অস্তিত্ব দাপটের সঙ্গে জানান দিয়েছে ভারত।
মহিলাদের সিঙ্গলেস লেখার মতো বেশি কিছু নেই, যদিও কমনওয়েলথ গেমসে পিভি সিন্ধু সোনা জিতেছেন, মরসুমের পরবর্তী অংশে চোটের কারণে অনেকটা সময়ে বাইরে থাকতে হয়েছে তাঁকে। সাইনা নেহওয়াল এই বছর একাধিক টুর্নামেন্ট খেললেও অধিকাংশেই প্রথম কিংবা দ্বিতীয় রাউন্ডে পরাজিত হয়েছে, তিনি এখন অতীতের ছায়ামাত্র। মহিলাদের ডবলসে ভাল পারফর্ম করেছেন গায়েত্রী গোপীচাঁদ এবং টেরেসা জলি। অল ইংল্যান্ডে এই জুটি বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে থাকা জুটিকে পরাজিত করেন।
আইপিএলে স্যাম কারানকে নিয়ে কেন দুশ্চিন্তায় পাঞ্জাব কিংস? রেকর্ড দর কীভাবে অভিশাপ?