প্রশ্ন চিহ্ন মনে! ফোনের অপেক্ষায় চাপড়ার ঢাকিপাড়া
অন্যান্য বছর মহালয়ার আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দেয় নদীয়ার ঢাকিপাড়া। ঢাকের দুই কাঠিতে বোল তোলেন ঢাকিরা। ফোন আসা শুরু হয় কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। দুর্গাপুজোয় মণ্ডপে ঢাক বাজানোর বরাত দেন পুজো উদ্যোক্তারা। কিন্তু এ বছর নদীয়ার চাপড়ার দইয়েরবাজার ঢাকিদের গ্রামের এ বারের চিত্রটা সম্পূর্ণ উল্টো।

করোনা পরিস্থিতির কারণে ফোনে টাকা আসেনি ঢাকি পাড়ার ঢাকিদের। এখনো ফোনের অপেক্ষায় বসে আছেন কম-বেশি ৬০ জন ঢাকি। এবার দুর্গাপুজোয় আদৌ তাঁদের কেউ ভাড়া করবেন কি না, তা তা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে ঢাকি পাড়ায়।
ঢাকিরা জানান, সারাবছর রোজগার প্রতি তেমন হয় না। এই পুজোর সময়ই তাদের চাতক চেয়ে থাকা।
কারণ দুর্গাপুজো, কালীপুজো আর জগদ্ধাত্রী পুজোর রোজগারে সারা বছর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা আর জামা-কাপড়ের খরচ উঠে আসে। পুজোর সময় ঢাকিরা দিনে যে টাকা রোজগার করেন। উপরি হিসেবে পান, অনেক জামাকাপড়, যা দিয়ে পরিবারের গোটা বছর কোনরকমে চলে যায়। দুর্গাপুজো থেকে কার্তিক পুজো পর্যন্ত ১২-১৫ হাজার টাকা আয় করেন তাঁরা। গাজনের সময়ও অল্প কিছু রোজগার হয়। বছরের বাকি সময় দিনমজুরি করেই সংসার চালান তাঁরা।
কিন্তু এবার করোনা অসুরের থাবায় কি আদৌ ঢাক বাজিয়ে রোজগার কিছু হবে? করোনা-সঙ্কট যত গভীর হচ্ছে, প্রশ্নটাও তত প্রাসঙ্গিক হচ্ছে ঢাকিপাড়ায়।
ঢাকি হিসাবে বেশ নামডাক রয়েছে কৃষ্ণচন্দ্র দাসের। দাওয়ায় বসে ঢাকের কাঠি দু'টোর দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, 'এ বার যা অবস্থা, তাতে দুর্গাপুজোয় আদৌ ঢাকে কাঠি পড়বে কি না, সেটাই বুঝতে পারছি না। মন একদম ভাল নেই। জানি না, আবার কবে ঢাকে বোল উঠবে।'
তিনি জানান, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকেই তাঁদের কাছে ফোন আসা শুরু হয়। চন্দননগর, টালিগঞ্জ-সহ কলকাতার নামকরা সব পুজো কমিটি তাঁদের ভাড়া করে। কিন্তু এ বার এখনও কোনও ফোন আসেনি,'' আক্ষেপ কৃষ্ণচন্দ্রবাবুর মতো অন্যান্য ঢাকিদের।

সব ঢাকিই যে ফোনে বরাত পান তা নয়। তবে পুজোর মরসুমে কেউই বসে থাকেন না। বরাত পান না যাঁরা, তাঁরা পঞ্চমীর দিন বিকেলে শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছে যান। সেখানেই তাঁদের ভাড়া করে নেয় কোনও না কোনও পুজো কমিটি। ''কিন্তু এ বার কি তা হবে?'' প্রশ্নটা যেন নিজেদের করলেন ঢাকিরা।
রাজ্যে করোনায় কলকাতার সঙ্গে মৃত্যুতে পাল্লা হাওড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার! আরও বাড়ল সুস্থতার হার