পাহাড়ে জমি হারিয়েছেন বিমল গুরুং, জিটিএ নির্বাচনের প্রতিবাদ মঞ্চই প্রমাণ দিল আবার
পাহাড়ে জমি হারিয়েছেন বিমল গুরুং, জিটিএ নির্বাচনের প্রতিবাদ মঞ্চই প্রমাণ দিল আবার
একুশের ভোটে প্রথম ধাক্কা খেয়েছিলেন। তারপর দার্জিলিং পুরসভা ভোটে দ্বিতীয়বার ধাক্কা খান। আর এবার জিটিএ নির্বাচনের প্রতিবাদে অনশন মঞ্চ দেখিয়ে দিল পাহাড়ে আর জনসমর্থ নেই বিমল গুরুংয়ের। পাহাড়ের রাজনীতিতে এবার ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন বা উঠছেন অন্য কেউ। কিন্তু তিনি বিমল গুরুং বা রোশন গিরি নন।
পাহাড়ের রাশ বেরিয়ে গিয়েছেন গুরুংয়ের হাত থেকেও!
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পাহাড়ে জমি হারিয়েছে, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি। যে বিমল গুরুংয়ের ডাকে গোটা পাহাড় এক জায়গায় হয়ে যেত, এবার তাঁর অনশন মঞ্চে হাতে গোনা কয়েকজন লোক। এই অনশন মঞ্চ দেখিয়ে গিল পাহাড় আর বিমল গুরংয়ের নেই। একদিন যেমন সুবাস ঘিসিংয়ের রাজপাট শেষ হয়ে গিয়েছিল, তেমনই পাহাড়ের রাশ বেরিয়ে গিয়েছেন গুরুংয়ের হাত থেকেও।
আমরণ অনশনের ডাক দিলেও জনসমর্থন লাভে ব্যর্থ গুরুং
বিমল গুরুংয়ের আমরণ অনশন তৃতীয় দিন হয়ে গেল। কিন্তু এখনও দার্জিলিংয়ের সিংমারির দলীয় কার্যালয়ের অনশন মঞ্চে বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে দেখা যায়নি কোনও জন সমর্থন। তিনি পাহাড়ে শক্তি প্রদর্শনের জন্য আমরণ অনশনের ডাক দিলেও তিনি ব্যর্থ তাঁর জন সমর্থন লাভে। উল্টে তিনি প্রমাণ করে দিলেন পাহাড় আর তাঁর নয়। ফলে তাঁর দাবিও যে মান্যতা পাবে না তা নিশ্চিত।
দার্জিলিং থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর সমর্থন ফেরেনি, প্রমাণিত
২০১৭-য় জিটিএ ছেড়েছিলেন রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। পাহাড়কে উত্তপ্ত করে তুলেছিলেন গুরুং। তা কড়া হাতে দমন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দার্জিলিং থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন তিনি। তারপর ফের পাহাড়ে পা দেন ২০২১-এপর নির্বাচনের আগে। তার আগে পাহাড়ে পায়ের তলার জমি হারিয়ে ফেলেছেন বিমল গুরুং।
দার্জিলিং পুরসভা নির্বাচনেও ধাক্কা খেয়েছিলেন বিমল গুরুং
পাহাড়ে না থেকেও ২০১৯-এ তিনি প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাঁর সমর্থনেই বিজেপি পাহাড়ে জয়যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু ২০২১-এর নির্বাচন দেখিয়ে দিয়েছে বিমল গুরুংয়ের পিছনে আর পাহাড়বাসীর সমর্থন নেই। প্রথমত মোর্চা দু-ভাগ হয়ে গিয়েছিল বিমল গুরুং ফিরতে। সেখানে বিনয় তামাং গোষ্ঠী গুরুংয়ের থেকে ভালো জায়গায় ছিল। এরপর ২০২২-এর দার্জিলিং পুরসভা নির্বাচন দেখিয়ে দিল গুরুং সমর্থন হারিয়েছেন।
গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাও পাহাড়ে অস্তাচলে এবার
বিমল গুরুংয়ের পাহাড়ে এখন রাজ হামরো পার্টির অজয় এডওয়ার্ডেসের। আর গুরুংয়ের একদা সঙ্গী অনীত থাপা নতুন দল তৈরি করে তিনিও সমান্তরালভাবে পাহাড়ে জন সমর্থন আদায় করে নিচতে সক্ষম হয়েছেন। অর্থাৎ পাহাড়ের এখন প্রধান দুই দল হল অজয়ের হামরো পার্টি আর অনীত থাপার গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। জিএনএলএফের পর গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাও পাহাড়ে অস্তাচলে।
পাহাড়ের জল না মেপেই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে গিয়েছে গুরুংয়ের
এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পাহাড় রাজনীতিতে গুরুত্ব বাড়াতে আমরণ অনশনে বসেছেন বিমল গুরুং। প্রথম দিন তবু গুরুংয়ের অনশন মঞ্চে পাহাড়বাসীর আনাগোনা ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দিন থেকেই তা পড়তির দিকে। পাহাড়ের জল না মেপেই এই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে গিয়েছে গুরুংয়ের জন্য। পাহাড় যে বদলের পথে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে গুরুংয়ের সিদ্ধান্ত।
জিটিএ ভোটের তোড়জোড় শুরু, নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি