তৃণমূলে ভাঙনের জল্পনা, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বদল আসতে পারে পাহাড়-রাজনীতিতে
গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সামনে রেখে কি পাহাড় রাজনীতিতে বদল আসছে? বিরোধীদের সঙ্গে এক মঞ্চে তৃণমূল নেতা বিনয় তামাংয়ের শামিল হওয়া নিয়েই প্রশ্নটা উঠে পড়েছে এবার।
গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সামনে রেখে কি পাহাড় রাজনীতিতে বদল আসছে? বিরোধীদের সঙ্গে এক মঞ্চে তৃণমূল নেতা বিনয় তামাংয়ের শামিল হওয়া নিয়েই প্রশ্নটা উঠে পড়েছে এবার। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন তার আগে পাহাড়ে ফের গোর্খাল্যান্ড ইস্যুকে সামনে রেখে রাজনীতিতে ভিত শক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছেন পাহাড়ের নেতারা।
গোর্খাল্যাল্ডের দাবিতে বিরোধী নেতাদের সঙ্গে তৃণমূল নেতা বিনয় তামাংয়ের সুর মিলে যাওয়ার পরই জল্পনা শুরু হয়েছে, তবে কি তিনি দলবদ করতে চলেছেন। কেননা তৃণমূলের মূল মন্ত্র হল বাংলা ভাগ চাই না। পৃথক গোর্খাল্যান্ড নয়, গোর্খারা থাকুক বাংলায়। গোর্খারা বাংলার অবিচ্ছেদ্য অংশ। দার্জিলিং হল বাংলার মুকুট।
তৃণমূলের যখন এই অবস্থান তখন তৃণমূল নেতা বিনয় তামাংয়ের গোর্খাল্যান্ডের মঞ্চে যাওয়ার অর্থ কিন্তু ভাঙনের জল্পনা তৈরি করেছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তবে কি পাহাড়ে তৃণমূলে ভাঙন ধরতে চলেছে? পাহাড়ে তৃণমূলের অন্যতম প্রধান মুখ বিনয় তামাং দলবদল করতে চলেছেন? সেক্ষেত্রে আবার পাহাড়ে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। সেই সম্ভাবনাই ঘোরাফেরা করছে পাহাড় রাজনীতির অলিন্দে।
বিনয় তামাং সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছেন, দল পরে, আগে গোর্খ্যালান্ড। অর্থাৎ গোর্খাল্যান্ডের ডাক এলে তিনি কোন দলে আছেন, তার অ্যাজেন্ডা কী- তা গুরুত্ব দেবেন না। তাই তৃণমূলে যদি গোর্খ্যাল্যান্ড ইস্যুতে ভাঙন আসে, তখন ফের বিমল গুরুং আর বিনয় তামাংয়ের এক জোট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আর তা পাহাড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে অন্য খাতে বইয়ে দিতে পারে পাহাড়ের রাজনীতিকে।
এদিন দিল্লিতে প্রায় দু-ঘণ্টা ধরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে এক সেমিনার হয়। সেখানে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রধান বিমল গুরুং তো ছিলেনই, ছিলেন হামরো পার্টির সুপ্রিমো অজয় এডওয়ার্ড, সেইসঙ্গে তৃণমূল নেতা বিনয় তামাংও। ফলে এই তিনজন পাহাড়ে জোট বাঁধতে পারে গোর্খাল্যান্ড ইস্যুকে সামনে রেখে।
বছর ঘুরলেই গোটা রাজ্যের সঙ্গে পাহাড়েও পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে পাহাড়ে তিনটি পুরবোর্ডের নির্বাচন রয়েছে। এই অবস্থায় গোর্খা জনমুক্তির মোর্চার সেমিনারে পাহাড়ের শীর্ষ নেতৃত্বের এক মঞ্চে উঠে আসা তাৎপর্যপূর্ণ। শুধু নেই বিজিপিএম প্রধান অনীত থাপা। ফলে পাহাড়ে ফের নতুন সমীকরণ তৈরি হওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এখন পাহাড়ে দাপট অনীত থাপার নয়া পার্টি বিজেপিএমের। সম্প্রতি তারা জিটিএ নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। দার্জিলিং পুরসভা নির্বাচনে হামরো পার্টি জিতলেও ক্রমশই অনীত থাপার দিকে চলে আসছে দার্জিলিং পুরসভার রাশ। অনীত থাপার পিছনে রয়েছে তৃণমূলের সমর্থন। এই অবস্থা অনীত থাপাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে বিমল গুরুং, বিনয় তামাং, অজয় এডওয়ার্ডরা এক হতে পারেন। আবার বিজেপির সমর্থনও তারা পেয়ে যেতে পারেন নেপথ্যে। পাহাড় রাজনীতিতে আসতে পারে পট পরিবর্তন।
অনীত থাপা ও বিনয় তামাং ছিলেন একটা সময়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংয়ের সঙ্গী। ২০১৯-এর আগে দার্জিলিং উত্তপ্ত হওয়ার পর বিমল গুরুং পাহাড় ছাড়া হতেই সমীকরণ বদলাতে শুরু করে। বিনয় তামাং ও অনীত থাপা ক্রমেই সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার। তারপর ২০২১-এর আগে বিমল গুরুং ফিরে আসতেই আড়াআড়ি বিভাজিত হয়ে পড়ে পাহাড়ের শাসক দলটি।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা গুরুংপন্থী ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা তামাংপন্থী দল তৃণমূলের আনুকূল্যে থাকলেও পারস্পরিক লড়াই করে একুশের নির্বাচনে। তারপরই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ছেড়ে সটান তৃণমূলের যোগদেন বিনয় তামাং। আর তাঁর সঙ্গী অনীত থাপা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ছেড়ে নতুন দল গড়েন। সেই বিজেপিএম এখন পাহাড়ের শাসক দল। এই অবস্থায় পাহাড়ে সমীকরণে নয়া মোড় আসতে চলেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।