অভিনব ভাবনা, গাছ ফোঁটার মাধ্যমে দীর্ঘায়ু কামনা সবুজ পৃথিবীর
অভিনব ভাবনা, গাছ ফোঁটার মাধ্যমে দীর্ঘায়ু কামনা সবুজ পৃথিবীর
ভাইফোঁটা-বোনফোঁটা-গাছফোঁটা উৎসব। নদীয়ার যুগবার্তা পরিবারের উদ্যোগে ৭ম ভাইফোঁটা-বোনফোঁটা-গাছফোঁটা উৎসব উদযাপিত হল ৷
প্রকৃতির কোলে এবারে হরিপুরের কুলইচন্ডীতলার একটি বৃহৎ আমবাগানে গাছফোঁটা উৎসব অনুষ্ঠিত হল গাছ ফোঁটা ৷ শান্তিপুরের কাশ্যপপাড়ার চাকফেরা গোস্বামী বাড়ির নাট মঞ্চে সম্পূর্ন অভিনব বোনফোঁটা এবং ভাইফোঁটা উৎসব অনুষ্ঠিত হল ৷ আসলে প্রকৃতিকে বাঁচানোই এর মূল উদ্দেশ্য। সেখান থেকেই দেওয়া এই বার্তা। আজকাল বোন ফোঁটা এক নতুন চল। কিন্তু গাছ ফোঁটা? না , তা দেখা যায় না। শোনাও যায় না। সেটাই করে দেখিয়েছেন ওরা। সবুজের সুস্থতা কামনায় হল এই গাছ ফোঁটা।
'যম' আর 'যমী'কে 'ভাই-বোন' হিসেবে না দেখে যদি 'নারী-পুরুষ' বলেই ভাবতে হয়, তাহলে 'হিন্দু পুরাণের' আরেকটি দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। তাকাতে হবে 'বিষ্ণু' এবং 'তাঁর অবতার কৃষ্ণের' দিকে। 'দক্ষিণ ভারতের' বেশ কিছু অঞ্চলে 'যমের' যে মূর্তিটি কল্পনা করা হয়, তার সঙ্গে 'বিষ্ণুর সাদৃশ্য' রয়েছে। সেখানে 'মৃত্যুর দেবতা' হিসেবে 'যম মহিষবাহন' ঠিকই, কিন্তু তাঁর গায়ের রং 'বিষ্ণুর মতো নীল'। অন্য দিকে, 'বিষ্ণু'র মতো তিনিও 'চতুর্ভুজ' এবং 'পীতবসনধারী'।
আবার 'শ্রীমদভাগবত' বলছে, 'কৃষ্ণের আটজন প্রধানা মহিষী'র কথা। তাঁর মধ্যে অন্যতমা পত্নী 'যমুনা'। এভাবেই কি 'বিষ্ণু আর কৃষ্ণের সঙ্গে' কোথাও গিয়ে এক হয়ে যাচ্ছেন 'যম' এবং 'যমুনা' হয়ে উঠছেন তাঁর স্ত্রী? তবে সন্দেহ উঠলেও নির্বিবাদে আবার এ কথা মেনে নেওয়া যাবে না। কেন না, 'বেদ' যেখানে শেষ করেছে 'যমীর কথা', 'পুরাণ' সেখান থেকেই শুরু করেছে 'যমুনার আখ্যান'। সেই তফাতটা কোথায়? যতক্ষণ পর্যন্ত 'যমের মৃত্যু' হয়নি, ততক্ষণ তিনি ছিলেন 'যমী'। অতঃপর মৃত্যুর পরে দেবতাদের আশীর্বাদে 'যম' হয়েছিলেন 'প্রধান লোকপাল', 'নরকের রাজা'।
আর তাঁর বিরহে কাতর হয়ে 'যমী' চোখের জলের ধারা নিয়ে 'যমুনা নদী' হয়ে বয়ে গিয়েছিলেন পৃথিবীতে। তাঁর 'বিবাহ' হয়েছিল 'কৃষ্ণের সঙ্গে'। মতান্তরে, 'বলরামের সঙ্গে'। কেমন 'যমুনা'র সেই বিবাহের কথা? 'পুরাণ' বলছে, একদা 'যমুনাতটে' এক উৎসব চলছিল 'যাদবদের'। সেখানে 'অকুণ্ঠ মদ্যপান' করে এবং 'কৌতুকক্রীড়া' শেষে 'ক্লান্ত', 'ঘর্মাক্ত' হয়ে পড়েছিলেন 'বলরাম'। তিনি তখন 'শ্রান্তি অপনোদনের জন্য' ডাক দিয়েছিলেন 'যমুনা'কে। বলেছিলেন, "হে যমুনে, তুমি আমার কাছে এসো। আমি তোমার জলধারা আলিঙ্গন করে তাপ জুড়াই!" 'যমুনা' অবশ্য 'বলরামের কথায়' কান দেননি! একে 'বলরাম' ছিলেন 'নেশাগ্রস্ত', তার উপরে আবার তাঁর ছিল 'ঘর্মাক্ত-কলেবর', ওদিকে তিনি 'পরপুরুষ'ও ছিলেন বটে! তাই সব মিলিয়ে 'বলরামের বাহুবন্ধনে' যাওয়া তাঁর অভিপ্রেত ছিল না। কিন্তু, 'যমুনা'কে আসতে হয়েছিল অনিচ্ছাসত্ত্বেও।
