বিমল সাক্ষাতে জল্পনা বাড়াল বিজেপি, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পাহাড়ে কি সমীকরণ বদল
সম্প্রতি দার্জিলিং পুরসভায় ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। অজয় এডওয়ার্ডের হাত ঘুরে পুরসভার শাসনভার উঠেছে অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা ও তৃণমূল জোটের হাতে।
সম্প্রতি দার্জিলিং পুরসভায় ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। অজয় এডওয়ার্ডের হাত ঘুরে পুরসভার শাসনভার উঠেছে অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা ও তৃণমূল জোটের হাতে। আর তারপর থেকেই পাহাড়ে রাজনীতিতে একটা বদল আসতে শুরু করেছে। হঠাৎ করেই তৃণমূলের সঙ্গ ছেড়ে ফের বিজেপির দিকে ঝুঁকতে দেখা যাচ্ছে বিমল গুরুংকে।
জিটিএ নির্বাচন থেকেই খানিকটা মোড় নিয়েছিল পাহাড়ে রাজনীতি। তৃণমূল-বান্ধব গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রধান বিমল গুরুং জিটিএ নির্বাচনে বিরত ছিলেন। বিজেপি ও জিএনএলএফের মতো গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাও অংশ নেয়নি জিটিএ নির্বাচনে। যদিও নির্দল হিসেবে অনেকে ঘুরিয়ে নাক দেখিয়েছিল। এই অবস্থায় জিটিএ নির্বাচনে জয়ী হয় অনীত থাপার দল।
তারপর দার্জিলিং পুরসভার ক্ষমতা থেকে হামরো পার্টি অপসারিত হয় এক বছর যেতে না যেতেই। এবার দার্জিলিং পুরসভাও দখল নেয় অনীত থাপার বিজিপিএম ও তৃণমূল। আর পাহাড় রাজনীতির সমীকরণ পুরোপুরি অন্যদিকে মোড় নেয়। বিজিপিএম বা ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা ও তৃণমূল জোটের বিরুদ্ধে এক মঞ্চে দেখা যেতে থাকে বিজেপি ও বিমল গুরুংদের।
সম্প্রতি সিংমারিতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সদর দফতরে নিয়ে বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসেন বিজেপি সাংসদ রাজু সিং বিস্ত। তারপর থেকেই পাহাড়ে বিজেপি ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার জোট সম্ভাবনা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। জিএনএলএফ এমনিতেই বিজেপির সঙ্গে রয়েছে। এবার বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সেই জোটে শামিল হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
শুধু কি তাই, দার্জিলিং পুরসভায় পালাবদলের দিনেই ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল ছেড়েছেন বিনয় তামাং। ফলে পাহাড়ে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে তিনিও যোগ দিতে পারেন অনীথ থাপা ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে গোষ্ঠীতে। বিজেপি ইতিমধ্যেই তাল ঠুকতে শুরু করেছে পাহাড়ে। আবার তাদের সঙ্গে শামিল হতে পারেন হামরো পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অজয় এডওয়ার্ডও।
সামনেই পঞ্চায়েত ভোট পাহাড়ে। তার আগে পাহাড় রাজনীতিতে বড়সড় পরিবর্তন আসতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি বেশি তৎপর। কারণ পঞ্চায়েত নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন এসে যাবে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে পাহাড়ে বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে সাংসদ রাজু সিং বিস্তের সাক্ষাৎ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
পাহাড়ে তৃণমূলের বান্ধব শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে দিয়ে বিজেপি বোঝাতে চাইছে, পাহাড়ের ভবিষ্যৎ তারাই। গেরুয়া শিবিরের দাবি, পাহাড়ের মানুষকে স্থায়িত্ব দিতে পারে একমাত্র বিজেপিই। পাহাড়ের মানুষ জানে বিজেপি তাঁদের জন্য কতটা উপযোগী। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য, যা তৃণমূলের দ্বারা সম্ভব নয় কখনই। অর্থাৎ তৃণমূল বিরোধী প্রচার করে গোর্খাদের মন ফের বিজেপির দিকে ঘোরানোই এখন সার ভেবেছেন পদ্ম নেতারা।
আর সে জন্যই সাংসদ রাজু সিং বিস্ত এবার পাহাড়ে তৃণমূল বিরোধী শক্তিগুলিতে এক জায়গায় আনার চেষ্টা করছেন। এই মুহূর্তে শুধু অনীত থাপার দল তৃণমূলের দিকে রয়েছে। বাকিদের যদি এক ছত্রছায়ায় আনা যায় তবে ২০২৪-এর আগে পাহাড়ে বিজেপির মাটি ফের শক্তি করা যাবে। আর তার জন্য গোর্খাল্যান্ড তাস খেলতেই কোনও দ্বিধা নেই বিজেপির। সম্প্রতি গোর্খাল্যান্ড ইস্য়ুতে পাহাড়ে তিন শক্তি এক জায়গায় হয়েছিল।
ফলে গোর্খাল্যান্ড ইস্যুকে সামনে রেখে পাহাড়ের নেতারা যখন এক হতে পারেন, তখন বিজেপি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া। বিজেপি ২০২৪-এর আগে সেই ছকই কাজে লাগাতে চাইছে। পাহাড়ের দলগুলিকে এক করে তাঁরা সমীকরণ বদলাতে চাইছে আবারও। এমনিতেই তাদের সঙ্গে রয়েছে জিএনএলএফ-সহ অনেকগুলি ছোটো দল, এবার যদি গুরুং-তামাং-এডওয়ার্ডদের ভেড়ানো যায়, তাহলে ফের তৃণমূলকে কঠিন চ্যালেঞ্জে ফেলে দেওয়া যাবে। আবার অন্য খাতে বইয়ে দেওয়া যাবে পাহাড়ের রাজনীতি।