west bengal assembly election 2021 tmc bjp trinamool congress পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন ২০২১ টিএমসি তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি politics
ভোট শুধু হিংসার নয়, চার বছর পর মাকে সন্তানদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ারও
বাংলায় চলছে বিধানসভা নির্বাচন। আট দফার। তিন দফার প্রতিটিতেই ক্রমেই বাড়ছে হিংসা, হানাহানির ঘটনা। রাজনৈতিক কর্মী, সমর্থকরা প্রাণ হারাচ্ছেন। সন্ত্রাসে আহত হচ্ছেন। আক্রান্ত হচ্ছেন প্রার্থীরাও। দেশের অন্য রাজ্যগুলি হিংসা, অশান্তি এড়িয়ে নির্বাচন করতে পারলেও বাংলা প্রথম তিন দফায় ডাহা ফেল। কবে সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন দেখবে বাংলা, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। এরই মধ্যে রাজনৈতিক হিংসার বলি হচ্ছেন মানুষ। হঠাৎ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে নিহত বা গুরুতর আহতদের পরিবারকে। এর দায় কার? রাজনৈতিক দলগুলি, নির্বাচন কমিশন নাকি সামগ্রিকভাবে বাংলার সংস্কৃতির? তবে ভোট, রাজনীতি যেমন কেড়ে নিচ্ছে অনেক প্রাণ, তেমনই কাছের মানুষকে ফিরিয়েও দেয় পরিবারের কাছে। যে খবর নিঃসন্দেহে মন ভালো করে দেয়। যেমনটা হলো পূর্ব বর্ধমানের কালনার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে অধিকারী পাড়ায়।

পথ হারিয়ে
সুমিতা কবিরাজের এখন বয়স ৫২। ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল বেলা ১২টা নাগাদ হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। ২৩ বছর আগে তাঁর স্বামী বাইক দুর্ঘটনায় প্রয়াত হন। দুই পুত্র ও এক বিবাহিত কন্যা রয়েছে সুমিতাদেবীর। পারিবারিক মনোমালিন্যের পর সেই যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, ফিরলেন ঠিক চার বছর পর। কাকতালীয়ভাবে সেই ৭ এপ্রিলই।

মুছে যাওয়া স্মৃতি
কীভাবে হারিয়ে গেলেন ঠিক মনে করতে পারছেন না। তবে এটুকু মনে আছে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি চলে গিয়েছিলেন তারকেশ্বর। স্বামীর সঙ্গে সেখানে যেতেন বাবা তারকনাথকে পুজো দিতে। মা নিখোঁজ হতেই থানায় মিসিং ডায়ের করা হয়েছিল। সম্ভাব্য সব জায়গায় চলে তন্ন তন্ন করে খোঁজ। খোঁজ মেলেনি। জানা গেল, উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি করতে করতে তারকেশ্বর মন্দির থেকে এক ভদ্রমহিলা তাঁকে আরামবাগে নিয়ে যান। স্মৃতিশক্তি হারানোয় বাড়ি কোথায় মনে করে বলতে পারছিলেন না। ফলে অভাবের সংসার হলেও মাতৃসমা সুমিতাদেবীকে ওই ভদ্রমহিলা যত্নেই রেখেছিলেন। সেই বছরের নভেম্বরে তাঁর মাধ্যমেই সুমিতাদেবী পৌঁছান বেলানগর স্টেশনের কাছে অভয়নগরে।

প্রতিবেশী বিধায়ককে দেখেই চেনা
অভয়নগরে দে পরিবারে তখন থেকে সুমিতাদেবী ৮০ বছরের এক বৃদ্ধার দেখাশোনা করতেন। বাড়ির ঠিকানা মনে না থাকলেও এটা মনে ছিল তাঁর বাড়ির কাছে একটা বড় শিবমন্দির ছিল। যে শিবমন্দির হলো কালনার ১০৮ শিবমন্দির। তবে ঠিকানা বা সঠিক জায়গা মনে করতে না পারলে তো যোগাযোগ সম্ভব নয়। হঠাৎই ওই বৃদ্ধার সঙ্গে টিভি দেখতে দেখতে কালনার বিধায়ক তথা বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর ছবি দেখে হঠাৎই সুমিতাদেবী বলে ওঠেন, বিশ্বজিৎ আমার দেওর হয়। এটুকুই!

ফিরে পাওয়া
গত মঙ্গলবার ৫ এপ্রিল রাতে ছেলে সলিলবরণ দে ও পুত্রবধূ সুকৃতী দে-কে বিষয়টি জানান ওই ৮০ বছরের বৃদ্ধা। ইন্টারনেট থেকে বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর সঙ্গে গতকাল, বুধবার যোগাযোগ করেন সৃকৃতী দে। তখনই বিশ্বজিৎ কুণ্ডু পৌঁছে যান তাঁর বাড়িরই কাছে সুমিতাদেবীর বাড়িতে। সুমিতাদেবীর পুত্রকে বিশ্বজিৎ বলেন, তোমার মায়ের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এরপর বিশ্বজিৎ কুণ্ডু সুকৃতিদেবীর মোবাইলে ভিডিও কল করেন। সন্তানদের দেখে চিনতে পারেন সুমিতাদেবী। মা ও সন্তানদের তখন চোখে জল। হারিয়ে যাওয়া মাকে খুঁজে পাওয়া, চোখে দেখা যে চার বছর পর। এরপর বৃহস্পতিবার সকালেই সুমিতাদেবীর দাদা তীর্থপতি সাহা ও সুমিতাদেবীর পুত্ররা পৌঁছে যান বেলানগরে। তারপর রাতে নিজের বাড়িতে ফিরে এলেন সুমিতাদেবী। মাকে কাছে পেয়ে সন্তানদের খুশি সীমাহীন। খুশি সুমিতাদেবীও। বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর তৎপরতায় ভোটের প্রচারই যে মাকে ফিরিয়ে আনল তাঁর নিজের ঘরে। ভোট তাই সব কাড়ে না, ফিরিয়েও দেয়।