বদলাচ্ছে সমাজ! চাইল্ড লাইনে ফোন করে নিজের বিয়ে রুখলেন পুরুলিয়ার 'পুর্নিমা'
বদলাচ্ছে সমাজ! চাইল্ড লাইনে ফোন করে নিজের বিয়ে রুখলেন পুরুলিয়ার 'পুর্নিমা'
পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে নিজের বিয়ে আটকে দিয়ে উদাহারণ তৈরি করল ১৫ বছরের এক কিশোরী! ঠিক সময়ে চাইল্ড লাইনে ফোন করে বিয়ে ঠেকিয়েছেন ওই কিশোরী। আর এই খবর সামনে আসার পরেই কার্যত গোটা এলাকাতেই একটা নজির তৈরি করেছে সে! পুরুলিয়ার কাশীপুর এলাকা। প্রত্যন্ত একটা এলাকা। এখনও সেখানে আধুনিকতা কিংবা প্রযুক্তির ছোঁয়া পৌঁছয়নি। আর সেখানেই পুর্নিমা লোহারের (নাম বদল হয়েছে) কাজে একেবারে সংবাদ শিরোনামে গোটা গ্রাম।
পুর্নিমা স্থানীয় কন্যাশ্রী ক্লাবের কনিষ্ঠ সদস্য
পুর্নিমা স্থানীয় কন্যাশ্রী ক্লাবের কনিষ্ঠ সদস্য। যারা কিনা সমাজের অন্ধকারকে সুর করে আলো আনতে কাজ করে থাকে। বিভিন্ন ধরণের অসামাজিক কাজ কিংবা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কাজ করে এই ক্লাব। আর সেখানকার ছোট্ট সদস্য পুর্নিমা। আর সেখানেই পুর্নিমা জানতে পারে যে বিয়ে করার নুন্যতম বয়স ১৮। বলে রাখা প্রয়োজন, কলকাতা থেকে ২৬০ কিমি দূরে ডোবাপাড়ায় একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নিয়মিত যেত পুর্নিমা। আর সেখানেই আশা এবং ইউনিসেফ কর্মীদের কাছ থেকে বিয়ের বিষয়ে অনেক কিছু জেনেছিল।
বড় নার্স হওয়ার স্বপ্ন দেখছে
কয়েকমাস আগেই সে জেনেছিল তাঁর বাড়ির লোকজনই তাঁকে বিয়ে দিতে চাইছে। আর যেখানে ১৮ বছর হয়নি সেখানে কীভাবে তাঁর পরিবার বিয়ে দেয় তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত হয়ে পড়ে ১৫ বছরের ছোট্ট পুর্নিমা। আর এরপরেই ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ নেয় সে! সঙ্গে সঙ্গে ১০৯৮ ডায়েল করে এবং চাইল্ডলাইনে সমস্ত কিছু জানায় সে। পুর্নিমা জানায়, তাঁর বাবা-মা তাঁকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিতে চাইছে। যেখানে সে পড়াশুনা করে একজন বড় নার্স হওয়ার স্বপ্ন দেখছে সেখানে তাঁর বাবা-মায়ের এই সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। আর তাই চাইল্ড লাইনকে পুরো বিষয়টি জানায় সে।
আগামীদিনে আরও এমন পুর্নিমা এগিয়ে আসবে
এমনকি সে যে বিয়েতে রাজি নয় সেটাও চাইল্ডলাইনকে জানায়। পুর্নিমা লোহার বলছে, ফোনের সঙ্গে সঙ্গে আমার নাম, বাবার নাম এবং অন্য সমস্ত তথ্য জানতে চায়। আর এরপরেই প্রশাসনিক আধিকারিক এবং পুলিশ আমার বাড়িয়ে আসে। এবং আমার বাবা এবং মাকে রাজি করায় যে বিয়ে যাতে আমাকে না দেওয়া হয়। কারণ আমি নাবালিকের। প্রশাসনের এই ভূমিকাতে খুব খুশি পুর্নিমা। মনে করা হচ্ছে, ছট্ট এই পুর্নিমাকে দেখে আগামীদিনে আরও এমন পুর্নিমা এগিয়ে আসবে। নিজেরাই নিজেদের বিয়ে রুখবে।
পশ্চিমবঙ্গে বাল্য বিবাহের ঘটনা অনেক বেড়ে গিয়েছে
বলে রাখা প্রয়োজন, জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্যের একটি সমীক্ষা (NFHS) বলছে, পশ্চিমবঙ্গে বাল্য বিবাহের ঘটনা অনেক বেড়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, ১৮ বছর না হওয়ার আগেই ৪০ শতাংশ মহিলার বিয়ে হয়ে যায় বলেও সমীক্ষা উঠে এসেছে। এছাড়াও বিহার এবং ত্রিপুরাতেও ৪০ শতাংশ মহিলার বিয়ে ১৮ বছরের আগেই হয়ে যায় বলেও সমীক্ষাতে উঠে এসেছে।