কারণ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে 'বলরাম' নিজেই 'উন্মত্ত হয়ে' 'লাঙলের ডগায়' টেনে এনেছিলেন 'যমুনার জলধারা'। তাঁকে 'বাহুবন্ধনে' বেঁধেছিলেন। সেই থেকে তিনি হয়েছিলেন 'বলরামের স্ত্রী'। এই জায়গা থেকে আর 'যমী' নয়, 'যমের বোন'টিকে দেখা এবং চেনা যায় 'যমুনা' বলেই। আর সেই 'বিবাহিতা যমুনার উপাখ্যানে'ই পাওয়া যায় 'ভাইফোঁটার প্রসঙ্গ'। যা নিতান্ত 'লোককথা'। যার কোনও 'বৈদিক বা পৌরাণিক ভিত্তি' নেই, অর্থাৎ 'চার বেদ' ও 'প্রাচীনকালে লেখা কোন পুরাণে' সেই কথা নেই। সেই 'লোককথা' বলছে, 'যমুনা'র 'শোকের পর্ব' সমাপ্ত হয়েছিল। তিনি জানতেন, মৃত্যুর পরেও তাঁর ভাই ধারণ করেছেন শরীর। 'যম' এখন 'নরকের রাজা'। ফলে, তিনি 'আমন্ত্রণ' পাঠিয়েছিলেন 'যমের কাছে', তাঁকে দেখার জন্য। 'যম' যে দিন এসেছিলেন 'যমুনা'র কাছে, সেই দিনটি ছিল 'কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথি'। 'যমুনার ভ্রাতা' সেই 'দ্বিতীয়া তিথিতে' এসেছিলেন বলেই তার নাম হয়ে গেল 'ভ্রাতৃদ্বিতীয়া'। 'যম'কে দেখে তখন 'যমুনা' কী করেছিলেন? স্বাগত জানাবার জন্য তাঁর কপালে পরিয়ে দিয়েছিলেন টীকা! তাঁকে খেতে দিয়েছিলেন নানা সুস্বাদু মিষ্টান্ন।
'তৃপ্ত যম' কথা দিয়েছিলেন, 'যমুনার দেখাদেখি' যে নারী এই ব্রত করবে, তাঁর 'ভাইয়ের আয়ু বৃদ্ধি' পাবে, 'যমের মতো' সে অকালে বোনকে ছেড়ে চলে যাবে না। এভাবে 'ঋগ্বেদের আখ্যান'কে 'লোকাচারে' বেঁধেছিল 'লোককথা'। কিন্তু এরপরে ফের হোঁচট খেতে হয়। কারণ, ভাইকে স্বাগত জানাবার এই এক প্রথার কথা শোনা যায় 'কৃষ্ণ আর সুভদ্রার উপাখ্যানে'ও। সেই কাহিনী বলে, 'ধনত্রয়োদশীর পরের দিন চতুর্দশী তিথিতে' 'নরকাসুর'কে বধ করেছিলেন 'কৃষ্ণ'।
তার পর 'প্রাগজ্যোতিষপুর' থেকে 'দ্বারকা'য় ফিরে এসেছিলেন 'দ্বিতীয়া তিথিতে'। 'কৃষ্ণ'কে দেখে 'সুভদ্রা'র উচ্ছ্বাস বাধা মানে নি। তিনি বরাবরই ছিলেন 'কৃষ্ণের আদরের বোন'। সেই কয়েকদিন তিনি দাদাকে দেখতে পাননি। তার উপর 'সুভদ্রা' আবার খবর পেয়েছিলেন, 'নরকাসুরের অস্ত্রের আঘাতে' আহত হয়েছেন 'কৃষ্ণ'। অতএব, 'দ্বারকা' পৌঁছতেই 'কৃষ্ণ'কে তিনি বসিয়েছিলেন আসনে। তাঁর কপালে পরিয়ে দিয়েছিলেন 'বিজয়তিলক'। এবং, 'মুখমিষ্টি' করিয়েছিলেন। সেই প্রথাই স্বীকৃত হয়েছিল 'ভ্রাতৃদ্বিতীয়া' বা 'ভাইফোঁটা' নামে। বলাই বাহুল্য, এটাও 'লৌকিক উপাখ্যান'। এরও কোনও 'বৈদিক ও পুরাণগত ভিত্তি' নেই। কিন্তু, সেই সব ছাড়িয়ে আশ্চর্য ব্যাপারটা রয়েছে অন্যত্র।