বিধায়ককেই হুমকি তৃণমূলের বিধায়কের! অভিষেকের কাছে 'কাটমানি' নালিশ দলের নেতাদের
কংগ্রেসের (congress) গড় বলে পরিচিত মুর্শিদাবাদে (murshidabad) ধুয়ে মুছে সাফ কংগ্রেস। চারিদিকে শুধুই ঘাসফুল। সেই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের (trinamool congress) অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব। এক বিধায়ক সরাসরি অপর বিধায়ককে হুমকি দিচ্ছেন। আবার দলের নেতারা একসঙ্গে হয়ে অভিযুক্ত বিধায়কের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (abhishek banerjee) কাছে। যা নিয়েই সরগরম মুর্শিদাবাদের রাজনীতি।

'কাটমানি' অভিযোগ
এবার ভরতপুর থেকে তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত হয়েছেন হুমায়ুন কবির। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সঙ্গীসাথীদের নিয়ে পঞ্চায়েতের উন্নয়নের কাজে বাধা তৈরি করছেন। পঞ্চায়েতের টেন্ডার প্রক্রিয়াতেও বাধা তৈরি করা হচ্ছে। আরও অভিযোগ, ঠিকাদারদের কাছ থেকে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা না পেলে কাজ শুরু করতে দিচ্ছেন না। যা নিয়ে ভরতপুর-২ ব্লকের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দলের বিধায়ক হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর আগে এই সাত প্রধান এসডিও-র কাছেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন বলে খবর। সেখানেও তৃণমূল বিধায়ক এবং অনুগামীদের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতের কাজে বাধা তৈরির অভিযোগ করা হয়।

পাল্টা মানহানির মামলার হুঁশিয়ারি
এদিকে এই অভিযোগ নিয়ে পাল্টা সরব হুমায়ুন। সব অভিযোগ তো অস্বীকার করেছেনই, বরং অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা মানহানির মামলার হুঁশিয়ারি তিনি দিয়েছেন। যদিও হুমায়ুনকে নিয়ে ওঠা এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বে কার্যত অস্বস্তিতে।

অপর বিধায়ককে মারের হুমকি
এখানেই শেষ নয়। হুমায়ুন কবির অপর তৃণমূল বিধায়ক রেজিনগরের রবিউল আলম চৌধুরীকে মারের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হুমায়ুন বলেছেন, ওই বিধায়ককে এলাকায় ঢুকতে দেবেন না। তিনি (রবিউল) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ দেখিয়ে ভোট পেয়েছেন। কটাক্ষ করে বলেছেন, তাঁর বাবার মুখ দেখে কেউ ভোট দেয়নি। সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানে বেলডাঙা ২ ব্লকে দুই বিধায়ককেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে হুমায়ুন কবির উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না রবিউল ইসলাম চৌধুরী। সেই অনুষ্ঠানেই বিতর্কিত মন্তব্য করেন হুমায়ুন।
হুমায়ুন অভিযোগ করেন, তাঁর একটি অনুষ্ঠান ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন রবিউল। তাঁর আরও অভিযোগ রবিউল তাঁর ভরতপুরের মানুষকে খেপিয়ে তুলছেন। প্রসঙ্গত রেজিনগরের পাশের কেন্দ্রই হল ভরতপুর। হুমায়ুন প্রকাশ্য সভায় হুঁশিয়ারিও দেন রবিউলের উদ্দেশে। বলেন, এই এলাকাতেই তাঁর বাড়ি। এলাকায় রবিউলকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এখানেই শেষ নয়, তিনি আরও বলেন, শক্তিপুরের বাড়ি থেকে বিধায়ককে তিনি বের হতে দেবেন না। এলাকায় ঢুকলে মেরে তাড়ানোর হুঁশিয়ারিও দিতে শোনা যায় হুমায়ুনকে। মানুষ তাঁর (রবিউল) বাবা ঈশা চৌধুরীকে দেখে ভোট দেয়নি। ভোট দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে দেখে।
তবে হুমায়ুন পাশে পেয়েছেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শাহনাজ বেগমকে। এই একই অনুষ্ঠানে শাহনাজ বলেন, রেজিনগরের বিধায়ককে ফোনে পাওয়া যায় না। তিনি (রবিউল) মানতে চান না তৃণমূলের ব্লক সভাপতিকে। আরও অভিযোগ করেন, কোনও অনুষ্ঠান করতে গেলে বিডিওকে দিয়ে তা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আরও বল পান হুমায়ুন।

মুর্শিদাবাদের রাজনীতিতে হুমায়ুন
মুর্শিদাবাদের রাজনীতিতে দলবদলু হিসেবেই পরিচিত হুমায়ুন কবির। ২০১১ সালে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন তিনি। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূলের মন্ত্রীও হন তিনি। কিন্তু দলবদল করে বিধানসভা নির্বাচনে জিততে না পেরে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়। এরমধ্যে আবার তিনি বিজেপিতেও যোগ দিয়েছিলেন। গিয়েছিলেন পুরনো দল কংগ্রেসেও। তবে বিধানসভা ভোটের আগে তিনি ফের তৃণমূলে যোগ দেন। তবে দল তাঁকে রেজিনগর নয়, পাশের কেন্দ্র ভরতপুর থেকে প্রার্থী করে। সেখানে তাঁর নিকটতম প্রার্থী ছিলেন বিজেপির। সেই ভরতপুর থেকে বড় ব্যবধানে জয় পেয়ে তিনি বিধায়ক হন।
এলাকায় রবিউল ও হুমায়ুনের লড়াই দীর্ধদিনের। কংগ্রেসে থাকতেও ছিল এবার তৃণমূলে গিয়েও তা বজায় রয়েছে।
তবে দলের বিধায়কের আক্রমণ প্রসঙ্গে রেজিনগরের বিধায়ক রবিউল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, তৃণমূলের নামে সভা করে হুমায়ুন কবির বিজেপিকেই সাহায্য করছেন। এব্যাপারে তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ঘূর্ণাবর্তে ভর করে ফের ভারী বৃষ্টির ভ্রুকুটি, বাংলার জেলাগুলির আবহাওয়ার পূর্বাভাস