US Open: ইউএস ওপেনের মহিলা সিঙ্গলসে রাদুকানু-লেইলার টিনএজার-ফাইনাল! এমন নজির আর আছে?
কেরিয়ারের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেলতে নেমেই ফাইনালে পৌঁছে বিরল নজির গড়লেন ব্রিটিশ এমা রাদুকানু। মহিলা সিঙ্গলসের ফাইনালে তাঁর সামনে আরেক টিনএজার কানাডার লেইলা ফার্নান্ডেজ। যদিও তিনি গত বছরও তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যামে খেলেছিলেন। তবে চলতি বছরেই নটিংহ্যাম ওপেনে ডব্লুটিএ ট্যুরে অভিষেক হওয়া রাদুকানু উইম্বলডনে চমক দেখানোর পর দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যামেই ফাইনালে উঠলেন। শুধু তাই নয়, তিনিই প্রথম খেলোয়াড় যিনি ওপেন এরায় মহিলা সিঙ্গলসের ফাইনালে উঠলেন কোয়ালিফায়ার হিসেবে শুরু করে।
স্বপ্নের দৌড়
ফ্লাশিং মিডোসে ঝড় তুলে ব্রিটিশ অষ্টাদশী এমা রাদুকানু উড়িয়ে দিলেন গ্রিসের সপ্তদশ বাছাই মারিয়া সাকারিকে। খেলার ফল ৬-১, ৬-৪। ৪৪ বছর পর এই প্রথম ব্রিটিশ কোনও মহিলা গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল খেলবেন। ১৯৭৭ সালে উইম্বলডন ফাইনাল খেলেছিলেন ভার্জিনিয়া ওয়েড। তিনি এদিন দর্শকাসনে বসে রাদুকানুর ইতিহাস গড়ার সাক্ষী থেকেছেন। কেরিয়ারের তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গলস খেতাবের প্রথমটি ওয়েড ১৯৬৮ সালে জিতেছিলেন ইউএস ওপেনেই। ফলে ৫৩ বছর পর কোনও ব্রিটিশ মহিলা সিঙ্গলস ফাইনাল খেলবেন। রাদুকানু বলেছেন, নিউ ইয়র্কে সময় দ্রুত চলে গেল। তিন সপ্তাহ এখানে কাটানোর ফাঁকেই আমি ফাইনালে উঠতে পেরেছি। এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না। তিনটি কোয়ালিফায়ার ম্যাচ খেলে মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন রাদুকানু। তবে ৯টি ম্যাচের একটিতেও এখনও তিনি কোনও সেট হারেননি।
|
উচ্ছ্বসিত রাদুকানু
এবারের উইম্বলডনে শেষ ১৬ অবধি পৌঁছেছিলেন রাদুকানু। তার আগে তিনি ছিলেন বিশ্বের ৩৩৬ নম্বর খেলোয়াড়। গত ২৩ অগাস্ট তাঁর কেরিয়ারের সেরা র্যাঙ্কিং দাঁড়ায় ১৫০। এবার তিনি বিশ্বের প্রথম তিরিশে ঢুকে পড়তে চলেছেন। ১৯৫৯ সালে ১৮ বছর বয়সে ফরাসি ওপেন ফাইনাল খেলেছিলেন ক্রিস্টিন ট্রুম্যান। ফলে ৬২ বছরে রাদুকানুই প্রথম সর্বকনিষ্ঠ ব্রিটিশ টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যামে খেলবেন। ব্রিটেনের প্রাক্তন এক নম্বর টিম হেনম্যানের পরামর্শ তাঁকে সমৃদ্ধ করেছে বলেও জানিয়েছেন রাদুকানু।
বিরল ঘটনা
১৯৬৮ সালে ওপেন এরা শুরুর পর এই প্রথম কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের দুই ফাইনালিস্টই অবাছাই। রাদুকানু ফাইনালে ওঠার আগে কানাডার টিনএজার লেইলা ফার্নান্ডেজ চলতি ইউএস ওপেনের মহিলা সিঙ্গলসের ফাইনালে ওঠেন। গত সোমবারই ১৯ বছর পূর্ণ করা লেইলা সবচেয়ে বড় অঘটনটি ঘটিয়েছেন। তিনি হারিয়ে গিয়েছেন দ্বিতীয় বাছাই আরিনা সাবালেঙ্কাকে। বিশ্বের ৭৩ নম্বর বাছাই লেইলা ফার্নান্ডেজ এর আগে ছিটকে দিয়েছিলেন গতবারের চ্যাম্পিয়ন নাওমি ওসাকা এবং পঞ্চম বাছাই এলিনা স্ভিটোলিনাকে। আর্থার অ্যাশে স্টেডিয়ামে উত্তেজক সেমিফাইনালে তিনি বেলারুশের তারকা সাবালেঙ্কাকে হারালেন ৭-৬(৭-৩), ৪-৬, ৬-৪ সেটে।
|
২২ বছর পর
এই নিয়ে ওপেন এরায় দুই টিনএজার ফাইনালে খেতাবের লক্ষ্যে নামতে চলেছেন অষ্টমবার। ইউএস ওপেনে শেষবার দুই টিনএজারের মধ্যে মহিলা সিঙ্গলস ফাইনাল হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। সেবার সেরেনা উইলিয়ামস হারিয়েছিলেন মার্টিনা হিঙ্গিসকে।
|
কানাডার লেইলা ফেভারিট
ফাইনালে লেইলা-ই ফেভারিট হিসেবে শুরু করবেন। কিন্তু রাদুকানুও যে ফর্মে রয়েছেন তাতে দুই টিনএজারের লড়াই উপভোগ্যই হতে চলেছে। লেইলার পরিবারেও খেলাধুলোর চল রয়েছে। তাঁর বাবা জর্জ ইকুয়েডরের, ফুটবল খেলতেন। তাঁর মা কানাডার নাগরিক, ফিলিপিন্সের বংশোদ্ভূত। লেইলার ছোট বোন বিয়াঙ্কা জলিও টেনিস খেলেন। দিদি জডেসি দাঁতের ডাক্তার। লেইলার জন্ম ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে মন্টরিয়ালে। রাদুকানুর জন্ম ওই বছরই নভেম্বরে। লেইলা একটি ডব্লুটিএ ও একটি আইটিএফ খেতাব জিতেছেন। রাদুকানু অবশ্য এখনও কোনও খেতাব জয়ের স্বাদ পাননি। লেইলা গত বছর ও এই বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথম রাউন্ডে বিদায় নেন। ফরাসি ওপেনে গত বছর তৃতীয় রাউন্ডে উঠেছিলেন। চলতি বছর উইম্বলডনে প্রথম রাউন্ড থেকে ছিটকে যান। এবারই প্রথম ইউএস ওপেন খেলতে নেমে পৌঁছে গেলেন ফাইনালে।
|
কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়বেন ব্রিটিশ
রাদুকানুর জন্মও কানাডার টরন্টোয়। তাঁর বাবা ইয়ানের জন্ম রোমানিয়ার বুখারেস্টে। মা শেনিয়াংয়ের জন্ম চিনে। রাদুকানুর কেরিয়ারে তাই দুই দেশেরই টেনিস তারকা সিমোনা হালেপ ও লি না-র প্রভাব রয়েছে। রাদুকানুর যখন দুই বছর বয়স তখন তাঁর পরিবার চলে যায় ইংল্যান্ডে। পাঁচ বছর বয়সে টেনিস খেলা শুরু রাদুকানুর। উইম্বলডনের শেষ ১৬ থেকে বিদায় নিলেও এবার তাঁর সামনে ইতিহাস গড়ার হাতছানি।