রাতে জলপাই পোশাকের টহলদারি, নতুন করে মাওবাদী আতঙ্কে ভুগছে জঙ্গলমহল
রাতে জলপাই পোশাকের টহলদারি, নতুন করে মাওবাদী আতঙ্কে ভুগছে জঙ্গলমহল
২০১১-র পর আবার ঝাড়গ্রামে জলপাই রঙা পোষাকের টহলদারি, মাওবাদী নাশকতা নিয়ে নিয়ে হাইঅ্যালার্ট জারি হয়েছে পুরো জঙ্গলমহল জুড়ে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার ক্ষমতায় আসার একবছরও পূর্ণ হয়নি তখন, ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর লালগড়ের বুড়িশোলের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় মাওবাদী নেতা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজির৷ তারপর থেকেই আস্তে আস্তে জঙ্গলমহল জুড়ে মাওবাদী আতঙ্ক সরেছিল। এর পরের ১০ বছরে দু'একটা ছোটখাটো পোস্টারিং ও বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া তেমন কোনও বড় মাওবাদী নাশকতার কথা শোনেনি জঙ্গলমহল৷ কিন্তু আবার নতুন করে জঙ্গলমহল জুড়ে তৈরি হয়েছে মাওবাদী হামলা আশঙ্কা৷
জঙ্গলমহলে নতুন করে মাও-আতঙ্কের নেপথ্যে কার?
সরাসরি কোনও নাম এখনও উঠে আসেনি! তবে কিষেণজির পর কখনও অনল দা তো কখনও কমান্ডার আকাশ ওরফে রঞ্জিত পালের নাম জঙ্গলমহলের বাতাসে শোনা গিয়েছে। জানা গিয়েছে জঙ্গলমহলের এই নেতাদেরই মাটি ফিরে পাওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে মাওবাদীরা। ২০২২ এর শুরু থেকেই বেলপাহাড়ির শিমূলপাল সহ বাঁকুড়ার বারিকুল, সারেঙ্গা ও পুরুলিয়াতে বিভিন্ন সময়ে মাওবাদীদের নামে পোস্টারিং দেখা গিয়েছে৷ কখনও সে পোস্টারে লেখা হয়েছে কিষেণজির হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার কথা আবার কোথাও তৃণমূল নেতাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে পোস্টারে! পুরো বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য পুলিশ৷
আগামী ১৫ দিন জঙ্গলমহলে হাইঅ্যালার্ট!
সূত্রের খবর আগামী ১৫ দিন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামে হাইঅ্যালার্ট জারী হয়েছে, বড়সড় মাওবাদী নাশকতার সম্ভাবনায়। অনেক বছর শান্ত থাকার পর সম্প্রতি আবার এ নিয়ে নড়েচড়ে বসতে দেখা গিয়েছে জঙ্গলমহলের তিনটি জেলার প্রশাসনকে৷ সম্প্রতি এ নিয়ে একাধিক যৌথ মিটিংও হয়েছে রাজ্য পুলিশের!
বাঁকুড়া-পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রামের উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তাদের বৈঠক!
গত শনি ও রবিবার রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামের জেলাপুলিশ সুপার সহ স্থানীয় পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ সূত্রের খবর মাওবাদী নাশকতা এড়ানো এবং পাশাপাশি নতুন করে মাওবাদীরা যাতে জঙ্গলমহলে জমি ফিরে না পায় সে নিয়েই পরপর আলোচনা হয়েছে এই বৈঠকগুলিতে!
মাও-নাশকতা আটকাতে রাজ্য পুলিশের আইজির বৈঠক!
মনোজ মালব্য ছাড়াও রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সঞ্জয় সিং, পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগান, বাঁকুড়ার ডিআইজি সুনীল চৌধুরী সহ স্থানীয় থানার আইসি-রা একটি রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেন৷ যেখানে নিরাপত্তায় কড়াকড়ি সহ রাতে জঙ্গল সন্নিহিত অঞ্চলে পেট্রোলিং বাড়ানো এবং তল্লাশির মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকতে পারে বলে সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে৷
কোন এলাকাগুলোয় হাইঅ্যালার্ট?
২০০৯ সালে জঙ্গলমহলে অপারেশন গ্রিনহান্ট শুরু হয়েছিল মাওবাদীদের দমন করতে৷ তার আগে এবং পরের কয়েক বছর বারে বারে জঙ্গলমহলের বেলপাহাড়ি, লালগড়, সারেঙ্গা, বারিকুল, রানিবাঁধ, বেলগুমায় বিশেষ সতর্কতা জারী হয়েছে৷ এই এলাগুলিতে যৌথবাহিনীর বেশকিছু ক্যাম্প এখনও রয়েছে৷ সূত্রের খবর সেখান থেকেও রাতে টহলদারী বাড়ানো হচ্ছে যে কোনও ধরণের নাশকতা রুখতে!
রাতের অন্ধকারে চলছে পুলিশের তল্লাশি!
২০০৯ সালের জঙ্গলমহল যারা দেখেছেন তারা জানেন যে এখানে রাতে যৌথবাহিনী ও পুলিশের তল্লাশি ছিল খুবই সাধারণ ব্যাপার। শেষ ১০ বছরে সে স্মৃতি কিছুটা ফিকে হতে শুরু করেছিল। কিন্তু নতুন করে মাও নাশকতার সম্ভাবনায় রাতের অন্ধকারে জলপাই পোষাকের যৌথবাহিনীদের দেখা যাচ্ছে বেলপাহাড়ি, বারিকুলের জঙ্গল অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে। এক প্রতক্ষ্যদর্শীর বয়ান অনুসারে মঙ্গলবার রাত দশটার দিকে বেলপাহাড়ি ব্লকের জঙ্গল সন্নিহিত মালাবতী গ্রামের আশেপাশে তল্লাশী চালাতে দেখা গিয়েছে জলপাই পোশাকের পুলিশদের৷
বেলপাহাড়িতে ল্যান্ডমাইন!
সম্প্রতি বাংলা বনধ ডেকেছিল মাওবাদীরা, বনধের আগেরদিন বেলপাহাড়ির শিমূলপাল অঞ্চলে জঙ্গলের ভেতরের রাস্তার পাশ থেকে ল্যান্ডমাইন উদ্ধার করেছিল স্থানীয় পুলিশ। সে সময় ওই এলাকায় টহল দিতে দেখা গিয়েছিল যৌথবাহিনীকেও।
কেন জঙ্গলমহলের বেলপাহাড়ি ও আশেপাশের এলাকা পছন্দের জায়গা মাওবাদীদের?
এর কারণ অনেকটাই প্রাকৃতিক৷ পুরো এলাকা জঙ্গলে ঘেরা। সঙ্গে কানাইসহ, গাররাশিনির মতো পাহাড়ি ঢাল বেয়ে অতি সহজেই প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খন্ডে পা রাখা যায়৷ পাশাপাশি বহু বছরধরে অনুন্নয়নের কারণে তৈরি হওয়া এখানকার মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আদর্শ প্রচার করতে সুবিধা হয় মাও নেতাদের! তাই স্বাভাবিকভাবেই সংগঠনের জন্য বারবার এই অঞ্চলটিকে ব্যবহার করতে চায় মাওবাদীরা!